পাশ্চাত্যে জীবন ব্যবস্থা (পর্ব-১৯)
গত আসরে আমরা পাশ্চাত্যে নারীদের প্রতি বৈষম্য বিশেষকরে বেতন বৈষম্য নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছি। আজকের আসরে আমরা নারীদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক ও অবমাননাকর আচরণ প্রসঙ্গে আরও আলোচনার চেষ্টা করব।
আজকে আসরের শুরুতেই আমরা আপনাদের সামনে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের ঝলমলে একটি সড়কের দৃশ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব। ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবি'র রিপোর্টার মোহাম্মাদ দেলভারি সেই দৃশ্য বর্ণনা করেছেন এভাবে: লাল আলোর ঝলকানি আর অ্যালকোহল ও মাদকের গন্ধই এই সড়কগুলোর বড় পরিচিতি। রেল স্টেশন ও দরিদ্র এলাকাগুলোর ধারেকাছেই এ ধরণের সড়ক বেশি চোখে পড়ে। আজ এ ধরণের একটি সড়কের চিত্র তুলে ধরছি। স্বল্পবসনা নারীরা কাচে ঘেরা ছোট্ট স্থানে দাঁড়িয়ে নিজেদেরকে প্রদর্শন করছেন নানা অঙ্গভঙ্গিতে। অন্যান্য পণ্যের শোকেসের সঙ্গে এসব শোকেসের তেমন কোনো পাথ্যক্য নেই। সড়ক দিয়ে যারা হাটছেন তারা যেন দাস কেনাবেচার বাজারে ঢুকেছেন এবং কাকে বাছাই করবেন তা নিয়ে ভাবছেন।
শোকেসে থাকা এসব নারীর বেশিরভাগই এসেছেন পূর্ব ইউরোপসহ অন্য দরিদ্র দেশগুলো থেকে। আবার অনেকে ওই দেশেরই মানুষ। এদের অনেককেই সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরা আরামদায়ক জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখানে পাচার করা হয়েছিল এবং এখন বেঁচে থাকতে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম আয়ের জন্য পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা এখন যৌন দাসীতে পরিণত হয়েছেন। তাদেরকে মাফিয়া চক্রসহ নানা মহল অপব্যবহার করছে। লাভবান হচ্ছে খোদ সরকারও। আইআরআইবির সংবাদদাতা প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে সেখানকার একজন পতিতার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এই সংবাদদাতাকে বলেছেন, তিনি খুবই দরিদ্র ছিলেন, তার কোনো অর্থ-কড়ি ছিল না। যথেষ্ট খাবারও ছিল না। এ অবস্থায় সে এই পথে নামে। বেঁচে থাকার তাগিদে তাকে দৈনিক ৫০ জন পুরুষকেও সময় দিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন,কখনো কখনো মনে হতো কেন এই পৃথিবীতে এসেছি। জন্ম না হলেই ভালো হতো। মৃত্যু হলে বেঁচে যেতাম।
একটা মেয়ের জন্য এর চেয়ে বড় অপমান ও অসন্মানের আর কিছু হতে পারে না্ যুগে যুগে ক্ষমতাবান,ধনী ও অভিজাত ব্যাক্তিরাই পতিতা তৈরি করেছেন। এর পেছনে এখন মূল কারিগর হিসেবে কাজ করছে পুঁজিপতিরা। পৃথিবীর কোন দেশেরই ভালো কোন মেয়ে মনের আনন্দে এই পেশায় আসে না। সীমাহীন দারিদ্রই তাদের পতিতাবৃত্তি গ্রহণে বাধ্য করে। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন ছবিতেও দেখানো হয়েছে, ধনী দেশের মেয়েরাও কেনো পতিতা হয় এবং অনুকূল পরিবেশ পেলে তারাও একটা স্বাভাবিক ও সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে। ইউরোপ ও আমেরকার সরকারগুলো বছরের পর বছর নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য হাজার হাজার কোটি ডলার ব্যায় করছে। কিন্ত নিজের দেশের মেয়েদের অসন্মানজনক এই পেশা থেকে মুক্ত করতে তাদের কোন আগ্রহ নেই।
আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো নারী অধিকারের বড় বড় স্লোগান দিলেও নারীর প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী মোটেও সন্মানজনক নয়। তাই এসব দেশে প্লে-বয় ও হাসলারের মতো ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। টপলেস বার, স্ট্রিপটিস ও পতিতাবৃত্তি অবাধে চালু রাখা হয়েছে। হাসলার ও প্লেবয়-এর মতো ম্যাগাজিনে পতিতারা গ্রাহক সংগ্রহের জন্য নিজেদের নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বরসহ বিজ্ঞাপন দেয়। অনেকে খোড়া যুক্তি দেন পতিতালয় থাকলে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন কমে। কিন্তু বাস্তবে এই দাবি ভিত্তিহীন। পতিতালয় রাখা সম্পর্কে তাদের যুক্তি যে কতোটা অর্থহীন, সেটা আমেরিকা ও ইউরোপের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালেও বোঝা যায়। কিন্ত তারপরও নারী ধর্ষণ থেমে নাই। কারণ ধর্ষণের প্রতি ঝোকপ্রবণতা অনেকটাই ভয়ংকর বিকৃত মানসিক রোগ। মূলত একটা দেশ ও সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীও হচ্ছে সেই দেশে পতিতাবৃত্তি প্রচলিত থাকার মূল কারণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পতিতাবৃত্তি বৈধ কিন্তু দেখা যাচ্ছে দেশটির প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ধর্ষণ মামলার প্রতি ইঙ্গিত করলেই স্পষ্ট হবে সেখানকার বাস্তব চিত্র। মার্কিন লেখিকা ই জিন ক্যারল একটি বইয়ে দাবি করেছেন দুই দশক আগে শপিং মলের ড্রেসিং রুমে তাকে ধর্ষণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ঘটনাটি ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে বা পরের বছরের শুরুর দিকের। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ওই শপিং মলে একটি টিভি অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করছিলেন তিনি। শো শেষ হওয়ার পর শপিং মল বন্ধ হওয়ার মুখে তার সঙ্গে ট্রাম্পের দেখা হয়। ট্রাম্প বলেন, “আপনি তো সেই উপদেশ দেওয়া মহিলা।” ক্যারলের দাবি, কোনো এক নারীর জন্য উপহার কিনতে তাকে সাহায্য করার আরজি জানান ট্রাম্প। তার পর ক্যারল সেই মহিলার বয়স জিজ্ঞেস করেন। সেটা না জানিয়ে বরং ক্যারলের বয়স জিজ্ঞেস করেন ট্রাম্প। ক্যারল নিজের বয়স ৫২ বছর বলার পর ট্রাম্প তাকে বলেন, “আপনি অনেকটাই বয়স্ক।” সেই সময় ট্রাম্পের বয়স ছিল ৪৯ বছর।
ক্যারলের বক্তব্য, “ট্রাম্প তখন একটি টুপি কেনেন এবং উপহার কেনার নাম করে মলের ওপরের তলায় একটি অন্তর্বাসের দোকানে নিয়ে যান। সেই সময় যেহেতু শপিং মল বন্ধ হচ্ছিল, তাই ওই এলাকায় কেউ ছিল না। ট্রাম্প কয়েকটি অন্তর্বাস ও একটি স্বচ্ছ গাউন নেন এবং আমাকে পরতে বলেন।” তার শরীরের সঙ্গে পোশাক মানানসই বলেও ট্রাম্প মন্তব্য করেন। এরপরই শুরু হয় তার অগ্নিপরীক্ষা। একটি ড্রেসিং রুমের কাছে যেতেই ট্রাম্প তাকে দেওয়ালের সঙ্গে চেপে ধরেন। সেখানেই তাকে চুমু খান। তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর কোনো রকমে ধাক্কা দিয়ে ট্রাম্পকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান। নিজের অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে সেই সময় দুই বন্ধুর কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন ক্যারল। মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের পক্ষ থেকে সেই দুই বান্ধবীর একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনিও স্বীকার করেছেন যে,ক্যারল সেই সময় তাকে ঘটনার কথা বলেছিলেন। এ বিষয়ে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো বিচার পাননি ওই লেখিকা।#
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।