মার্চ ৩১, ২০২১ ১৯:১৭ Asia/Dhaka

যাই হোক আজ আমরা রাসায়নিক পণ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান, অগ্রগতি ও তৎপরতা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

বিশেষ করে ইরানের পেইন্ট, রজন এবং আঠা ও টেপ শিল্পের কথার পাশাপাশি জ্ঞান-ভিত্তিক কয়েকটি ইরানি কোম্পানির কৃতিত্ব ও অর্জনের দিকে ইঙ্গিত করার চেষ্টা করবো।

রাসায়নিক উপাদান ও পণ্য সামগ্রী মানুষের আধুনিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও পরিহার করার কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে। খুব কম শিল্প পাওয়া যাবে যেখানে রাসায়নিক বিভিন্ন উপাদান কাঁচামাল কিংবা সহযোগী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। সিমেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে, মোটর লুব্রিকেন্টসের ক্ষেত্র থেকে শুরু করে আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ যেমন টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, পোশাক শিল্প, ওষুধ ও স্বাস্থ্য শিল্পেও এগুলো ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই কারণে রাসায়নিক শিল্পকে "শিল্পসমূহের শিল্প" হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।

রাসায়নিক পণ্য উত্পাদনকারী বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশগুলিতে লক্ষ্য করা গেছে যে শিল্পের উত্পাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সেসব দেশে প্রচুর কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে। যার দুর্দান্ত প্রভাব পড়েছে তাদের বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে। সাম্প্রতিক দশকে রাসায়নিক পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে এই শিল্পপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে গেছে। উনিশ শ সত্তরের দশকে যেখানে রাসায়নিক পণ্য উৎপাদনের মূল্যমান ছিল সতেরো হাজার এক শ কোটি ডলার সেখানে দু’হাজার বারো সালে উৎপাদিত রাসায়নিক পণ্য সামগ্রীর মূল্যমান দাঁড়ায় পাঁচ ট্রিলিয়ন মানে পাঁচ লক্ষ কোটি  ডলার (হিসেবটা কনফার্ম হয়ে নেবেন প্লিজ)।

রাসায়নিক পণ্য সামগ্রী উৎপাদন নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। আসলে এইসব রাসায়নিক পণ্য গ্রুপের মধ্যে একটি আইটেম হলো পেইন্ট, রজন এবং আঠা বা আঠালো পণ্য। ঠিক কে যে প্রথম পেইন্ট বা রঙ শিল্প উত্পাদন করতে সফল হয়েছিল সেই ইতিহাস পরিষ্কার নয়। তবে যেটুকু জানা যায় তা হলো রাসায়নিক রঙ উত্পাদনের আগে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান যেমন মেহেদি, সাদা ফুল এবং আজারের মতো গাছ থেকে রঙ তৈরি করা হত। জগদ্বিখ্যাত চিত্রশিল্পীরাও তাদের প্রয়োজনীয় রঙগুলো একটি ঐতিহ্যবাহী বা প্রচলিত উপায়ে তৈরি করে নিত। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রস্তুত করতেন তাদের ব্যবহার্য সকল রঙ।

সময়ের সাথে সাথে রঙ তৈরিতে খনিজ উপাদান ব্যবহার করার প্রচলন হতে থাকে। এই খনিজ উপাদানের সঙ্গে ধীরে ধীরে জৈব রঞ্জক পিগম্যান্ট ব্যবহার করা হয়। মনে করা হয় যে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক পেইন্টের উত্পাদন শুরু করেছিল "ড্যু পন্ট" নামের আমেরিকার এক ভদ্রলোক। আজ বিশ্বব্যাপী প্রায় চার কোটি টন পেইন্ট উত্পাদিত হয় যার আনুমানিক মূল্য বারো হাজার কোটি ডলার। দু’ হাজার চৌদ্দ সালে বিশ্বব্যাপী যে পরিমাণ পেইন্ট রফতানি হয়েছে তার বাজার মূল্য ছিল পাঁচ হাজার চার শ’ কোটি ডলার।

রাসায়নিক রঙ নিয়ে কথা হচ্ছিল বিরতির আগে। আসলে রঙ বলতে রঞ্জক কোনো পদার্থবিশিষ্ট এক ধরনের তরল বা অর্ধতরল মিশ্রণকে বোঝায় যা কোনো পৃষ্ঠতলের উপর পাতলা স্তরের মত প্রয়োগ করা হয়। পরে ওই স্তর শুকিয়ে একটি স্থায়ী শক্ত রঙিন প্রলেপে পরিণত হয়। সাধারণত প্রকৃতিতে প্রাপ্ত খনিজ রঞ্জক পদার্থের গুঁড়াকে তরল কোনও বাহক পদার্থ যাকে রঙের মাধ্যম বলে অভিহিত করা হয় তাকে আবদ্ধ করে রঙ প্রস্তুত করা হয়। তেল, পানি, আঠা জাতীয় পদার্থ, ইত্যাদি রঙের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এরপর এই রঙকে সাধারণত তুলির সাহায্যে কোনও সমতল পৃষ্ঠের ওপর প্রয়োগ করা হয়। রঙকে পানি বা অন্য কোনও দ্রাবক বা লুঘকারকের মাধ্যমে পাতলা করা যেতে পারে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ৩১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ