ডিসেম্বর ১৩, ২০২০ ২১:০০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা ইরানে উৎপাদিত দুম্বা এবং ছাগলের চাষ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে গরু,ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশুর দুধ এবং দুধ থেকে তৈরি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি।

ইরানে যে পরিমাণ দুধ উৎপাদিত হয় তা প্রয়োজনীয় চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইরানে উৎপন্ন দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য সামগ্রির পরিমাণ ছিল এক কোটি টনের মতো। উদ্বৃত্ত পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ের পরিমাণ প্রায় পাঁচ শ কোটি ডলার। ইরান ২০১৫ সালে দশ লাখ টন কাঁচা দুধ রপ্তানি করেছে।  ইরানে যে পরিমাণ দুগ্ধজাত পণ্য উৎপন্ন হয় তার মধ্য থেকে শতকরা আট ভাগের মতো পণ্য রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে পণির, বাটার, মাঠা বা ইয়োগার্ট ড্রিঙ্ক,দই, দুধসহ আরও বিভিন্ন রপ্তানি পণ্য। দুগ্ধজাত পণ্য সামগ্রির মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ইয়োগার্ট ড্রিংকস এবং দই।

ইরানের দুগ্ধজাত পণ্য সামগ্রি রপ্তানির ব্যাপারে কথা বলছিলাম আমরা। ইরানের আয়কর বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী  ইরানের দুগ্ধজাত পণ্য সামগ্রি সবচেয়ে বেশি যেসব দেশে রপ্তানি হয় সেসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, আরব আমিরাত, জর্জিয়া, তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান এবং তাজিকিস্তান। তিন বছর আগে ইরানের দুগ্ধজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক শ কোটি ডলার। দুধ থেকে তৈরি আরেকটি পণ্যের ফার্সি নাম হলো কাশ্ক। এই কাশ্কও দুগ মানে ইয়োগার্ট ড্রিংকের মতো দই থেকেই তৈরি করা হয়। এই কাশ্ক একেবারেই ইরানের স্থানীয় একটি পণ্য। সে কারণে বাংলায় কাশ্ক বোঝানো মুশকিল। তবে দইকে শুকিয়ে ফেললে যে রুপ দাঁড়াবে তাকেই কাশ্ক বলে।

কাশ্ক নিয়ে ইরানি বহু প্রবাদ প্রবচন চালু আছে। ফার্সি ভাষার এইসব প্রবচন থেকেই অনুমান করা যায় যে প্রাচীন ইরানি সমাজেও এই কাশ্ক উৎপাদনের প্রচলন ছিল। কাশ্ক হলো দুধ থেকে উৎপাদিত একটি পণ্য। দুধকে জ্বাল দিয়ে একটা বিশেষ পদ্ধতিতে ঘনীভূত করে কিংবা শুকিয়ে কাশ্ক বানানো হয়। দুধ জ্বাল দিয়ে প্রথমে দুধের সর তুলে নিয়ে মাঠা বা ইয়োগার্ট ড্রিংক তৈরি করা হয়। সুতরাং কাশ্কে আর কোনো চর্বি বা ফ্যাট জাতীয় কিছু অবশিষ্ট থাকে না।

কাশ্কের মৌলিক উপাদান হলো মহিষের দুধ, গরু কিংবা ছাগলের দুধ অথবা এগুলোর সংমিশ্রণ। খাদ্য পণ্য শিল্পে এই কাশ্ক দুই ভাবে তৈরি করা হয়। দুধকে শুকিয়ে বানানোর কথা তো বললাম। তরল আকারেও দুধ থেকে কাশ্ক তৈরি করা হয়। শুকনো কাশ্ককে পিষে এবং মথে বিশেষ উপায়ে তরল কাশ্ক তৈরি করা হয়। কাশকের পুষ্টিমান বেশ উন্নত। দুধের সমস্ত বৈশিষ্ট্যই ধারণ করে কাশ্ক। এতে ক্যালসিয়াম, ফ্যাট, লবণ, প্রোটিন এবং নিয়াসিন মানে ভিটামিন বি-থ্রি রয়েছে। এক শ গ্রাম কাশকে এক শ পাঁচ থেকে এক শ বিশ কিলো পরিমাণ ক্যালরি থাকে। শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহকারী খাবারের মধ্যে কাশ্ক একটি খাদ্য হিসাবে প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের কাশকের মধ্যে পুষ্টির পরিমাণ নির্ভর করে দুধ এবং প্রক্রিয়াকরণের ধরনের ওপর।

দুগ্ধজাত আরেকটি পণ্য হলো পণির। পণির উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ পানি বা ঘোল বেরিয়ে আসে। দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো সাধারণত ওই ঘোল শুকিয়ে গুঁড়ো বানায়। ঘোলকে গুঁড়োয় রূপান্তর করার মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষতি যেমন রয়েছে তেমনি এর বর্জ্য প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দানেশ পেজোহান ন্যানো সংস্থা নামে একটি ইরানীয় জ্ঞান-ভিত্তিক কোম্পানি ন্যানো-শিল্প নতুন একটি সিস্টেম তৈরি করেছে। ওই সিস্টেমে পণিরের ঘোল থেকে প্রতিদিন এক শ লিটার ঘন প্রোটিন উত্পাদনে সাফল্য অর্জন করেছে কোম্পানিটি।

ঘন প্রোটিনের কারণে পনির উত্পাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পণিরের ঘোল থেকে খনিজ উপাদান এবং ল্যাকটোজ সরিয়ে এই পণ্যটি তৈরি করা হয়। হজমযোগ্যতা, উচ্চ দ্রবণীয়তা, জেল গঠনের ক্ষমতা এবং ফোম এবং ফোম গঠনের ক্ষমতার কারণে, দুগ্ধ শিল্প, শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পে প্রচুর অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে এটিতে বেকারি এবং মাংসের পণ্য রয়েছে। বিচিত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে দুগ্ধজাত পণ্য সামগ্রির বাইরে ন্যানো শিল্প এমনকি গোশত ও গোশ্ত থেকে তৈরি অপরাপর শিল্পের ক্ষেত্রেও এর প্রয়োগ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইরানী দুগ্ধ উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্যগুলোকে উচ্চমানের এবং আকর্ষণীয় প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে রফতানি করতে সক্ষম হয়েছে। এরকম শত শত কোম্পানি ইরানে রয়েছে। কয়েকটি ব্র্যান্ডের নাম করা যেতে পারে।

যেমন: পাক, পেগাহ, দমদরন, মেইহান, হারাজ, কলেহ, রমাক, মায়ামাস এবং পাকবান। ইরানের ডেইরি শিল্পের ভুবনে পেগাহ সবচেয়ে নামকরা একটি কোম্পানি। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে দুগ্ধ শিল্পের সর্ববৃহৎ উত্পাদক কোম্পানি এই পেগাহ। এই কোম্পানির ঊনত্রিশটি পণ্য এবং সরবরাহ উপখাত রয়েছে। দুধ, দই, ক্রিম, মাখন, পনির, আইসক্রিম, রস, দই, দুধের গুঁড়ো এবং গুঁড়োজাতীয় আরও পণ্যসহ এবং কার্বনেটেড পানীয়ের মতো বারোটি প্রধান শাখা রয়েছে এই কোম্পানির। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ