জুন ১৫, ২০২১ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

গরম জলের কয়েকটি ঝরনার কথা বলেছি। আহরাম শহরের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে পরিচিত এই ঝরনাগুলো। ইরানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোটামুটি সারা বছর জুড়েই এই আহরামে লোকজন বেড়াতে আসে এসব ঝরনা উপভোগ করার জন্য।

দুই হাজার সাত খ্রিষ্টাব্দে তাঙ্গেস্তানের এই আহরাম ঝরনাকে ইরানের জল-চিকিৎসা অর্থাৎ হাইড্রোথেরাপি গ্রামের মডেল হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে। এসব নিদর্শনের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিশ্চয়ই ভালো লেগেছে আপনাদের। আজকের আসরে আমরা যাবো ইরানের অপর একটি প্রদেশের দিকে। এই প্রদেশটির নাম হলো ফার্স। ফার্স প্রদেশের কেন্দ্রীয় শহর হলো শিরাজ। দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় ইরানের ঐতিহাসিক এই প্রদেশে দেখার মতো বহু নিদর্শন রয়েছে।

ইরানের ঐতিহাসিক এই শহরের নাম অনেকেই শুনে থাকবেন। এটি খৃস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে ইরানের ফার্স প্রদেশের কেন্দ্রীয় শহরে পরিণত হয় । এই শিরাজ বেশ কয়েকটি মুসলিম রাজবংশের রাজধানী ছিল। শিরাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটা হলো এর অসাধারণ শৈল্পিক মহিমা । শৈল্পিক দিক বিচারে ইরানের একটি প্রধান কেন্দ্র হলো শিরাজ। প্রাকৃতিক সুষমা আর সৌন্দর্যে অতুলনীয় এই শহর বিশ্ববিখ্যাত কবিদের স্মৃতিচিহ্ন বুকে ধারণ করে সমৃদ্ধ হয়ে আছে। এখানকার দোয়েলের গান

 

আর বিচিত্র গোলাপের স্পর্শকাতর পাপড়ির ঘ্রাণ, আপনার বিষণ্ণ মনকে নিমিষেই করে তুলবে সতেজ সপ্রাণ।

শিরাজ প্রদেশটি ইস্পাহান থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, বু' শহর থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে, আবাদান থেকে ৬০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। আর ইরানের রাজধানী শহর তেহরান থেকে এর দূরত্ব হলো ৯৩৫ কিলোমিটার । শিরাজের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো । যে কোন শহর থেকেই সড়কপথ, আকাশপথ কিংবা রেলপথ ধরে যাওয়া যায়। শিরাজ বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় শহর। প্রায় বারো লক্ষ লোকের বসতি এখন এই শহরে । হাখামেনীয় রাজবংশের শাসনামলে এই শহরটি গড়ে ওঠে এবং শাসানীয় শাসনামলে শিরাজ ফার্স প্রদেশের প্রধান শহরে পরিণত হয়। তবে মোগল আক্রমণে শিরাজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । তারপরেও অতি দ্রুতই শহরটি পুনরায় গড়ে ওঠে এবং চিত্রকলা, স্থাপত্যকলা, ক্যালিগ্রাফি ও শিল্প- সাহিত্যের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয় । সাফাভী যুগে ইস্পাহান রাজধানী শহরে পরিণত হলে শিরাজ প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে থেকে যায়।

ইউরোপীয় পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা এসময় ব্যাপকভাবে শিরাজ ভ্রমণে আসে।এ সময়কালেই ফার্সের গভর্নর ইমাম কুলি খান বড়ো বড়ো বেশ কিছু প্রাসাদ এবং অলঙ্কৃত ও সুসজ্জিত কিছু ভবন তৈরি করেন। তবে শিরাজের পতন শুরু হয় আঠারো শতাব্দীর শুরু থেকে। আফগানদের আক্রমণ ছাড়াও এসময় শিরাজ অঞ্চলে বেশ কয়েক দফা ভূমিকম্প দেখা দেয়। পাশাপাশি আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও দেখা দেয়। ১৭৪৭ সালে যখন নাদের শাহকে হত্যা করা হয়, তখন শিরাজের অধিকাংশ ঐতিহাসিক ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর যান্দ রাজবংশের প্রথম শাসক করিম খানের শাসনামলে শিরাজ পুনরায় গড়ে ওঠে এবং পুনরায় ইরানের রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হয়।

এ সময় শিরাজের অধিকাংশ সুন্দর সুন্দর ভবন নতুন করে নির্মিত হয়েছে। আবার কোনো কোনো ভবনের সংস্কার করা হয়েছে। ১৭৮৯ সালে কাজার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আগা মোহাম্মদ খান ইরানের রাজধানী এই বিখ্যাত শহর থেকে স্থানান্তরিত করে তেহরানে নিয়ে আসে। দেশের রাজধানী থেকে প্রাদেশিক রাজধানীতে পরিণত হওয়ায় শিরাজের রাজনৈতিক মূল্য কিছুটা কমে গেলেও তার রাজকীয় রূপের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। যাই হোক পাঠক, আমরা শিরাজের রাজনৈতিক চড়াই - উৎরাইয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানলাম। এবারে দেখা যাক , এই শহরে দেখার মতো কী কী নিদর্শন আছে। সবকিছুর আগে যার নাম করতে হয় তা হলো ইরানের জগদ্বিখ্যাত দুই কবি হাফিজ এবং সাদির মাযার। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনার নাম করতে হয়।

দুই কবি হাফিজ এবং সাদির মাযারের পর গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনার নাম করতেই হয়। এগুলোর মধ্যে আর্গে করিম খানী বা করিম খান দুর্গ, মাসজেদে ভা'কীল, মাসজেদে শুহাদা, মাসজেদে আতীক, মাসজেদে নাসীরুল মুল্€Œক, মাদ্রাসা-ই খান, বাগে এরাম, কোরআন গেইট, খোদাখানা বা খোদার ঘর, শাহ শিরাকের সমাধিস্তম্ভ, দিলকুশা গার্ডেন, আফিফাবাদ গার্ডেন, পার্স মিউজিয়াম, শাহী চেরাগ, হাপ্ত তানান মিউজিয়াম, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শিরাজ শহরের বাইরেও রয়েছে চমৎকার এবং ঐতিহাসিক কিছু নিদর্শন। এগুলোর মধ্যে পৃথিবী বিখ্যাত হলো তাখতে জামশীদ বা পারস পোলিস। আরো রয়েছে পেসারগার্ড, নাকশে-ই রুস্তম, নাকশে-ই রজব ইত্যাদি।

শিরাজ কবির শহর, শিরাজ হাফিজের শহর । সেজন্যেই শিরাজ হয়ে উঠেছে শিল্প আর সংস্কৃতির শহর। মরানদীর উত্তর তীরে এই কবি শুয়ে আছেন প্রেমের মৌচাক খুলে রেখে। আর ভক্ত মৌমাছির দল প্রতিদিন প্রেমের টানে এখানে এসে হাজির হয়। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ