এপ্রিল ১২, ২০২১ ২১:১২ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা রাসায়নিক পণ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে ইরানের অবস্থান, অগ্রগতি ও তৎপরতা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি।

বিশেষ করে ইরানের পেইন্ট, রজন এবং আঠা ও টেপ শিল্পের ব্যাপারে খানিকটা ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে জ্ঞান-ভিত্তিক কয়েকটি ইরানি কোম্পানির কৃতিত্ব ও অর্জনের দিকেও ইঙ্গিত করার চেষ্টা করেছি। বলেছিলাম যে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প রাসায়নিক শিল্পের একটি শাখা।  

এখানে তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস জাতীয় বিচিত্র প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক কাঁচামাল থেকে বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করার পর নতুন রাসায়নিক পণ্য উত্পাদন করা হয়। মানব জীবনে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রভাবের আগে এই তেল এবং এ জাতীয় পেট্রো-কেমিক্যাল পণ্য সামগ্রী ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এসব প্রয়োজনীয় রাসায়নিকগুলো উদ্ভিদ এবং প্রাণীজ পণ্যগুলোর মাঝে বিভিন্ন পরিবর্তন ও রূপান্তর কিংবা বলা যেতে পারে ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হতো। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস কাঁচামাল হিসাবে মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো উত্পাদন করতে ব্যবহার করা হত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিকাশ এবং হাইড্রোকার্বনের ব্যবহারের প্রসারের তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ফলে হাজার হাজার পণ্য তৈরি হতে শুরু করেছে। ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের আগের তুলনায় বিপ্লব বিজয়ের পর আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই শিল্পটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিল

ইসলামী বিপ্লব বিজয় এবং ইরানের ওপর ইরাকের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের ফলে শিরাজ পেট্রোকেমিক্যাল প্রকল্পের মতো আধা-সমাপ্ত প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছিল। সুতরাং ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্সগুলির উত্পাদন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়েছিল। তবে যুদ্ধ সমাপ্তির সাথে সাথে বন্দর ইমাম কমপ্লেক্সের মতো ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল কেন্দ্রগুলির পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে যায়। এক দশকের সময়কালের মধ্যেই এই কেন্দ্রগুলি সক্রিয় হওয়ার সাথে সাথে দেশের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প পরিমাণগত এবং গুণগত মানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল। ইরানের জাতীয় অর্থনীতিতে তেলবিহীন পণ্য রফতানিতে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের গুরুত্বটা ছিল একেবারেই ভিন্ন রকমের। এই শিল্পটি ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের আগের তুলনায় বিপ্লব বিজয়ের পর আঞ্চলিক ও  আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিল।

জার্মানির অরভস গ্রুপের যোগাযোগ ও বাণিজ্য উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ওল্ফগ্যাংগ ক্লেকার ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প বিষয়ক তেরোতম আন্তর্জাতিক সম্মেলন আইপিএফে'র অবকাশে ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প সম্পর্কে একটি মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: "ইরান কয়েক দশক ধরে পেট্রো-কেমিক্যাল শিল্পের বাজারে মূল ভূমিকা পালন করে আসছে এবং এখন পর্যন্ত তারা তাদের সেই অবস্থানটি বজায় রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি আসন্ন বছরগুলিতে ইরান আরও অনেক ভাল অবস্থানে চলে যাবে। তেল উত্পাদন এবং পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য উৎপাদনের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ইরানের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য উৎপাদনে যেসব প্রতিযোগী রয়েছে তাদের সঙ্গে ইরানও গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী অবস্থানে টিকে থাকবে।

ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেসব বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে এই খাতটির ওপর। ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার দিকটি হলো পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পকে চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় তেল এবং গ্যাস সম্পদের বিশাল মজুদ রয়েছে ইরানে। তেল মজুদের দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ হলো ইরান এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্যাসেরও মজুদ রয়েছে ইরানে। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প অনেকটাই গ্যাসের উপর ভিত্তি করে বিকশিত হয়। বিশ্বের বহু দেশেই এই গ্যাসের মজুদ এবং সরবরাহের অভাব থাকায় ইরানের গ্যাসের সহজ প্রবেশাধিকার ঘটেছে বিশ্বব্যাপী। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে উপযুক্ত অবকাঠামো থাকার কারণে ইরানের এই শিল্পটির প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।

ইরানের বন্দর নগরী বন্দর আব্বাসে তেল পরিশোধনাগারটি প্রায় সাত শ হেক্টর ভূমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। পারস্য উপসাগরের উত্তর উপকূলীয় নীল জলের তীরে বন্দরআব্বাস শহরের সঙ্গে লাগোয়া উপকূলে গড়ে উঠেছে বন্দরটি। খুবই আধুনিক মানের তেল পরিশোধনাগার এটি। ইরানসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ঘন বা ভারি অপরিশোধিত ক্রুড অয়েল পরিশোধন বা রিফাইন করার জন্য অন্যতম এই বন্দরআব্বাস রিফাইনারি। পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলিতে যেখানে রিফাইনারিতে প্রয়োজনীয় জনবল সরবরাহের জন্য স্থানীয় জনশক্তির বাইরের লোকজন নিয়োগ দিতে বাধ্য, সেখানে ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের অন্যতম সুবিধা হল দক্ষ ও অভিক্ষ ইরানী জনশক্তির উপস্থিতি।

ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের সুবিধাগুলোর কথা। সেইসব সুবিধার কথা বিবেচনা করেই বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল খাতে বিনিয়োগ করার জন্য এগিয়ে এসেছে। বিখ্যাত কোম্পানি অ্যাটলাস কপকো'র অন্যতম পরিচালক অস্কার স্ন্যাবেল ইরানের তেরোতম আন্তর্জাতিক পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প সম্মেলন বা আইপিএফে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ইরানের এই শিল্প সম্পর্কে অকপটে বলেছেন: ইরানের পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের সুবিধার দিকটি কেবল তাদের বিশাল গ্যাস মজুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তাদের যে শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি রয়েছে পেট্রোকেমিক্যাল বিষয়ে-সেটাও উল্লেখযোগ্য।

এসবের বাইরেও রয়েছে পেট্রো-কেমিক্যাল পণ্য সামগ্রী সরবরাহে ইরানের ব্যাপক সুবিধা। ভৌগোলিক দিক থেকে সুবিধাগত এলাকায় ইরানের অবস্থানের কারণে এশিয়া-ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইরানের পেট্রো-কেমিক্যাল পণ্য পৌঁছানো খুব সহজ এবং সাশ্রয়ী। বিশেষ করে নৌ-রুটের চমৎকার ব্যবস্থা থাকায় এ ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ তৈরি হয়েছে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ