এপ্রিল ১৮, ২০২১ ২০:৩৫ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ 'গ্যাস' নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। দুই হাজার ষোলো সালে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাস উত্পাদনকারী দেশের মর্যাদায় অবস্থান করছে। আর সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ থাকার কারণে ইরান বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্বে এক শ আটাশি  ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার গ্যাস মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ইরানে গ্যাসের মজুদ প্রায় চৌত্রিশ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার।  তার মানে বিশ্বের মোট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের আঠারো শতাংশ রয়েছে ইরানে। এটি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে মজুদ গ্যাসের একান্ন  শতাংশ এবং ওপেকভুক্ত তেল রফতানিকারক দেশগুলির মোট গ্যাস মজুদের চল্লিশ শতাংশের সমান। ইরানের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর বেশ কয়েকটি যৌথ তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে ইরানের মোট আটাশটি যৌথ তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের মধ্যে আঠারোটি তেল ক্ষেত্র এবং চারটি গ্যাস ক্ষেত্র।

ইরানের সঙ্গে প্রতিবেশি দেশগুলোর যৌথ তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের কথা বলছিলাম। ইরানের এই প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কুয়েত, কাতার, আজারবাইজান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইরাক এবং তুর্কমেনিস্তানের সাথে যৌথ তেল ও গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। কয়েকটি যৌথ গ্যাস ক্ষেত্রের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এগুলো হলো সালমান- সৌদি আরব, মোবারক-সংযুক্ত আরব আমিরাত, হেনগাম-ওমান, বিপার্স- সৌদি আরব, গোম্বাদলি-তুর্কমেনিস্তান এবং দক্ষিণ পার্স-কাতার।  দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্রটি বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো স্বাধীন গ্যাসক্ষেত্র যা পারস্য উপসাগরের জলে ইরান ও কাতারের সীমান্তরেখার মধ্যে অবস্থিত। এই তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রটি বিশ্বের জনগণের দশ শতাংশের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

দক্ষিণ পার্স গ্যাস ক্ষেত্রটি কাতারে 'উত্তর গম্বুজ' হিসাবে পরিচিত। বিশাল এই গ্যাস ক্ষেত্র নয় হাজার সাত শ  বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।  বিশ্বের মোট গ্যাস মজুতের প্রায় আট শতাংশ রয়েছে এই গ্যাস ক্ষেত্রে।  যৌথ এই গ্যাস ক্ষেত্রটির তিন হাজার সাত শ বর্গকিলোমিটার ইরানের জলসীমায় অবস্থিত। তার মানে পুরো গ্যাস ক্ষেত্রের প্রায় অর্ধেক গ্যাসের মজুদ ইরানের অন্তর্ভুক্ত। ইরান এই দক্ষিণ পার্স যৌথ গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন পাঁচ শ মিলিয়ন ঘনমিটারেরও বেশি গ্যাস উত্তোলন করে বিশ্বের প্রাকৃতিক গ্যাস চাহিদা মিটিয়ে থাকে।

ইরানের ন্যাশনাল গ্যাস কোম্পানিটি ‌উনিশ শ ছেষট্টি সালের জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের গ্যাস শিল্প সম্পর্কিত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে অন্যতম নামকরা ও নির্ভরযোগ্য একটি কোম্পানি এটি।  এই কোম্পানিটি ইরানের গ্যাস শিল্পের প্রধান ট্রাস্টি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশের জ্বালানী খাতের নীতিমালা অনুসারে এই কোম্পানি বা সংস্থাটি প্রাকৃতিক গ্যাসের উন্নয়নের সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে বিচিত্র পরিকল্পনা হাতে নিয়ে অগ্রসর হয়েছে। বিশেষ করে মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ, আরাম ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, শিল্পের বিকাশ ঘটানো, পরিবেশ সংরক্ষণ করা এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সংরক্ষণ ও দেশের উন্নয়নে গ্যাসের সুবিধাদি বাড়ানোর বিচিত্র পরিকল্পনা নিয়ে এই কোম্পানিটি অগ্রসর হচ্ছে। এই পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বাণিজ্যিক এবং দেশীয় খাতে জ্বালানী সরবরাহ করা।

বর্তমানে ইরানের তিয়াত্তর হাজারেরও বেশি শিল্প-কল-কারখানা প্রয়োজনীয় শক্তি ও জ্বালানি চাহিদা মিটিয়ে থাকে এই গ্যাস দিয়েই। জাতীয় গ্যাস কোম্পানি তাদেরকে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ করে শিল্পগুলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে আসছে। শিল্পখাত ছাড়াও ইরানের শতকরা সত্তর ভাগেরও বেশি গ্রামীণ পরিবার এবং শতকরা পঁচানব্বুই ভাগ শহুরে পরিবার জাতীয় গ্যাস কোম্পানির গ্যাস সরবরাহের আওতাভুক্ত। ইরানে প্রতিদিন আশি কোটি ঘনমিটার গ্যাস উত্পাদন হয়। এই বিপুল পরিমাণ গ্যাস দেশের পেট্রোকেমিক্যাল ইউনিটসহ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গার্হস্থ্য শিল্প, তেলের কূপ, বাসাবাড়িতে ব্যবহারের বাইরেও প্রতিবেশী দেশসহ আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করা হয়।

বিরতির পর আবারও স্বাগত আপনাদের ইরানের পণ্য সামগ্রী অনুষ্ঠানের আজেকের আয়োজনে। গ্যাস ক্ষেত্র নিয়ে কথা হচ্ছিল বিরতির আগে। ইরানের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে আমরা কয়েকটির নাম উল্লেখ করতে পারি। যেমন অগাজারী, উত্তর পার্স, ত্ববনক, খৈয়াম, খঙ্গিরান, দলন, রোহম, সারখুন, সেফিড বগুন, শনুল, ফারু, কামনকুহ, কাঙ্গন, কিশ, মোবারক, নার, হলগন, হেনগাম, হামুন প্রভৃতি গ্যাস ক্ষেত্রের নাম উল্লেখযোগ্য। ইরানের তেল ও গ্যাসক্ষেত্রগুলি পারস্য উপসাগরের অগভীর জল থেকে শুরু করে ক্যাস্পিয়ান সাগরের গভীর জলাশয়ের পাশাপাশি উপকূলবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। তথ্যপঞ্জি অনুসারে বর্তমান বিশ্বে তেল ও গ্যাসের প্রচলিত মজুদের দিক থেকে ইরানই বৃহত্তম ও শীর্ষস্থানীয় দেশ। তবে অপ্রচলিত মজুদ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় গবেষণা এখনও চালানো হয়নি।

বলা হয়ে থাকে যে ইরানের কিছু অংশে প্রচলিত গ্যাস মজুদের চেয়ে গ্যাস হাইড্রেটের মজুদ বেশি। পাইপলাইন এবং এলএনজি সিস্টেমে ইরানি গ্যাস রফতানি করা হয়। ইরানের গ্যাস রফতানি নীতিমালায় প্রতিবেশী দেশগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। গ্যাস রফতানি ও পরিবহন করার সুবিধা এবং এর অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় প্রতিবেশী দেশগুলিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ইরান। বর্তমানে, তুর্কমেনিস্তান, তুরস্ক এবং আর্মেনিয়া ইরানীয় গ্যাস আমদানিকারকদের মধ্যে রয়েছে। এর বাইরে কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্জিয়া, ভারত ও আফগানিস্তানের মতো এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশও ইরান থেকে গ্যাস নেয়ার জন্য আগ্রহী।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ