ডিসেম্বর ২৩, ২০২০ ২৩:২০ Asia/Dhaka

ডেইরি শিল্পের ভুবনে পেগাহ সবচেয়ে নামকরা একটি কোম্পানি। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে দুগ্ধ শিল্পের সর্ববৃহৎ উত্পাদক কোম্পানি এই পেগাহ। এই কোম্পানির ঊনত্রিশটি পণ্য এবং সরবরাহ উপখাত রয়েছে।

দুধ, দই, ক্রিম, মাখন, পনির, আইসক্রিম, রস, দই, দুধের গুঁড়ো এবং গুঁড়োজাতীয় আরও পণ্যসহ এবং কার্বনেটেড পানীয়ের মতো বারোটি প্রধান শাখা রয়েছে এই কোম্পানির। যাই হোক আজ আমরা প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে যাবো মধু চাষের দিকে। মৌমাছি পালন বা মধু চাষের ক্ষেত্রে ইরান বেশ সক্রিয়। বিশ্বের প্রায় আট কোটি দশ লাখ মৌচাক থেকে পণর লক্ষ টনের মতো মধু উৎপাদিত হয়। যে দশটি দেশ বিশ্বের মধ্যে মধু চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক সক্রিয় তাদের মধ্যে ইরান অন্যতম।

মৌমাছি আল্লাহর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। বিস্ময়কর প্রাণী এজন্য যে মৌমাছি থেকে উৎপন্ন মধু ভীষণ উপকারী, সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকর এবং এগুলো খুবই উৎপাদনশীল। বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের কারণ উপকরণগুলোর মধ্যে এই ছোট্ট মৌমাছি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন মৌমাছির অস্তিত্ব না থাকলে মানব জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যেত এবং পৃথিবীতে জীবনযাপন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়তো। এর অন্যতম কারণ হলো মৌমাছিরা পরাগায়ণে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদ এবং গাছ-গাছালির পরাগায়নের বহু প্রক্রিয়া রয়েছে। তবে পোকামাকড়ের সাহায্যে বিশেষ করে মৌমাছির সাহায্যে পরাগায়নের প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় চেরি কিংবা আপেলের মতো ফলগুলোর পরাগায়নের শতকরা নব্বুই ভাগই ঘটে মৌমাছির মাধ্যমে। অ্যামন্ড বাদামের পরাগায়ন শুধুমাত্র মৌমাছির মাধ্যমেই ঘটে। মৌমাছির পরাগায়নের অর্থনৈতিক মূল্য মৌমাছির মাধ্যমে উৎপন্ন মোম এবং মধুর চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে কোনো কোনো দেশে মৌমাছির মৌচাকের মালিক মানে মধু চাষী যারা তাদেরকে তাদের বাগান কিংবা ক্ষেত খামারে মৌচাক গড়ে তোলার জন্য প্রচুর অর্থ দেওয়া হয়। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব বি-কিপারস অ্যাসোসিয়েশনস বা অ্যাপিমন্ডিয়া'র প্রধান প্রফেসর ফিলিপ ম্যাক কেইবের ভাষ্যমতে: উত্পাদন চক্র থেকে মৌমাছিদের অপসারণ করা হলে পরিবেশের জন্য তা বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি যাতে না হয় সে জন্য এবং জীববৈচিত্র্য ও মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌমাছির খুবই প্রয়োজন।

সারা বিশ্বে কমপক্ষে বিশ হাজারের মতো মৌমাছির প্রজাতি রয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে একটি প্রজাতির মৌমাছি কেবল সামাজিক জীবন ধারণ করে। যে প্রজাতির মৌমাছি থেকে আমরা মধু আহরণ করি সেগুলো বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে মধু সঞ্চয় করে মৌচাকে মানে তাদের বসবাসের ঘরে নিয়ে জমায়। তাদের উৎপাদিত ওই মধু আমাদের রোগ নিরাময়ের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। মধুর রঙে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। মধুর রঙ নির্ভর করে মৌমাছিরা কোন ফুল থেকে মধু আহরণ করছে তার রঙের ওপর। সাধারণত মধুর রঙ কখনো বেশ পরিষ্কার হয় আবার কখনও হয় গাঢ় এবং সলিড রঙের।

ফার্সি ভাষায় যে গাছটিকে আকাকিয়া বলে ইংরেজিতে তার নাম হলো লোকাস্ট। এই লোকাস্ট ফুলের মধুর রঙ একেবারেই স্বচ্ছ অনেকটা হালকা সোনালি রঙের কিংবা কিছুটা সবুজাভ হয়। ফার্সি সানুবারকে বলে ইংরেজিতে পপলার বা পাইনও বলে। এই বৃক্ষের ফুলের মধু বেশ গাঢ় হয় এবং রঙ হয় অনেকটাই খয়েরি। এভাবে বিভিন্ন ফলের ফুল থেকে আহরিত মধুর রঙ ওই ফুলের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গাঢ় কিংবা পাতলা হয়। অবিশান নামে এক ধরনের উদ্ভিদের ফুলের মধুর রঙ হয় লাল। বলা হয়ে থাকে যে গাঢ় রঙের মধু মানে খয়েরি কিংবা লাল অথবা কফি রঙের মধুতে হালকা রঙের মধুর চেয়ে খনিজ উপাদান অনেক বেশি থাকে।

মধুর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি এবং এটি একটি পরিপূর্ণ খাবার। ভাবতেও অবাক লাগে ছোট্ট একটি মধুপোকা কী করে উদ্ভিদ নির্বাচন করে। শুধু তাই সেই ফুলের মধু আহরণ করে নিজেদের থাকার ঘর মৌচাকে এনে উচ্চ মানের খাদ্যগুণ সম্পন্ন মধু তৈরি করে। সেই মধু সমগ্র মানব জাতির জন্য কতোটা উপকারী এবং ওষুধিগুণ সম্পন্ন একটি খাবারে পরিণত হয় তা বিবেচনা করা যেতে পারে। একটি অপকারী ফুলও তারা বেছে নেয় না। মানুষের জন্য যে যে ফুলের মধু উপকারী সেই ফুলগুলোই তারা নির্বাচন করে। সব ধরনের ফুলে কিন্তু বসে না তারা। কী অবাক কাণ্ড! সুগন্ধি ফুলগুলোকে বেছে বেছে নির্বাচন করে তারা-এই নির্ধারণী শক্তি যে কী প্রচণ্ড তাদের তা ভাবিয়ে তোলে বৈ কি!

মধু একটি মিষ্টি এবং সুস্বাদু খাদ্য। যে-কেউ মধু পছন্দ করেন। এই খাদ্যগুণের বাইরেও মধুর মধ্যে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যে বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবেও কাজে লাগে। বহু রকমের খাদ্যপুষ্টির অভাব পূরণ করে মধু। মধুতে প্রচুর খনিজ উপাদান রয়েছে। রয়েছে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, মেজাইম, দস্তা, শিসা, তামা, সালফার, নিকেল, সোডিয়ামসহ আরও নানা উপাদান। তবে এসব উপাদানের পরিমাণ নির্ভর করে মধুর তারতম্যের মধ্যে। এক কিলোগ্রাম মধুতে তিন হাজার ক্যালরি অ্যানার্জি রয়েছে। রয়েছে আরও বহু রকমের অ্যাঞ্জাইম, প্রোটিন, অ্যামিনো এসিডসহ আরও অনেক উপাদান। সেসব নিয়ে আজ আর কথা বলার সুযোগ নেই। পরবর্তী আসরে আমরা চেষ্টা করবো মধু নিয়ে আরও কথা বলতে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ