ডিসেম্বর ০১, ২০২০ ১৮:৩৮ Asia/Dhaka

পশ্চিম আজারবাইজান, পূর্ব আজারবাইজান, কেন্দ্রিয় প্রদেশ, ফার্স প্রদেশ, খোরাসান, গিলান, মজান্দারন, ইস্ফাহান এবং কেরমান প্রদেশসহ আরও বহু এলাকায় এখন টার্কি মুরগির প্রচুর খামার রয়েছে।

বহু প্রজাতির টার্কি মুরগির চাষ হয় ইরানে। টার্কি মুরগির সুবিধাটা হলো এগুলোর মাংসে প্রোটিন বেশি কিন্তু চর্বি কম। কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব কম। তেহরান, ইস্ফাহান এবং কাজভিন প্রদেশে টার্কি মুরগির চাষ বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে। টার্কি মুরগির মাংসের শতকরা পঁয়ষট্টি ভাগই সাদা আর বাকি মাত্র পঁয়ত্রিশ ভাগ লাল। লাল মাংসের একটা সমৃদ্ধ উপাদান হচ্ছে গরু এবং দুম্বা বা ছাগল কিংবা ভেড়া জাতীয় পশুর মাংস। এইসব গৃহপালিত পশুর চাষও ব্যাপকভাবে হচ্ছে ইরানে। প্রোটিন চাহিদার বিরাট একটি অংশ পূরণ করে এইসব পশুর মাংস।

আমাদের দৈনন্দিন খাবারের টেবিলে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য খুবই গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশিত হয়। মানব দেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে চতুষ্পদি পশু জাতীয় প্রাণী যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, মহিষ ইত্যাদির মাংস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের চাষাবাদের একটা বিরাট অংশ জুড়ে তাই পশুপালনের পেশাটি স্থান দখল করে নিয়েছে। পশুপালন এখন একটি স্বতন্ত্র শিল্পের মর্যাদা লাভ করেছে। বিশ্বব্যাপী মানুষের খাদ্যের প্রয়োজনে পশুপালনের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ, মানব সমাজের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্যই এই প্রোটিনের চাহিদা ও গুরুত্ব বেড়েছে। মানব স্বাস্থ্যের পাশাপাশি একটি দেশের অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছে এই পশুপালন শিল্প। এই শিল্পের ওপর তাই সারাবিশ্বের সরকারগুলোর সুদৃষ্টি পড়েছে।

লাল মাংস পশুপালন শিল্পজাত একটি পণ্য। খাদ্য ও পুষ্টিমান ছাড়াও প্রোটিনের সমৃদ্ধ উপস্থিতির কারণে লাল মাংসের গুরুত্ব রয়েছে। গৃহপালিত পশুর লাল মাংসে মানব দেহের প্রয়োজনীয় উপকারী ভিটামিন বিশেষ করে ভিটামিন-বি'র উপস্থিতি ব্যাপক। লাল মাংসে সাধারণত প্রোটিন এবং আয়রন বেশি থাকে। এই মাংসে ফসফরাসের পরিমাণ অনেক বেশি। ভিটামিন-বি:১২, আয়রন এবং ফসফরাসের পর্যাপ্ত উপস্থিতি থাকায় রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করা, দাঁতের শক্তি বৃদ্ধি করা ইত্যাদির জন্য বেশ কার্যকর ও উপকারী। এর বাইরেও চোখের দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী ভিটামিন-এ, হাড়ের মজবুতির জন্য উপকারী ভিটামিন-ডি, ক্যান্সার প্রতিরোধকারী, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন-ই এবং রক্তক্ষরণকালে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্যকারী ভিটামিন-'কে' প্রচুর পরিমাণে রয়েছে এই লাল মাংসে।

বিরতির আগে যেমনটি বলেছিলাম যে শারীরিক বৃদ্ধির জন্য, শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তি বৃদ্ধির জন্য সর্বোপরি স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য লাল মাংস ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। গবেষণায় দেখা গেছে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য না খাওয়ার কারণে মানব দেহের বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানে মানুষ খাটো বা বেঁটে হয়। মানব দেহের বেড়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং তরুণদের হাড় ভাঙার কারণ হয়ে দাঁড়ায় প্রোটিনের অভাব। যেসব শিশু লাল মাংস খায় না তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্লান্তি অবসন্নতায় ভোগে। যে-কোনো পরিবেশে এরা একটু ভিন্ন রকমের আচরণ করে মানে উদাসীন থাকে। এ ধরনের শিশুরা বিষন্নতায় ভোগে এমনকি বেশিরভাগ সময়ই অসুস্থতায় ভোগে। তবে লাল মাংস ব্যবহার করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। বেশি বেশি লাল মাংস খেলে আবার ব্লাড-ক্যান্সার, রিওমেটিজমসহ বিভিন্ন রকমের হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ মেনে খেতে হবে লাল মাংস।

দুম্বা এই লাল মাংসের একটি সমৃদ্ধ উৎস। বাংলাদেশে অবশ্য দুম্বা নেই তেমন কিন্তু ভেড়া আছে। এরা একই প্রজাতির। দুম্বার জাতপাত এতো বিচিত্র যে বলা হয়ে থাকে দুই শতাধিক প্রজাতির দুম্বা রয়েছে বিশ্বে। অবশ্য অর্থনৈতিক বিবেচনায় এইসব বৈচিত্রের খুব বেশি একটা গুরুত্ব নেই। বিশ্বে যে পরিমাণ পশু প্রতিপালিত হচ্ছে তার মধ্যে দুম্বার পরিমাণ কম নয়। আর ওই পরিমাণ দুম্বার তিন চতুর্থাংশই বলতে গেলে বিশ প্রজাতির বেশি নয়। দুম্বার খাদ্য খাবারের জন্য খুব বেশি খরচ করতে হয় না। এগুলো যে-কোনো রকমের আবহাওয়া সহ্য করতে পারে। পরিবর্তমান আবহাওয়ায় কিংবা শুষ্ক আবহাওয়ায়ও সাধারণ ঘাস খেয়ে নিজেদের বেড়ে ওঠা অব্যাহত রাখতে পারে। অপরাপর পশুর তুলনায় তাই দুম্বা প্রতিপালনে খরচের পরিমাণ অনেক কম।

একটি দুম্বা কেবল মাংসই দেয় না আমাদের। মাংসের পাশাপাশি পশম দেয়, চামড়া দেয় এমনকি দুধও দেয়। দুম্বার দুধ গরুর দুধের তুলনায় বেশি প্রোটিন এবং চর্বি সমৃদ্ধ। দুম্বার দুধ উৎপাদনের পরিমাণ যদি কম হলেও তার গুণগত মান কিন্তু অনেক বেশি। দুম্বার পশমও কিন্তু বিভিন্ন কাজে ব্যবহারযোগ্য। কার্পেট তৈরিতে যেমন দুম্বার পশম কাজে লাগে তেমনি তাঁত শিল্পেও দুম্বার পশম ব্যবহৃত হয়। দুম্বার আরেকটি মূল্যবান অর্থনৈতিক জিনিস হ'ল এর অন্ত্র বা ইন্টেস্টাইন। ইরানের রফতানি পণ্যসামগ্রীর মধ্যে দুম্বার অন্ত্র অন্যতম।

সমগ্র বিশ্বে অন্ত্রের পঞ্চম বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ ইরান। ইরান থেকে জার্মানি, ইতালি, রাশিয়া, ভারত, তুরস্ক এবং পাকিস্তানে বছরে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের প্রাণিজ অন্ত্র রফতানি হয়।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ