পাশ্চাত্যে জীবন ব্যবস্থা (পর্ব-১৮)
গত আসরে আমরা বলেছি পাশ্চাত্যে এখন শিশুদের কাছেও বিকৃত যৌনাচারকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদেরকে প্রকৃতি বিরোধী সমকামিতার দিকে আকৃষ্ট করতে এনিমেশন ফিল্ম তৈরি করা হচ্ছে।
শিশুদের জন্য নির্মিত ‘ফ্রোজেন-টু’ কার্টুনে দুই সমকামী রাজকন্যার মধ্যে বিয়ের ঘটনা দেখানো হয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগেই শিশুদের সামনে এ ধরণের অস্বাভাবিক সম্পর্ককে স্বাভাবিক হিসেবে তুলে ধরার কারণে অনেক শিশুই বিপথে চলে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। ওয়াল্ট ডিজনি’র নির্মিত এনিমেশন ও কার্টুনগুলো সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ে দ্রত গতিতে। এ ধরণের এনিমেশন তৈরির মাধ্যমে পুঁজিবাদীরা সারা বিশ্বেই সমকামিতার মতো ঘৃণ্য সম্পর্ককে স্বাভাবিক সম্পর্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে।
প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যানারে পাশ্চাত্যে যে যৌন বিপ্লব শুরু হয়েছিল তা শিশু নির্যাতন বৃদ্ধি এবং সমকামিতার মতো নানা সংকটের জন্ম দিয়ে এখন পশুর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়তে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। হেডোনিজম মতবাদে পশুর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে কামনা চরিতার্থ করার কথা বলা হয়েছে যা পাশ্চাত্য সমাজে ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। পাশ্চাত্যের অনেক দেশেই এখন পশুর সঙ্গে বিয়ের ঘটনা বাড়ছে। তবে পাশ্চাত্যের মানুষের অবাধ যৌনাচারের এটিই শেষ ঠিকানা নয়। পাশ্চাত্যের মনোবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ওই সব দেশে এখন ১৫ ধরণের বিকৃত যৌনাচার চালু রয়েছে। অবাধ স্বাধীনতার নামে যে যৌনাচার পাশ্চাত্যে শুরু হয়েছে তা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে থাকলে এক সময় মানুষের প্রাকৃতিক যৌনাকাঙ্খায় মারাত্মক আঘাত আসবে বলে মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন।
বিকৃত যৌনাচার কখনোই মানব সমাজের প্রকৃত লক্ষ্য সাধনে সক্ষম নয়। এ ধরণের প্রবণতার কারণে একটা পর্যায়ে গিয়ে মানুষের এই স্বাভাবিক চাহিদা বা যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পেতে পারে যা মানুষের স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধিকেও বিপদের মুখে ঠেলে দেবে। পাশ্চাত্যের এই সংস্কৃতি কোনোভাবেই মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কারণে ঐশী ধর্মগুলো এ ধরণের কাজকে অন্যায় ও মারাত্মক অপরাধ বলে গণ্য করে। এই ধরণের অপসংস্কৃতি কেবল একজন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। পুরো সমাজ ও জাতিকে বিপথে বা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে এমন কুসংস্কৃতি। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর মতে, যেসব সমাজে আধ্যাত্মিকতার নাম-নিশানা নেই সেখানে নৈতিক অবক্ষয় হতেই থাকবে এবং আর এই নৈতিক অবক্ষয়ই হচ্ছে বর্তমান পাশ্চাত্য সভ্যতার মারাত্মক দুর্বল পয়েন্ট। এই দুর্বলতাকে এই সভ্যতাকে ধ্বংস করবে।
পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে একটি বড় স্লোগান হচ্ছে লিঙ্গ সমতা। পশ্চিমা গণমাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং তারা এমন ভান করছে যে, পাশ্চাত্যের নারীরা সমস্ত স্বাধীনতা ও অধিকারসহ সব কিছু পেয়ে গেছে এবং তারা খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। তাদের ভাবটা এমন যে, পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে লিঙ্গ বৈষম্য বলে কিছু নেই। লিঙ্গ সমতার স্লোগান এখন পাশ্চাত্যের একটা হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করছে। পাশ্চাত্যের নীতি অনুসরণ করে না এমন দেশগুলোকে হেনস্থা করতেও এই লিঙ্গ সমতা বা লিঙ্গ বৈষম্য ইস্যুকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে অন্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ করে আসছে। আর এই ইস্যুতে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে। তবে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে পরিচালিত গবেষণায় নানা সময়ই বেরিয়ে আসছে আসল চিত্র। নারী ও পুরুষ একই ধরণের এবং একই পর্যায়ের পদে চাকরি করার পরও বেতন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে নারীরা। তাদেরকে কম বেতন দেওয়া হচ্ছে।
বেতনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে কাজ করেছে ইউরোস্ট্যাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। তাদের সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোতেও এই বৈষম্য প্রকট। তারা নারী ও পুরুষের মধ্যে আয়ের ব্যবধান নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে পুরুষ ও নারীর মধ্যে গড় বেতনের ব্যবধান ১৬ শতাংশেরও বেশি। সহজ ভাষায় বলা যায় নারীরা একই ধরণের কাজ করেও পুরুষের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম বেতন পান। ইউরোপীয়ান ইনস্টিটিউট ফর জেন্ডার ইক্যুয়ালিটির ২০১৯ ইনডেক্সে বলা হয়েছে, জার্মানিতে নারীদের গড় বেতন পুরুষদের চেয়ে ২০ শতাংশ কম। এছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটিগুলোতে নারীদের উপস্থিতি মাত্র ১৫ শতাংশ। এই পার্থক্য যুক্তরাজ্য বা ব্রিটেনে ২১ শতাংশ এবং অস্ট্রিয়াতে ২০ শতাংশের বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্স, স্পেন এবং সুইডেনের অবস্থাও একই ধরণের। সুইডেনে একজন নারী গড়ে একজন পুরুষের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম বেতন পান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নারীরাও বেতন বৈষম্যের শিকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এক হিসেবে দেখা গেছে মার্কিন নারীরা তাদের পুরো চাকরি জীবনে একই ধরণের পেশায় থাকার পরও পুরুষদের তুলনায় প্রায় পাঁচ লাখ ডলার কম উপার্জন করেন।
আমেরিকার যে কাজের জন্য একজন পুরুষকে এক ডলার দেওয়া হয় ঠিক সে কাজের জন্যই একজন মহিলাকে দেওয়া হয় ৭৭ সেন্ট। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে ২৩ সেন্ট কম। যেসব কমীরা সরকারি আইন অনুযায়ী পরিপূর্ণ সময় কাজ করেন তাদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নারীদের বেতন পুরুষের তুলনায় ১৮ শতাংশ কম। এই বৈষম্য পরিচালক পর্যায়ে গিয়ে ২০ শতাংশে পৌঁছে যায়। এছাড়া আইনী পেশায় নারী-পুরুষের মধ্যে বেতনের বৈষম্য ৪৩ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে নানা কারণে নারী ও পুরুষের বেতনে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, চাকরির ধরণ, অর্থনীতিতে সংশ্লিষ্ট পেশার গুরুত্ব, কাজের সময়, কাজের অভিজ্ঞতা, বয়স এবং বৈবাহিক অবস্থা উল্লেখযোগ্য। এসব বিষয়ের ভূমিকার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হচ্ছে, লিঙ্গ বৈষম্য। নিঙ্গ বৈষম্যের কারণেই নারীদেরকে পুরুষদের সমান বেতন দেওয়া হচ্ছে না। বলে গবেষণা প্রতিবেদনগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে। #
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ২৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।