মে ২৪, ২০২১ ২০:০৩ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা ইরানের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ 'তেল শিল্প' নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি।

ইরানে পণর হাজার কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেল রয়েছে বলে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত খনিগুলোর পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের তেল মজুতের যেই পরিমাণ তথ্যপঞ্জিতে প্রমাণিত তার প্রায় দশ শতাংশই রয়েছে ইরানে। সুতরাং তেল মজুতের ক্ষেত্রে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ এখন ইরান।সময়ের পরিক্রময়ায় এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে তেলের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার কারণে উনিশ শ ষাট খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে তেল-রফতানিকারক দেশগুলোর অংশগ্রহণে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশসমূহের সংস্থা ওপেক তেল উত্পাদনকারীদের  জন্য তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ইরান, সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত এবং ভেনিজুয়েলার মতো সদস্য দেশগুলির সমন্বয়ে একটি তেল নীতি তৈরি করেছিল। সময়ের সাথে সাথে কাতার, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়া, ইকুয়েডর এবং অ্যাঙ্গোলাও ওপেকে যোগ দিয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে যে ওপেকের সদস্য দেশগুলো বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের প্রায় চল্লিশ শতাংশ উত্পাদন করে। সমগ্র বিশ্বে তেলের যে মজুদ রয়েছে তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ধারণ করে ওপেকভুক্ত দেশগুলো। দুই হাজার সতেরো সালের এপ্রিল মাসের এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে ওপেক দৈনিক তিন কোটি দশ লাখ ব্যারেল তেল উত্পাদন করে। ওপেক সদস্যদের মধ্যে ইরান তেরো শতাংশ তেল মজুদ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

তেল মন্ত্রণালয়ের বৃহত্তম সহায়ক কোম্পানি হিসেবে যে কোম্পানিটির নাম সবার আগে উল্লেখ্য সেটি হলো ‘শেরকাতে মিল্লিয়ে নাফতে ইরান’ মানে ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি। তেল সংক্রান্ত বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি এই কোম্পানি। ইরানের তেল ও গ্যাস সম্পদের উত্পাদন, উত্তোলন, নিষ্কাশন, পরিশোধন, বিতরণ ও রফতানির সার্বিক পরিকল্পনা ও পরিচালনার দায়িত্ব এই কোম্পানির ওপর ন্যস্ত। ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি দেশের তেল ও গ্যাস শিল্পের উন্নয়নে নেতৃত্বের ভূমিকায় রয়েছে। এই সংস্থাটির অধীনে আরও অনেক সহযোগী কোম্পানি রয়েছে। তাদের সহযোগিতা নিয়ে কোম্পানিটি ইরানের অপরিশোধিত তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং গ্যাস কনডেনসেট উত্পাদন করার প্রধান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি যেটাকে ফার্সি ভাষায় শেরকাতে মিল্লিয়ে নাফতে বলা হয় সেই কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক এবং সক্রিয় কোম্পানির মধ্যে রয়েছে তেলসমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলীয় জাতীয় কোম্পানি মূল ফার্সিতে কোম্পানিটির নাম হলো শেরকাতে মিল্লিয়ে মানাতেকে নাফতখিজে জুনুব, শেরকাতে নাফতে ফালাতে ক্বা’রেয়ে ইরান  এবং কেন্দ্রীয় ইরানি তেল কোম্পানি ফার্সিতে যাকে বলে শেরকাতে নাফতে মানাতেকে মারকাজিয়ে ইরান। এই কোম্পানিগুলোর নামই মোটামুটি উল্লেখযোগ্য বলা যায়। শেরকাতে মিল্লিয়ে মানাতেকে নাফতখিজে জুনুব ইরানের বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উত্পাদনকারী কোম্পানি। এই কোম্পানিটি ইরানের জ্বালানী নিশ্চিত করা এবং সরবরাহ করার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ইরানের আশি শতাংশেরও বেশি অপরিশোধিত তেল উৎপাদন করে এই কোম্পানিটি।

আমরা শেরকাতে মিল্লিয়ে মানাতেকে নাফতখিজে জুনুবের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলছিলাম। কোম্পানিটির যে বৃহৎ কমপ্লেক্স তা কয়েক লাখ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। বিশাল এই আয়তনের ভেতর রয়েছে পঞ্চাশটিরও বেশি বড় এবং ছোট হাইড্রোকার্বন ক্ষেত্র। এই বিশাল তেল অঞ্চলটিতে রয়েছে আহওয়াজ, গাচসরন, মরুন, কোরাঞ্জ এবং পার্সির মতো বৃহত তেলক্ষেত্রগুলো। তেল উত্পাদন ব্যয়ের ক্ষেত্রে ইরানের তেল শিল্পের তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে, কারণ ইরানে তেল উৎপাদনের খরচ কম। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যখন বিশ্বের অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ত্রিশ ডলারের নীচে নেমে এসেছিল তখন বহু তেল উত্পাদনকারী কোম্পানি যাদের উত্পাদন ব্যয় বাজারে বিক্রয় মূল্যের চেয়ে বেশি ছিল তারা তেল উত্পাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।

সেই সময়ও ইরানের তেল উত্পাদন ব্যয় ব্যারেল প্রতি তেরো ডলারের নীচে ছিল। ইরান বিশ্বের মাঝে স্বল্পমূল্যে তেল উৎপাদরকারী দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশটি তেল উত্পাদনকারী দেশের পণর হাজারেরও বেশি তেল ক্ষেত্রের তথ্য থেকে জানা যায় যে, যুক্তরাজ্য প্রতি ব্যারেল তেল উৎপাদনে বায়ান্ন ডলার পঞ্চাশ সেন্ট ব্যয় করে সবচেয়ে ব্যয়বহুল তেল উত্পাদনকারী দেশের শীর্ষে অবস্থান  করছে। অপরদিকে কুয়েত সর্বনিম্ন সাড়ে আট ডলার ব্যয় করে বিশ্বের সর্বাধিক সস্তা তেল উত্পাদনকারী দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। অ্যাঙ্গোলা পঁয়ত্রিশ দশমিক চার শূন্য ডলার ব্যয় করে ওপেকের সবচেয়ে ব্যয়বহুল তেল উত্পাদন করছে।

ব্যয়বহুল এবং স্বল্প ব্যয়ে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর কথা বলছিলাম। দুই হাজার সতেরো সালে ইরান এশিয় এবং ইউরোপীয় দেশগুলোতে সাতাত্তর কোটি ব্যারেলেরও বেশি তেল রফতানি করেছে। এই পরিমাণের ষাট শতাংশেরও বেশি এশীয় দেশগুলিতে আর বাকি প্রায় চল্লিশ শতাংশ ইউরোপে রফতানি করা হয়েছিল। চীন এবং ভারত ছাড়াও ইরানি তেলের এশিয় বৃহত্তম ক্রেতার তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। ইউরোপে ইরানের তেল আমদানীকারকদের মধ্যে রয়েছে ইতালি, ব্রিটেন, হাঙ্গেরি এবং নেদারল্যান্ডস। দুই হাজার সতেরো সালে তেল রফতানির পাশাপাশি  ইরানের জাতীয় তেল কোম্পানি প্রতিবেশী দেশগুলোতেই প্রায় দুই কোটি টন জ্বালানী তেল এবং প্রায় বিশ লাখ টন ডিজেল রফতানি করেছে। ইরানে তেল উত্পাদনের পরিসংখ্যানের সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানে ইরানে তেল উত্পাদন ক্ষমতার পরিমাণ প্রতিদিন একত্রিশ লক্ষ ব্যারেলেরও বেশি।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ