জুন ১৫, ২০২১ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

একসময় শিরাজ বিখ্যাত ছিলো তার রকমারী বাগ-বাগিচার জন্যে। এখন তার অধিকাংশই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অবশ্য মূল শহরে এখনো বেশ কটি পার্ক এবং বাগ-বাগিচা দেখতে পাওয়া যায়।

গ্রীষ্মের গরমে এই বাগ-বাগিচা বা পার্কগুলো সত্যিই প্রশান্তিদায়ক। এইসব বাগিচার মধ্যে বাগে-এরাম বেশ জনপ্রিয় । মূল শহরের উত্তর-পশ্চিমে এই পার্কটি অবস্থিত । বাগে এরামকে বলা হয় গার্ডেন অব প্যারাডাইজ বা স্বর্গ-বাগিচা। এটি বিখ্যাত তার বাগানের সৌন্দর্য এবং এর ভেতরকার সাইপ্রাস বৃক্ষের জন্যে।

বাগে এরাম  বা গার্ডেন অব প্যারাডাইজের ভেতরে রয়েছে চমৎকার একটি প্রাসাদ। কাজার শাসনামলের প্রাসাদ ছিলো এটি। অবশ্য বর্তমানে এই প্রাসাদটি শিরাজ ইউনিভার্সিটিকে দান করে দেয়া হয়েছে । সবুজ সাইপ্রাস বৃক্ষে পরিপূর্ণ বাগানের মাঝখানে প্রাসাদ । কী চমৎকার ব্যাপার। তদুপরি প্রাসাদটি নয়ন কেড়ে নেয়া সুন্দর। প্রাসাদের দেয়ালে মোজাইকের কারুকাজ যেন পুরোনো ইতিহাসের গল্প শোনায়। শোনায় শাহ আববাসের জীবনকথা। সেই শাহ আববাস যাকে সবাই চেনে একটা বিশেষ চেহারায়। যেই চেহারাটি দীর্ঘ গোঁফের কারণে স্বতন্ত্র এবং সহজেই পরিচিত। শান্ত সুনিবিড় সবুজের সমারোহপূর্ণ বাগানের ভেতরে বসে থাকতেই ভালো লাগবে আপনার। এখানকার আবহাওয়াটাও গ্রীষ্মে থাকে সহনীয়। তারপরও ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম নিতে পারেন কিংবা প্রয়োজনে লাঞ্চ করে নিতে পারেন। পাশেই আছে হোমা হোটেল। এখানে যে-কোনো রকমের নাস্তা বা খাবারের ব্যবস্থা আছে ।

বাগে এরামের পর যাওয়া যাক একটি পবিত্র এলাকায়। এর নাম হলো শাহ চেরাগ। শাহ চেরাগ হলো সাইয়্যেদ আমীর আহমদের মাযার শরীফ। আমীর আহমাদ হলেন আহলে বাইতের অষ্টম ইমাম রেযা ( আঃ ) এর ভাই। মুসলমানদের কাছে এই মাযার শরীফ যে কেবল অত্যন্ত পূত-পবিত্র স্থান, তা-ই নয় বরং আধ্যাত্মিকতার দিক থেকে এটি যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ পূণ্যভূমিও বটে। মজার ব্যাপার হলো মুসলমানদের প্রিয় ও সম্মানের স্থান হলেও এখানে কিন্তু অমুসলিমদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ নয়। মুসলমানরা এখানে আসে আধ্যাত্মিক মহিমায় ঋদ্ধ-সমৃদ্ধ হতে । নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই আসে তাঁদের প্রিয় ইমামযাদার মাযার যিয়ারত করতে।

ভক্তরা যে যার মতো করে নিজ নিজ অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করে । কেউ নামায পড়ে। কেউ আল্লাহর দরাবারে কান্নাকাটি করে। কেউবা বসে বসে কোরআন পড়ে। কেউবা বসে মগ্ন হয়ে যায় তাসবীহ পাঠে। আধ্যাত্মিক ঐশ্বর্য ছাড়াও এই মাযার শরীফের একটা স্থাপত্যমূল্য রয়েছে। যাঁরা স্থপতি বা স্থাপত্যকলা বিভাগের ছাত্র , তাদের জন্যে এই স্থাপত্য থেকে শেখার অনেক কিছু আছে। কেবল এই মাযার শরীফই নয় , বরং এই শিরাজের প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর সবই পুরাতাত্ত্বিক , ইতিহাসবিদ , স্থপতি ও ডিজাইনারদের জন্যে আকর্ষনীয় ও শিক্ষণীয় স্থান। সেজন্যে শিরাজকে বলা হয় হাউজ অব লার্ণিং বা শিক্ষালয়।

এই মাযারের ভেতর বাইরের যে কারুকাজ , তা এককথায় দেখার মতো। বিশেষ করে রাতের বেলা আলোকসজ্জায় সুসজ্জিত হবার পর দৃষ্টি ফেরানো যায়না। একবার একটু ভেবে দেখুন , এই নয়নাভিরাম মাযারটি যদি একটা লেইকের পাশে হয় , আর ঐ লেইকের উপর রাতের বেলা যদি তার সুসজ্জিত প্রতিচছবি পড়ে , তাহলে কেমন দেখায়। না কেবল ভাবা নয় সুযোগ পেলে একবার দেখে আসাই হবে আনন্দের ব্যাপার। এশিয়া ইনস্টিটিউট বা নরাঞ্জিস্তান শিরাজের আরেকটি দর্শনীয় স্থান। নরাঞ্জিস্তান ছিলো এর আসল নাম। খুবই সুন্দর এই বাড়িটি। এটি ছিলো এক বণিক পরিবারের বাড়ী। চারদিকে সুন্দর বাগান। বাগানের মাঝখানে এই বাড়িটি এক শৈল্পিক কৌশলে নির্মিত। ছাদের নীচে চমৎকার করুকার্যময় রঙীন কার্ণিশ। সামনের দিকটায় পাথরের আঁকাবাঁকা রঙীন স্ল্যাব আর কাঁচ-স্বচছ্ব মোজাইক দিয়ে নির্মিত সামনের রুমটি দেখেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়।

বর্তমানে এই বাড়িটি এশিয়া ইনস্টিটিউটের কার্যালয়। এশিয়া ইনস্টিটিউট এই বাড়িটির কাঠামো যথাসাধ্য অটুট রাখার চেষ্টা করেছে। এমনকি বাগানটিকেও তার আসল মূল ডিজাইনে বিন্যস্ত করেছে। এই ইনস্টিটিউটটি শিরাজের স্থাপত্য ও শিল্প-ঐতিহ্যে এক নতুন মাত্রার সংযোজন করেছে। এশিয়া ইনস্টিটিউটের পর এবার চলুন আরেকটি ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচিত হওয়া যাক। এই প্রতিষ্ঠানটির নাম হলো মাদ্রাসা-ই-খান। ফার্সের গভর্নর কুলি খান ১৬১৫ খ্রীস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি ধর্মীয় কলেজ। তবে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নঙায় এর কাঠামো নির্মিত হয়েছে। অবশ্য এর মূল কাঠামোর অনেকটাই এখন ভূমিকম্পের গ্রাসে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কেবল এর আটকৌণিক হল রুমটি এখনো তার প্রাচীন কাঠামোটি টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।

মাদ্রাসার প্রবেশ মুখেই এই হলটি দেখা যায়। পুরো ভবনটি এখন প্রাচীন নির্মাণ কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে তৈরী করা হয়েছে। মাঝখানে খোলা প্রাঙ্গন রেখে চারদিকে ছাত্রদের রুম তৈরী করা হয়েছে। বেলকুনিগুলো নীল এবং গোলাপি রঙের টাইলস দিয়ে সাজানো। ফুল পাখির বিচিত্র কারুকার্যময় এসব টাইলসের ব্যবহারে অসাধারণ শৈল্পিক হয়ে উঠেছে পুরো ভবন। ইরানের মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টির জন্যে শিরাজ খ্যাতিমান। শিরাজের যে বিষয়টি ভ্রমণকারী বা পর্যটকদের জন্যে জানার বিষয়, সেটা হলো-এখানকার লোকজন যথেষ্ঠ অতিথিপরায়ন। আপনাকে যেকোনোরকম সহযোগিতা করার জন্যে তারা নিবেদিতপ্রাণ।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ