আগস্ট ১৪, ২০২১ ১৬:১৯ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছিলাম যে ইরানের এই শিরাজ প্রদেশ এতো বেশি নিদর্শনবহুল যে ঘুরে ফিরে দেখতে গেলেও বহু সময়ের দরকার। সেই যে প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন তাখতে জামশিদ বা পার্স-পোলিস দেখতে গিয়েছিলাম ওই স্থাপনার প্রতিটি দিক নিয়েই আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন। কিন্তু এতো সময় তো আমাদের হাতে নেই। তাই আমরা সামান্য উল্লেখ করে যাচ্ছি মাত্র।

গত আসরের পরিসমাপ্তি টেনেছিলাম পার্সপোলিস থেকে আনুমানিক ছয় কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত নাকশে রুস্তামের উল্লেখ করে। নাকশে রুস্তাম হলো দারিয়ূস, জেরাক্সেস বা খাশাইয়ারশাহ প্রথম ও দ্বিতীয়, আর্থাজারেক্সেসের সমাধিস্থল। আপনারা হয়তো জানেন যে , জুরাথ্রুস্ট ধর্মাবলম্বীরা মারা গেলে তাদের লাশ শকুনকে খেতে দেয়া হতো। শকুন লাশের গায়ের সকল মাংস খেয়ে শেষ করার পর হাড়গোড় যা অবশিষ্ট থাকতো, সেগুলোকে মাটিতে পুঁতে রাখা হতো। পরে অবশ্য হাখামেনীয়ানরা যখন মিসর সফরে গেল , তখন সেখানে পিরামিড দেখে ভীষণভাবে আকৃষ্ট হলো। মিশর থেকে ফেরার পর তারাও তাদের রাজাদের জন্যে আকর্ষণীয় কিছু একটা করার ব্যাপারে সচেষ্ট হলো।

যাই হোক তাদের রাজাদের সম্মানে আকর্ষণীয় কিছু একটা তৈরী করতে গিয়ে যা করেছেন, তা আজো পুরাতাত্ত্বিক এবং স্থপতিদের জন্যে একটা ধাঁধাঁ, একটা বিস্ময় হয়ে রয়েছে। এছাড়াও সমাধির পেছনে কিউবিক বা ঘণক্ষেত্র আকৃতির প্রস্তরখণ্ড দেখতে পাওয়া যায়। এটা যে কী , তা আজো কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। কারো মতে এটা প্রাচীন অগ্নিমন্দির। তবে তারাও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো যে, এই যে প্রাচীন নিদর্শন দেখতে পাচ্ছেন শিরাজে পুরো ইরান জুড়েই আপনি অত্যাশ্চর্য আর্কিটেকচার এবং দুর্দান্ত সব ব্যয়বহুল সজ্জা সহ সুন্দর সুন্দর বাড়ি দেখতে পাবেন। এইসব বাড়ির বেশিরভাগই প্রাচীন কালে ধনী পরিবার এবং সরকারী সহযোগীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেইসব ঐতিহাসিক বাড়ি এখন পাবলিক যাদুঘরে পরিণত হয়েছে।

"কাওয়াম হাউস বা নরাঞ্জেস্তান কাওয়াম" শিরাজের এ ধরনের বিল্ডিংগুলির অন্যতম সেরা উদাহরণ। এই ইমারতটি ইরানি উদ্যান বাড়ি বা বাগানবাড়ির অন্যতম সুন্দর বাড়ি। এই বাড়িটির নাম থেকেই বোঝা যায় কমলা গাছের সারিময় আঙ্গিনা রয়েছে এই বাড়িতে। বাড়িটি কাজার শাসনামলের কাওয়াম পরিবার এবং হাজ ইব্রাহিম খান কালান্টারের সম্পত্তি। শিরাজের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসাবে এই বাগানবাড়ি উল্লেখযোগ্য।

বিশেষ করে কাওয়াম হাউসের সবচেয়ে গৌরবময় অংশ এর বিশাল ঝুল বারান্দা। দুটি সমন্বিত পাথরের কলামের ওপর ঝুলে থাকা এই বারান্দায় রয়েছে একটি সমতল ও সুসজ্জিত ছাদ। জান্দিয়া শাসনামলের কারুকাজের সুস্পষ্ট নিদর্শন লক্ষ্য করা যাবে এই বাড়ির সবৃত্র। এই ইমারতের নিচতলাটি এখন যাদুঘরে পরিণত হয়েছে। যাদুঘরে যেসব প্রাচীন চিত্রকর্ম, প্রাচীন জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে সে সবের মধ্যে রয়েছে প্রাচীন কিছু তৈজসপত্র, খুব পুরানো কিছু মুদ্রা, ফ্রেমে বাঁধানো ছবির কিছু ক্যানভাস ইত্যাদি। এইসব প্রাচীন সংগ্রহের একটি নরান্জেস্তান কাওভাম যাদুঘরের বাগানে রাখা হয়েছে। যাদুঘরের কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন তিন হাজার বছর আগেকার। যাদুঘরের কিছু কিছু জিনিসপত্র বিখ্যাত ইরানোলজিস্ট অধ্যাপক পোপ সংগ্রহ করেছেন ।

নরান্জেস্তান কাওয়ামের পশ্চিম অংশে একটি সুন্দর ও দর্শনীয় ভবন রয়েছে। বাড়িটি "জিনাতুল-মুলক বা জিনাত আল-মুলুকের বাড়ি" নামে পরিচিত। কাজার শাসনামলের এই বাড়িটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল বারো শ নব্বুই হিজরিতে। আলী মোহাম্মদ খান কাওয়াম-উল-মুলক দ্বিতীয় নির্মাণ কাজটি শুরু করেছিলেন। পরে ১৩০২ হিজরীতে তৃতীয় মোহাম্মদ রেজা খান কাওয়াম-উল-মুলকের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। চতুর্থ কাওয়াম-উল-মুলকের মেয়ে মিস জিনাতুল মুলক কাওয়ামি এই রাজকীয় ভবনে বাস করতেন। এ কারণেই তার নামের সঙ্গে মিল রেখে ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে 'জিনাতুল-মুলক বা জিনাত আল-মুলুকের বাড়ি'।

প্রাথমিকভাবে এই বাড়িটি ছিল কাওয়ামদের এবং তাদের পরিবারগুলোর আবাসস্থল। বাড়িটির বেসমেন্টের একটি দরজা দিয়ে কাওয়াম নারানজেস্তানে চলে যাবার ব্যবস্থা ছিল। জিনাত ল-মুলক হাউসের স্থাপত্যশৈলী কাজার শাসনামলের স্থাপত্য শিল্পের একটি চমৎকার উদাহরণ। করিডোর অতিক্রম করতে করতে আপনি একটি বিশাল আঙ্গিনায় প্রবেশ করবেন। এই আঙ্গিনায় প্রচুর কমলা গাছ দেখতে পাওয়া যাবে। সারি সারি কমলা গাছের সৌন্দর্য প্রতিটি দর্শকের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। এই আঙ্গিনাতেই রয়েছে চমৎকার পানির চৌবাচ্চা। সুসজ্জিত এই চৌবাচ্চার উপস্থিতি বাগানের পরিবেশকে যেমন সতেজতা দিয়েছে তেমনি দিয়েছে বিশুদ্ধতাও।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ