কথাবার্তা: '২টি মহাদুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ'
শ্রোতা/পাঠক!২১ ডিসেম্বর সোমবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:
- অর্থনৈতিক বিপর্যস্তের প্রভাবে বেড়েছে নারী নির্যাতন-ইত্তেফাক
- মিরপুরে তালতলা বস্তিতে ভয়াবহ আগুন–যুগান্তর
- ৩০ বছরে মানব উন্নয়ন সূচকে ৬০ শতাংশ এগিয়েছে বাংলাদেশ-মানবজমিন
- দুটি মহাদুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ-করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ-বাংলাদেশ প্রতিদিন
- ‘এ জনপদ যতদিন, বঙ্গবন্ধু ও হাসিনা লিগ্যাসি ততদিন-কাদের-কালের কণ্ঠ
- অযোগ্য নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চায় গোটা জাতি -ফখরুল-কালের কণ্ঠ/বিডি প্রতিদিন
- ঝুঁকিপূর্ণ’ ঢাকার বাতাস-সমকাল
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:
- কৃষি আন্দোলন ইস্যু: সংবিধানের পরিপন্থী ব্যবস্থার দিকে কেন্দ্রীয় সরকার -আনন্দবাজার পত্রিকা
- রিলে অনশনে কৃষকরা, পরবর্তী বৈঠকের জন্য দিনক্ষণ জানতে চাইল কেন্দ্র -আজকাল
- ফের গণধর্ষণ দিল্লিতে, অভিজাত এলাকায় এক কিশোর–সহ ৪ জনের লালসার শিকার নাবালিকা -সংবাদ প্রতিদিন
- শিরোনামের পর এবার দুটি বিষয়ের বিশ্লেষণে যাব।
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. নতুন নির্বাচনের দাবিতে ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি বিক্ষোভ করবে। প্রশ্ন হচ্ছে- এমন বিক্ষোভ কর্মসূচি রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে?
২. বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে যে, ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাকিস্তান। কিন্তু পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তা নাকচ করে চলেছেন। খবরটি আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ কী?.
জনাব সিরাজুল ইসলাম আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর
রাজনীতির কয়েকটি খবর:

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভিন্ন দৈনিক হাইলাইট করেছে। দৈনিক কালের কণ্ঠ লিখেছে, এ দেশের দুটি লিগ্যাসি রয়েছে। একটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অন্যটি শেখ হাসিনা। যত দিন এ জনপদ থাকবে, তত দিন এই লিগ্যাসি থাকবে।'
যুগান্তর লিখেছে, তিনি বলেছেন, বিএনপি সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ, এখন নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে'।
এদিকে দৈনিক কালের কণ্ঠের অপর এক খবরে লেখা হয়েছে, গোটা জাতি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চায় দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'এ কমিশন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা যায় না। অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্থ কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না জেনেও পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি।'নতুন নির্বাচনের দাবিতে ৩০শে ডিসেম্বর বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
আর বিএনপির অপর নেতা রুহুল কবির রিজভীর দাবি, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব টিকে থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, দেশের জনগণ এমন একটি সরকারের অধীনে বসবাস করছে, যারা দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে দিয়েছে। এ দেশের মানুষের মানসম্মান বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। এ খবরটি দৈনিক ইত্তেফাকে পরিবেশিত হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ’ ঢাকার বাতাস-দৈনিক সমকাল
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সোমবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে জনবহুল এই শহরের একিউআই স্কোর ছিল ৩২৩ যাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। একিউইআই মান ৩০০ এর বেশি হলে মানুষকে বাইরের সকল কাজ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়। খবর ইউএনবির
২টি মহাদুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ-বাংলাদেশ প্রতিদিন
পরিবেশবিদ ও বাংলাদেশ সেন্টার অ্যাডভান্সড স্ট্যাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান বলেচছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ একটি মহাদুর্যোগের মধ্যে থাকলেও বাংলাদেশ দু’টি মহাদুর্যোগের মধ্যে রয়েছে। আর তার মধ্যে একটি হলো কোভিড-১৯ ও ও অপরটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

আজ সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মিলনায়তনে ‘পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ বিষয়ক পরিসংখ্যানে জেন্ডার ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুতকারী এবং ব্যবহারকারীদের জন্য পদ্ধতিগত নির্দেশনা ও নিয়ম-কানুন’ বিষয়ক প্রকাশনার সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

এসময় রিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সব সময় বন্যা, খরা, ভাঙন ও সাইক্লোন মোকাবিলা করছে। কখনো বছরে পাঁচবার বন্যা হয়। এর উপর করোনার থাবা। তারপরও বাংলাদেশ সব দুর্যোগ মোকাবিলা করছে।
ড. আতিক রহমান বলেন, বাংলাদেশে সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করছে। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে। নতুন পরিকল্পনার জন্য দরকার ডেটা।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলার বড় উদাহরণ বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ ক্লাইমেট ইনজাস্টিসের শিকার। ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন করছে অথচ বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যারা পরিবেশের ক্ষতি করছে তারা বিপদে পড়ছে না।
ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
পঞ্জাবে প্রচুর গ্রেনেড-সহ পাক ড্রোনকে গুলি করে নামাল নিরাপত্তাবাহিনী
পঞ্জাবের গুরদাসপুরে সোমবার পাকিস্তানের একটি ড্রোনকে গুলি করে নামাল নিরাপত্তাবাহিনী। সেই ড্রোন থেকে ১১টি উন্নতমানের হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে বলে পঞ্জাব পুলিশ সূত্রে খবর। গ্রেনেডের ধরন দেখে সন্দেহ করা হচ্ছে, সেগুলো পাকিস্তানের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিতে তৈরি হয়েছে।
পঞ্জাব পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, একটি প্লাস্টিক ব্যাগের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ‘আর্জেস টাইপ এইচজি-৮৪’ সিরিজের গ্রেনেডগুলো। তিনি আরও জানান, গত ১৫ মাস ধরে সীমান্ত এলাকায় অস্ত্র এবং মাদক পাচারের রমরমা বেড়েছে। তাঁর দাবি, পাকিস্তান থেকে ড্রোনের মাধ্যমে এই পাচারকাজ চালাচ্ছে জঙ্গিরা। এ দেশের জঙ্গিদের অস্ত্র এবং মাদক পৌঁছে দিতে এখন এটাই জঙ্গিদের নয়া ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সপ্তাহখানেক আগেই গোয়েন্দারা সতর্ক করেছিলেন, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই চিনের কাছ থেকে উন্নতমানের ড্রোন কিনছে। যেগুলো বিপুল পরিমাণে অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। সেই সতর্কবার্তার পরই সোমবার এতগুলো উন্নত ধরনের গ্রেনেড মেলায় সীমান্ত জুড়ে নজরদারি আরও কঠোর করা হয়েছে। কয়েক দিন আগেই পঞ্জাব থেকেই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতেরা ড্রোনের মাধ্যমে পাকিস্তানে অস্ত্র ও মাদক পাচার করত বলে দাবি পুলিশের। ধৃতদের সঙ্গে খালিস্তানি জঙ্গিদের যোগও রয়েছে দাবি করেছে পুলিশ। এই ঘটনার পর পরই সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ায় বিএসএফ।
ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্র পাচারের বিষয়টি প্রথম নজরে আসে ২০১৯-এর ১৯ অগস্ট। একে ৪৭, এমপি ৯ রাইফেল, পিস্তল এবং জাল ভারতীয় টাকা-সহ একটি কোয়াডকপ্টার সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে ঢোকে সেদিন। ব্যাটারির চার্জ কমে যাওয়ায় সেটি বিকল হয়ে যায়। এক পুলিশ আধিকারিক জানাচ্ছেন, বর্তমানে যে সব ড্রোন ব্যবহার করছে জঙ্গিরা, সেগুলো আকারে বড় এবং প্রচুর অস্ত্র এবং বিস্ফোরক বহনে সক্ষম। যা খুবই উদ্বেগের বিষয়।
রিলে অনশনে কৃষকরা, পরবর্তী বৈঠকের জন্য দিনক্ষণ জানতে চাইল কেন্দ্র-দৈনিক আজকাল

সোমবার থেকে শুরু হয়ে গেল কৃষকদের রিলে অনশন। অনির্দিষ্ট কালের জন্য চলবে। নভেম্বরের শেষ থেকে দিল্লি সীমান্তে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ করে চলেছেন মূলত পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকরা। দাবি, নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে।
বারবার কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও রফাসূত্র মেলেনি। রবিবার ৪০ জন কৃষক নেতাকে চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব বিবেক আগরওয়াল। তাতে জানান, কৃষকদের উদ্বেগ দূর করার জন্য ‘খোলা মনে’ সমস্ত পদক্ষেপ করতে তৈরি কেন্দ্র। আন্দোলনকারীদের উদ্বেগের একটি তালিকাও চেয়েছে। সেই সঙ্গে কবে তাঁরা আলোচনায় বসতে চান, তাও জানতে চেয়েছে কেন্দ্র।
এদিকে কৃষকরা অনড়। তাঁরা স্থির করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর রেডিও অনুষ্ঠান ‘মন কি বাত’–এর সময় থালা বাজাবেন তাঁরা। ২৭ ডিসেম্বর রয়েছে সেই অনুষ্ঠান। দেশবাসীকেও তাঁদের প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন কৃষকরা।
অনশনের পাশাপাশি আগামী দিনে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করবে কৃষক সংগঠনগুলি। প্রতি বছর ২৩ ডিসেম্বর ভারতে পালিত হয় কৃষক দিবস। ওই দিন দেশের সমস্ত কৃষককে দুপুরের খাবার না খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে সংগঠনগুলি।
সংবিধানের পরিপন্থী ব্যবস্থা-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়
অর্থনীতিবিদ অমিত ভাদুড়ির সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়েছে, তিনি বলেছেন, কৃষি আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার বিচারের ভারও আদালতের বদলে নিজেদের হাতে নিয়ে নিতে চাইছে।
বিস্তারিত সাক্ষাৎকারটি: কৃষকদের যে আন্দোলন চলছে, ইতিমধ্যেই তার জোর কমছে বলে শোনা যাচ্ছে।
অমিত ভাদুড়ি: শোনা যে যাচ্ছে, সেটা কার কথা শোনা যাচ্ছে? মূলধারার মিডিয়া বলছে। কেন, সেই আলোচনায় ঢুকব না। কিন্তু, আন্দোলনের যে সব খবর আমি বিভিন্ন প্রত্যক্ষ সূত্র থেকে পাচ্ছি, সেগুলো সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। নভেম্বরের শেষে যখন আন্দোলন আরম্ভ হয়েছিল, তখন সেটা মূলত পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের ছিল। অর্থাৎ, আন্দোলনটা ঘনীভূত ছিল এক জায়গায়। এখন সেই আন্দোলনের চরিত্রটা বদলে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র থেকে কৃষকদের একটা বড় দল হাজার কিলোমিটার পার করে আন্দোলনে যোগ দিতে আসছে। রাজস্থানের কৃষকরা যোগ দিচ্ছেন, উত্তরপ্রদেশের কৃষকরাও আগের চেয়ে বেশি আসছেন। যাঁরা কাছাকাছি অঞ্চলে থাকেন, তাঁরা দিনের বেলায় আসছেন, রাতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এই খবরগুলো দেশের সাধারণ মানুষের কাছে ঠিক ভাবে পৌঁছচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গে কৃষক আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। কিন্তু, এখন যে আন্দোলন চলছে, এই রাজ্যে তার আঁচ লাগছে না কেন?
উ: পশ্চিমবঙ্গের কৃষক আন্দোলন— সেটা তেভাগাই হোক, নকশালবাড়িই হোক বা বর্গা আন্দোলনই হোক— তার মূল চরিত্র ছিল জমির মালিকানা-কেন্দ্রিক। অর্থাৎ, জমির মালিকের বিরুদ্ধে, জমিদারদের বিরুদ্ধে, কৃষিজীবী মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। জমিতে উৎপন্ন ফসলের অধিকার কার কতখানি, সেটা নিয়েই মূল বিবাদের সূত্রপাত। পঞ্জাব হরিয়ানার কৃষকরা এখন যে আন্দোলন করছেন, চরিত্রগত ভাবে তেমন কৃষি আন্দোলন এ দেশে আগে কেউ দেখেনি। পশ্চিমবঙ্গে যে ফসল উৎপন্ন হয়, কৃষকরা সেটা মূলত মহাজন, জোতদারদের কাছে বিক্রি করেন। এই রাজ্যে মান্ডি নেই। ফলে, পঞ্জাবে এখন প্রত্যক্ষ যে সমস্যা, সেটা বাংলায় নেই।
অন্য ভাবে ভেবে দেখলে অবশ্য, পঞ্জাব হরিয়ানাতেও সমস্যাটা শেষ অবধি ফসলের অধিকারের। কৃষিতে কর্পোরেট পুঁজি এলে কৃষক তাঁর জমিতে কোন ফসল ফলাবেন, সেটা কার কাছে কত দামে বিক্রি করবেন, এই সিদ্ধান্তগুলোর অধিকার শেষ অবধি কৃষকের থাকবে না বলেই আশঙ্কা। অর্থাৎ, জমির মালিকানা যারই হোক, ফসলের মালিকানা কার্যত কৃষকের থাকবে না। প্র: তা হলে কি এই আন্দোলনকে মূলত সম্পন্ন বড় চাষিদের আন্দোলন হিসেবেই দেখা প্রয়োজন?
উ: সেটা অতি-সরলীকরণ হবে। এই আন্দোলন তো শুধু বড় চাষিরা করছেন না। ছোট চাষিরাও করছেন, ভূমিহীন কৃষি শ্রমিকরাও করছেন। তাঁদের সবার আলাদা আলাদা কারণ আছে আন্দোলনে নামার। ছোট চাষিরা উদ্বিগ্ন, মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ব্যবস্থা উঠে গেলে তাঁরা ফসলের দামই পাবেন না। ভূমিহীন কৃষকরা ভাবছেন, সরকার ফসল না কিনলে গণবণ্টন ব্যবস্থাও থাকবে না। তাঁদের পেটে টান পড়বে।
প্র: সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে যে, কৃষকদের আন্দোলন করার অধিকার আছে। আদালতের এই অবস্থানের সঙ্গে নাগরিকত্ব আইন সংক্রান্ত প্রতিবাদের সময়কার আদালতের অবস্থানের মধ্যে কোনও ফারাক দেখতে পান কি?
উ: আদালত তখন জানিয়েছিল যে অনন্ত কাল রাস্তা বন্ধ করে রেখে প্রতিবাদ চালাতে দেওয়া যায় না। এক অর্থে, সেই নির্দেশ আন্দোলনের বিপক্ষেই গিয়েছিল। কিন্তু, দুটো ঘটনায় যে ফারাক আছে, সেটাও অনস্বীকার্য। এই ক্ষেত্রে কিন্তু আন্দোলনকারী কৃষকরা রাস্তা আটকাননি। তাঁরা যাতে দিল্লিতে ঢুকতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে সরকার রাস্তা কেটেছে, আটকেছে। কাজেই, এখানে রাস্তা বন্ধ করে জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটানোয় কেউ যদি দায়ী হয়, তবে তা সরকার। আইনি প্রশ্নে ঢুকছি না, কিন্তু দেশের শীর্ষ আদালত যে কৃষকদের আন্দোলনের অধিকারকে স্বীকার করেছে, সেটা সুসংবাদ।
প্রশ্ন হল, আদালত যদি স্বীকৃতি দেয়ও, বিজেপি-শাসিত রাজ্য সরকারগুলো কি তা মান্য করছে? উত্তরপ্রদেশের দুটো জায়গা, চন্দৌসি আর সিংপুর থেকে খবর পেলাম, সেখানে নাকি পুলিশ বলেছে, কোনও কৃষক যদি আন্দোলনে যোগ দেন, তবে তাঁর পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা হবে। কারও জরিমানা করার অধিকার তো পুলিশের নেই। কেউ আইন ভাঙলে পুলিশ তাকে আদালতে পেশ করতে পারে, আদালত শাস্তি বিধান করবে। এ ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ সরকার এমন কোনও আইন করেছে বলেও শুনিনি। বিজেপি আদালতকে এড়িয়ে প্রশাসনের হাতেই বিচারের ভার তুলে দিতে চাইছে, এটা তারই একটা উদাহরণ।
প্র: আপনি কথাপ্রসঙ্গে বলছিলেন, নতুন কৃষি আইনে দেশের সাংবিধানিক চরিত্র ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। সেটা কি এই জায়গা থেকেই?
উ: এক দিক থেকে নয়, দেশের সাংবিধানিক চরিত্র ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দু’দিক থেকে— নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকারের দিক থেকে, এবং রাজ্যের অধিকারের দিক থেকে। প্রথমে ব্যক্তিগত অধিকারের কথা বলি। ভারতের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে অধিকার দিয়েছে, কোনও বিষয়ে কোনও বিবাদ বা মতানৈক্য হলে আমরা আদালতের শরণাপন্ন হতে পারি ন্যায়বিচার প্রার্থনা করে। নতুন কৃষি আইনে বলা হয়েছে, কৃষিক্ষেত্রের বিবাদ নিয়ে আদালতে যাওয়া যাবে না। যেতে হবে সরকার-নির্দিষ্ট কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছে। জেলাশাসকের কাছে। সরকারের বিরুদ্ধে, অথবা সরকার-ঘনিষ্ঠ কোনও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সরকারের তৈরি করা প্রতিষ্ঠানের কাছে গেলে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে কি না, সেই তর্কের মধ্যে যদি না-ও ঢুকি, যে দায়িত্ব স্পষ্টতই আদালতের, সরকার সেটা কেড়ে নিতে চাইছে। আদালতের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে নাগরিককে বঞ্চিত করছে। জেলাশাসক তো বিচারের অধিকারী নন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের হাতেই বিবাদ-নিষ্পত্তির ভার তুলে দিচ্ছে।
এবং, এই প্রবণতা যে শুধু কৃষিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে, তা নয়। এটা একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করা হচ্ছে যে, আদালতের বদলে সরকার বা শাসনবিভাগ বিচারের দায়িত্ব নিতে পারে। এর পর হয়তো বিভিন্ন দেওয়ানি বিবাদে বলা হবে যে, সরকারই বিচার করবে। গণতন্ত্রে সেটা হবে অতি অগ্রহণযোগ্য। কলকারখানায় কোনও বিবাদে, অথবা ব্যক্তিগত সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদে যদি সরকার, বা সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি বিচারের অধিকারী হয়, সেটাও খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে।
অন্য দিকে, কৃষি ও জমি, দুটোই রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। কেন্দ্রের নয়। নভেম্বরের আগে অবধি কেন্দ্রীয় সরকার বলছিল যে, কৃষি ক্ষেত্রে কোনও সংস্কার করা হলে তা রাজ্য সরকারের মারফতই করা হবে। কিন্তু এই আইন করে পুরোটাই কেন্দ্র নিজের অধিকারে নিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করল। এটাও দেশের সাংবিধানিক চরিত্রের বিরোধী। বিভিন্ন অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য ইতিমধ্যেই এটা নিয়ে আপত্তি করছে— কেরল, রাজস্থান, পঞ্জাব।
প্র: বিজেপি কি কৃষিতে একটা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে, যেখানে কৃষকরা প্রত্যক্ষ ভাবে প্রশাসনের তাঁবে থাকবেন?
উ: বিজেপির একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। তারা সামাজিক ক্ষেত্রে সামন্ততান্ত্রিক, সনাতন বর্ণব্যবস্থায় বিশ্বাসী; কিন্তু ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কর্পোরেটপন্থী—তারা মনে করে, ব্যবসায়ীদের লাভের সুযোগ করে দিলে তাঁরাই দেশকে বৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবেন। এটা ফ্যাসিস্ট মানসিকতার নির্ভুল চিহ্ন। গোটা দুনিয়াতেই ফ্যাসিস্টরা এই সামাজিক রক্ষণশীলতা আর কর্পোরেটপন্থার দ্বিত্ব বজায় রেখে চলে।
পশ্চিমবঙ্গে এখন অনেকেই বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন। তাঁরা আসলে বিজেপির এই চেহারার সঙ্গে পরিচিত নন। বিভিন্ন কারণে এই রাজ্যে একটা পরিবেশ আছে, যেখানে সামাজিক রক্ষণশীলতা— জাতপাতের বিচার ইত্যাদি— উত্তর ভারতের তুলনায় অনেক কম। ফলে, বাঙালি মধ্যবিত্ত বুঝতেই পারছেন না যে, বিজেপি এলে সামাজিক ক্ষেত্রে ঠিক কতখানি বিপদ হবে। এবং, হাতে গোনা কয়েক জন পুঁজিপতির হাতে দেশের আর্থিক লাগাম চলে গেলে কী মুশকিলে পড়তে হবে।
ফের গণধর্ষণ দিল্লিতে, অভিজাত এলাকায় এক কিশোর–সহ ৪ জনের লালসার শিকার নাবালিকা-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন

আরও একবার ভয়াবহ গণধর্ষণের সাক্ষী রইল দিল্লি (Delhi)। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এক নাবালিকাকে গণধর্ষণের (Gang Rape) অভিযোগ উঠল এক কিশোর–সহ চারজনের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে নাবালিকার অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। চারজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।অক্টোবর মাসে দিল্লি পুলিশ (Delhi Police) জানায়, বিগত এক বছরে দিল্লিতে ধর্ষণের ঘটনা (Rape Case) ২৮ শতাংশ কমে গিয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ধর্ষণের ১২৪১টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গত বছর এই সময়ে দিল্লিতে মোট ১৭২৩টি ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।
দৈনিকটির অন্য একটি খবর:নিজের বোনকে যে কেউ বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে, তেমন ঘটনা বোধহয় বিশেষ দেখা যায় না। তবে তেমনই ঘটনার সাক্ষী ভোপাল (Bhopal)। বোনকে ড্রাগের নেশায় বুঁদ করে দেহব্যবসায় নামানোর অভিযোগ উঠল খোদ নিজের দিদির বিরুদ্ধে। মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্ত-সহ ছ’জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২১
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।