জানুয়ারি ৩১, ২০২১ ২০:৩০ Asia/Dhaka

আজ আমরা মহানবীর (সা) জীবনী সংক্রান্ত একটি বই নিয়ে আলোচনা করব। বইটির নাম হল ‘প্রাচীনতম তথ্য-উৎসগুলোর আলোকে মুহাম্মাদ (সা)’।

‘প্রাচীনতম তথ্য-উৎসগুলোর আলোকে মুহাম্মাদ (সা)’ শীর্ষক ওই বইয়ের আলোকে আমরা মহানবী (সা) ও ইসলাম সম্পর্কে  মরহুম মার্টিন লিঙ্গসের মতামত ও বক্তব্যের কিছু অংশ জেনেছি। বইটি প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। সেই থেকে এ পর্যন্ত বইটি বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছে এবং বহুবার বইটি ছাপাতে হয়েছে। মার্টিন লিঙ্গস ওরফে আবুবকর সিরাজউদ্দিন এ বইয়ে মহানবীকে বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহর পাঠানো এক উজ্জ্বল ও কালোত্তীর্ণ নূর বলে উল্লেখ করেছেন।

 মহানবীর পূর্বপুরুষদের মূল শাখার সবাই যে ছিলেন এক খোদার উপাসক মরহুম মার্টিন লিঙ্গস ওরফে আবুবকর সিরাজউদ্দিন তা উল্লেখ করছেন।

মানুষ সব সময়ই পূর্ণতাপ্রাপ্ত মানুষের অনুসরণ করতে চায়। তারা এমন সব মানুষের অনুসরণ করতে চায় যারা আধ্যাত্মিক নানা সৌন্দর্যসহ বহু মহত গুণের অধিকারী। মানুষ এ ধরনের ব্যক্ত্বির প্রশংসা করতে বাধ্য হয় ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায়। নবী-রাসুল তথা ঐশী মহাপুরুষেরা এ কারণেই পবিত্র ও যোগ্য মানুষদের অন্তর আকৃষ্ট করতে সক্ষম হন। নবী-রাসুলরা এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাহরা সব মহতী গুণের অধিকারী ছিলেন। তারা নিজ নিজ যুগে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃত। সত্য-সন্ধানী মানুষেরা ঐশী মহামানবদের জীবনী সম্পর্কে পড়াশুনা করে তাঁদের স্বভাব-চরিত্র ও আচরণের অনুরাগী হয়ে পড়েন। তাঁদের বৈশিষ্ট্য ও আচার-আচরণ মানুষকে মহান আল্লাহ, সত্য ও বাস্তবতার পথ দেখায়। মার্টিন লিঙ্গস তার বইয়ে মহানবীর চরিত্র ও চিন্তাধারার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন,  মহানবীর (সা) ইসলামী জ্ঞান বা শিক্ষা ও ইরফানের জগতে অবগাহন করে কোনো ব্যক্তি তাঁর তথা মহানবীর (সা) হাদিস বা বক্তব্যের সুন্দর ফুল বাগিচা থেকে ফুল আহরণ করতে সক্ষম। যেমন, মহানবীর (সা) এই বক্তব্য কতই না সুন্দর যেখানে তিনি বলেছেন: তোমরা জ্ঞানের অনুসন্ধান কর এমনকি যদি এ জন্য চীনেও যেতে হয়!

প্রাচীনতম তথ্য-উৎসগুলোর আলোকে মুহাম্মাদ (সা)’ শীর্ষক বইয়ের একাংশে লিঙ্গস মহানবীর মুজিজা বা অলৌকিক ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন: মহানবীর (সা) অনেক মু’জিজা ছিল। একবার কুরাইশ নেতারা পূর্ণ চাঁদকে দুই টুকরো করে দেখাতে মহানবীর (সা) কাছে আব্দার জানিয়েছিল যাতে প্রমাণ হয় যে তিনি সত্যিই নবী। মহানবী (সা) তাদের আব্দার মেনে নিয়েপূর্ণ চাঁদকে দুই টুকরো করে দেখালেন। কিন্তু কুরাইশরা এ ঘটনাকে স্রেফ জাদু হিসেবে তুলে ধরে বলে যে মহানবী (সা) তাদেরকে জাদুর মাধ্যমে সম্মোহন করেছেন। লিঙ্গস লিখেছেন: মহানবীর (সা) এ ধরনের অনেক মু’জিজা থাকা সত্ত্বেও তিনি এসব ঘটনাকে নিজ কাজের প্রধান অক্ষ হিসেবে ব্যবহার করেননি। কারণ তাঁর সবচেয়ে বড় ও প্রধান মুজিজা হল পবিত্র কুরআন। এ মহাগ্রন্থ সব যুগের মানুষের সুপথের জন্য খোদায়ি বিধান বা গাইড-বই। কুরআন হল আলো দেখানোর ও সুপথ দেখানোর বই।

মহানবী (সা) যে আল্লাহর পাঠানো নবী ও রাসুল ছিলেন তা তুলে ধরার জন্য মার্টিন লিঙ্গস বাহিরা নামক সন্ন্যাসী বা খ্রিস্টান পুরোহিতের ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখ করেন। তিনি যে শেষ নবী হিসেবে আবির্ভূত হবেন তা উল্লেখ করেছেন বাহিরা। যখন পবিত্র কুরআনের প্রথম আয়াত নাজিল হয় তখন অন্ধ পণ্ডিত ওয়ারাক্বা বিন নওফেল-ও হযরত খাদিযাকে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন যে আপনার স্বামীর ওপর যা নাজিল হয়েছে তা আল্লাহর ওহি বা প্রত্যাদেশ এবং নিঃসন্দেহে ইনিই হচ্ছেন  প্রতিশ্রুত সেই শেষ নবী যার আগমনের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন হযরত ঈসা (আ)। 

মার্টিন লিঙ্গস ওরফে মরহুম আবুবকর সিরাজউদ্দিনের দৃষ্টিতে মহানবী (সা) মানবজাতির জন্য যেসব সুসংবাদ দিয়ে গেছেন সেসবের অন্যতম প্রধানটি হল পরিপূর্ণ সংস্কারক হযরত ইমাম মাহদি (আ) আসার প্রতিশ্রুতি।  মরহুম সিরাজউদ্দিন এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, মানব সমাজের এক বড় অংশই ভ্রান্তির চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।  এমন এক অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে এর চেয়েও আরও বেশি এগুনোর সুযোগ নেই। কিন্তু এই ভ্রান্তি সর্বাত্মক বা সবখানে ছড়িয়ে পড়বে না। কারণ বিশ্ব সামগ্রীকভাবে পবিত্র স্থান। আল্লাহ বিশ্ব জগতকে নিজের অবস্থায় ছেড়ে দেবেন- এটা হতে পারে না! মহানবী ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে শেষ যুগের নানা দূষণ সত্ত্বেও এমন একজন ত্রাণকর্তার আবির্ভাব হবে যিনি হবেন পরিপূর্ণ সংস্কারক। মানুষ তাঁকে মাহদি বলবে। তাঁর আগমন সুনিশ্চিত বা অনিবার্য। 

মরহুম মার্টিন একজন অক্লান্ত লেখক হিসেবে ৯৭ বছর বয়স পর্যন্ত লিখে গেছেন। অনেক চিন্তাবিদই তাকে ম্যাটাফিজিক্স বা পরাবাস্তবতার বিষয়ে বড় পণ্ডিত এবং অনেকেই তাকে বড় কবি বলে মনে করেন। সৌন্দর্য ও আল্লাহ প্রেমিক এই মানুষটি ফুল ও গাছের এক সুন্দর ক্ষুদ্র বেহেশত রচনা করেছিলেন। ২০০৫ সালে মৃত্যুর পর তাকে সেই বেহেশতেই দাফন করা হয়।

মরহুম মার্টিন ওরফে সিরাজউদ্দিনের বই শেষ হয়েছে পবিত্র কুরআনের সুরা আহজাবের ৫৬ নম্বর আয়াত তথা এ বাক্যটি দিয়ে: নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্যে দরুদ পাঠাও এবং তাঁর প্রতি উপযুক্ত সালাম প্রেরণ কর তথা তার অনুগত হও।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ