ডিসেম্বর ২১, ২০২০ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা গিয়েছিলাম ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ঐতিহাসিক প্রদেশ হরমুজগানের বিখ্যাত শহর বন্দর আব্বাসের দিকে। অতিথিপরায়নতার জন্য নামকরা এবং দর্শনীয় এই শহরটি ইরানের একটি পর্যটন এলাকাও বটে।

হরমুজগান প্রদেশের কেন্দ্রীয় শহর হলো বান্দর আব্বাস। এটি ইরানের বৃহত্তম বন্দর এবং ইরানের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর।

গত আসরে আমরা বন্দর আব্বাসের ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলো ঘুরে দেখতে শুরু করেছি। সময়ের স্বল্পতার কারণে আরও বহু কিছু দেখা হয়ে ওঠে নি। তাই আজও আমরা এই বন্দরআব্বাসেরই আরও কিছু স্পটে যাবার চেষ্টা করবো। ঘুরে ফিরে দেখার চেষ্টা করবো কোথায় কী আছে। বন্দরআব্বাসের হস্তশিল্প সামগ্রী চোখে পড়ার মতো। এখানকার ফিশ মার্কেটকে বলা হয় ইরানের বৃহত্তম মাছের বাজার। আমরা দেখেছি ইতোমধ্যে। শপিং মল এবং এখানকার একটি হিন্দু মন্দিরের সঙ্গেও আমরা পরিচিত হবার চেষ্টা করবো। রেস্তোঁরাগুলোর উপস্থিতিও লক্ষ্য করেছি আমরা।

ইরানের বিভিন্ন শহরে প্রাচীন যেসব মসজিদ রয়েছে ওই মসজিদগুলো ভ্রমণকারীদের কাছে কিংবা পুরাতত্ত্ব গবেষকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। কেননা এইসব মসজিদ স্থাপত্য কলা কিংবা সভ্যতা ও সংস্কৃতির নীরব সাক্ষ্য দিয়ে যায় নীরবে। মসজিদগুলোর নির্মাণশৈলীতে ইসলামী স্থাপত্য এবং ইরানের ঐতিহ্যবাহী শিল্প-বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ সহজেই লক্ষ্য করা যায়। বন্দর আব্বাসের মসজিদ এবং অত্যন্ত মূল্যবান ধর্মীয় স্থান ও মর্যাদাময় স্থাপনাগুলো এই নিয়মের ব্যতিক্রম নয়। এখানকার মসজিদগুলো বন্দর আব্বাস শহরের মূল্যবান ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় স্মৃতিময় স্থাপনার অন্যতম হিসেবে পরিগণিত। তো প্রথমেই আমরা বন্দর আব্বাসের "জামে মসজিদ বা দেলগোশা" দেখতে যাবো। অবশ্যই আপনাদের সঙ্গে নিয়ে।

দেলগোশা জামে মসজিদ ইরানের অন্যতম সুন্দর, দর্শনীয় এবং অবশ্যই প্রাচীনতম একটি মসজিদ। এই মসজিদটি হিজরি দ্বাদশ শতাব্দীর একটি নিদর্শন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেশ কয়েকবার মসজিদটির সংস্কার করা হয়েছে। ইরানের জাতীয় নিদর্শনের তালিকায় নিবন্ধিত ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলির একটি এই মসজিদ। দেলগোশা মসজিদে একটি শাবেস্তান রয়েছে এবং আরও রয়েছে দুটি পুরানো অংশ। পুরানো অংশে রয়েছে অসংখ্য কলাম বা পিলার। এসব পিলারের মাথায় রয়েছে চকের দর্শনীয় বিচিত্র সব কারুকাজ। দেলগোশা গ্র্যান্ড মসজিদটি তৈরি করতে সুন্দর সুন্দর পিলার বা কলাম এবং সেগুলোর মাথায় যে সমস্ত চকের কারুকাজ করা হয়েছে সেগুলো এই পিলারগুলোর পাশাপাশি পুরো মসজিদের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে পর্যটকদের কাছেও এই মসজিদ স্থাপনাটি অন্যতম জনপ্রিয় ও দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

বলছিলাম বন্দর আব্বাস শহরের একেবারে কেন্দ্রে এখনকার মসজিদগুলো থেকে ভিন্ন ধাঁচের একটি মসজিদ রয়েছে। এই মসজিদের নাম হলো "গেলেদরি মসজিদ"। এই মসজিদটিও হিজরি তের শতাব্দীতে নির্মিত ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি। মসজিদটির নির্মাতা ছিলেন হাজ শেখ আহমদ গেলেদরি। তাঁর নাম অনুসারেই মসজিদটিরও নাম রাখা "গেলেদরি মসজিদ"। মসজিদের মিনার, উঠোন এবং শাবেস্তানেরের বিশেষ স্থাপত্যশৈলী ঐতিহাসিক নিদর্শন নিয়ে যারা আগ্রহী কিংবা গবেষণা করেন তাদের মুগ্ধ করে। মসজিদটি দেড় মিটার উঁচু পাথরের একটি প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্মিত হয়েছে। মসজিদকে ঘিরে রয়েছে আরও কিছু স্থাপনা যেমন: একটি উঠোন, ঝুলবারান্দা, কলামভিত্তিক একটি শাবেস্তান এবং একটি শীতকালীন শাবেস্তান ইত্যাদি।

মসজিদের শাবেস্তানটি বর্গাকৃতির। এতে রয়েছে ষোলোটির মতো কলাম। বর্গ আকৃতির এই কলামগুলো অসম্ভব সুন্দর কারুকাজে সুসজ্জিত। এগুলোর বেশিরভাগই চকের কারুকাজ। দেওয়ালের সাথেও সংযুক্ত রয়েছে কয়েকটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কলাম। কলামগুলি এবং অর্ধ-কলামগুলি একটির সাথে আরেকটি সংযুক্ত। আবহাওয়া কিংবা আর্দ্রতা প্রতিরোধের বিষয়টি বিবেচনা করে শাবেস্তানের উপরের দিকটি কাঠের বীম, বোর্ড এবং ঘন আস্তরণে আবৃত করা হয়েছে। মসজিদ ভবনের ঐতিহাসিক শিলালিপিটি তেরো শ আটত্রিশ হিজরির। ভবনের প্রতিষ্ঠাতার নাম মসজিদের মেহরাবের পাশের দেয়ালে স্থাপন করা আছে। ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় গেলেদরি মসজিদটির নাম অন্তর্ভুক্ত করা  হয়েছে।

গেলেদরি মসজিদের কাছে কাজার আমলের অর্থাৎ ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষের দিকের ঐতিহাসিক একটি হাম্মামখানা রয়েছে। এটি বন্দর আব্বাসের অন্যতম দর্শনীয় নিদর্শন। এই হাম্মামের নির্মাণশৈলী গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে উচ্চ আর্দ্রতা শোষণশক্তি সম্পন্ন সমুদ্রের পাথর, স্পঞ্জ পাথর, প্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। গত দুই হাজার সালে এই গোসলখানাটিকে নৃতাত্ত্বিক জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে। এটি দেখার মাধ্যমে হরমুজগান প্রদেশের বাসিন্দাদের সংস্কৃতির সাথেও পরিচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। শ্রোতাবন্ধুরা, আসরের এ পর্যায়ে বন্দর আব্বাসের পুরাতন জেটি ঘুরে আসা মন্দ হবে না বলে মনে করি। সাধারণত বন্দর আব্বাস ভ্রমণকারীরা এই শহরের পুরাতন জেটিগুলো ঘুরে দেখেন।

বহু বছর ধরে ব্যবসায়িরা এই জেটির সহযোগিতায় নিজেদের বিচিত্র পণ্য যেমন মটরশুটি, চামড়া, পেস্তা, কার্পেট, খেজুর ইত্যাদি রফতানি করতো। একইসঙ্গে প্রতিবেশী দেশসহ মুম্বাই ও করাচি, ওমান ও এডেন এবং জাঞ্জিবার ও কেনিয়ার মতো আফ্রিকান ভূখণ্ডের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এইসব জেটি আর বন্দরের সাহায্যে। বন্দর আব্বাসের জেটির পাশেই রয়েছে কোলাহ ফারাঙ্গি নামে একটি ভবন। এটি বান্দর আব্বাসের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। সাফাভি আমলের  এই স্থাপত্যটিও এখানকার একটি দর্শনীয় নিদর্শন। এ নিয়ে আজ আর কথা বলার সুযোগ নেই।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ