সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১ ০২:৫৩ Asia/Dhaka

করোনার মারণ থাবায় যখন নাজেহাল বিশ্ব তখন বাংলাদেশেও করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বর। বলাচলে উদ্বেগজনক অবস্থায়। বিষয়টি নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করব।

সুপ্রিয় শ্রোতা/ পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক অনুষ্ঠান স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা ভালো আছেন। আমাদের স্বাস্থ্যকথার আসর সমসাময়িক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা ও সে বিষয়ে পরামর্শের জন্যেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের আলোচনা নিয়েই নির্মিত হয়। আর আজকের আসরে আমরা কথা বলব-ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে। করোনার মারণ থাবায় যখন নাজেহাল বিশ্ব তখন বাংলাদেশেও করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির সাথে পাল্লা দিয়ে  বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বর। বলাচলে উদ্বেগজনক অবস্থায়। তো ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের সাথে অতিথি হিসেবে আছেন-অ্যাসিসটেন্ট সার্জন ডা. মো. আমির হোসেন। তিনি ঢাকার ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার মহাখালীতে কর্তব্যরত। তো ডা. আমির হোসেন রেডিও তেহরানের স্বাস্থ্যকথার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান: ডাক্তার আমির হোসেন আপনার কাছে প্রথমে একটু জেনে নিই ডেঙ্গু জ্বর আসলে কি?

এডিস মশা

ডা. আমির হোসেন: এটি একধরনের জ্বর। এই জ্বরটি ডেঙ্গি নামক একধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আর এই জ্বরটি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়ায়। আর মাধ্যম হচ্ছে এডিস নামক একধরনের মশা।এই মশার কামড়ে ডেঙ্গি হয়। ডেঙ্গি ভাইরাসে আক্রান্ত একজন মানুষের শরীরে এই জীবাণুটা থাকে। এরপর এডিস মশাটি যখন আক্রান্ত মানুষকে কামড়ায় তখন যে রক্তটা চুষে নেয় তখন জীবণুটা মশার পেটের মধ্যে চলে যায়। ঐ মশাটি যখন একজন সুস্থ মানুষকে কামড় দেয় তখন ঐ সুস্থ মানুষটিও ডেঙ্গু ভাইরাসটি চলে য়ায় এবং ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। ফলে ডেঙ্গু জ্বরটি একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। সাধারণত রোগীর শরীরে উচ্চমাত্রার জ্বর থাকে। সহজভাবে বললে এটিই ডেঙ্গু জ্বর।    

রেডিও তেহরান: ডক্টর আমির হোসেন, আপনি বললেন, ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর এবং এটি এডিস মশার কামড় থেকে হয়। তো আমরা জানি বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে নানারকম জ্বর হয়। আর এখন তো বাংলাদেশে বর্ষাকাল-তো মৌসুমি জ্বরজারি যেমন ধরুন ঠান্ডা জ্বরও তো হতে পারে- কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা তা কিভাবে বোঝা যাবে?

ডা.আমির হোসেন: দেখুন,আসলে ডেঙ্গু জ্বরের আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারব এটি অন্য কোনো জ্বর নয়; এটি ডেঙ্গু জ্বর।

ডেঙ্গু জ্বর

প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, জ্বরের মাত্রাটা অনেক বেশি থাকে। ১০১ থেকে ১০৩ ডিগ্রিরও বেশি (ফারেনহাইট) জ্বর থাকতে পারে। এত উচ্চমাত্রার জ্বরের সাথে সাথে খুব মাথা ব্যথা থাকে,শরীরে ব্যথা থাকে,গিরায় গিরায় ব্যথা থাকে, চোখের পেছনে ব্যথা থাকে। এরসাথে সাথে শরীরে লাল লাল ছোপ ছোপ দাগ থাকে। বমি বমি ভাব থাকে, বমি হতেও পারে এবং পেটেও ব্যথা থাকে। দুই থেকে সাতদিন জ্বর থাকলে এবং এসব সিমটম থাকলে বোঝা যাবে এটা ডেঙ্গু জ্বর। 

স্বাভাবিক যে ফ্লু কিংবা সিজনাল জ্বর হয় তাতে এত উচ্চ মাত্রার জ্বর হয় না। জ্বর থাকে সামান্য সাথে সর্দি-কাশি থাকে। এসব পার্থক্য থেকে আমরা বুঝতে পারি এটি ডেঙ্গু জ্বর নাকি সিজনাল জ্বর। 

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! আপনারা ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে মূল্যবান আলোচনা শুনছেন। একটু বিরতির পরই ফিরছি-আমাদের সাথেই থাকুন।

আবারও ফিরলাম শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা, বিরতির আগে ডা. আমির হোসেন আপনি বলছিলেন ডেঙ্গু জ্বর ও মৌসুমি জ্বর চেনার উপায়। একইসাথে আরেকটি বিষয় একটু জেনে নেব-জ্বর হলে এ দুটোর বাইরে করোনা জ্বর কিনা সেটা কিভাবে বুঝব?

ডা.আমির হোসেন: দেখুন,জ্বর হলে ডেঙ্গু কিংবা সিজনাল জ্বরের বাইরে করোনা জ্বর কিনা সেটা বুঝতে পারার জন্যও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য সিমটম আছে।

করোনা জ্বর

করোনা জ্বরের ক্ষেত্রে সাধারণত অতি উচ্চ মাত্রার জ্বর হয় না। মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে করোনা জ্বর হলে মাথা ব্যথার পরিমাণটা বেশি থাকে। করোনা জ্বরের ক্ষেত্রে শ্বাসনালী বা ফুসফুসজনিত সমস্যা যেমন কাশি-শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। অন্যদিকে ডেঙ্গু জ্বরে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা কিংবা কাশি সাধারণত দেখা যায় না।

করোনা জ্বর হলে এর সাথে সাথে ডায়ারিয়া থাকতে পারে। বমিও থাকতে পারে।

এসব বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা সাধারণত বুঝতে পারি ডেঙ্গু জ্বর নাকি করোনা জ্বর অথবা সিজনাল ফ্লু। তবে যেহেতু এটা প্যানডেমিক সময় ফলে যে কোনো ধরনের জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি এসব হলে ডেঙ্গু এবং করোনা পরীক্ষা করানো ভালো। 

রেডিও তেহরান: আচ্ছা ডক্টর- করোনা,ডেঙ্গু এবং সিজনাল ফ্লু তিনরকম জ্বরই কি একসাথে হতে পারে?

ডা.আমির হোসেন:জ্বি দুইরকম জ্বর একসাথে হতে পারে। দেখা গেছে কারও কারও ডেঙ্গুও হয়েছে আবার করোনাও হয়েছে। এটি সম্ভব, হতে পারে। 

রেডিও তেহরান: ডেঙ্গু জ্বরের কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে তো নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষাটা কিভাবে করা হবে? 

ডা.আমির হোসেন:ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষার জন্য সাধারনত রক্ত নেয়া। রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়। জ্বরের প্রথম তিন দিনের জন্য আমরা একটা পরীক্ষা করে থাকি। সেটি হচ্ছে –এনএস ননসেক্টরাল। তিনদিন পার হয়ে যাওয়ার পর পঞ্চমদিনে আমরা সাধারণত অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করি। কারণ তিন দিনের পর থেকে নন…… এটা কমতে থাকে। সাধারণত আর থাকে না। ফলে পঞ্চম দিনে আমরা আইজিএন অ্যান্টিবডি দেখতে পারি।

তবে আমাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জ্বরের ডিউরেশন-অর্থাৎ কবে থেকে জ্বর শুরু হয়েছে, কতদিন থেকে জ্বর সেটি সঠিকভাবে বলতে হবে। ধরুন ৫/৬ দিন জ্বরে ভুগছেন অথচ বলো হলো এইমাত্র ২/৩ জ্বর হয়েছে। তাতে কি হবে ডাক্তার স্বাভাবিকভাবে যে পরীক্ষাটা দেবেন তাতে ফলাফল কাঙ্খিত পাওয়া যাবে না।কারণ ৫/৬ দিন জ্বরে ঐ পরীক্ষার ফলাফল সাধারণত নেগেটিভ আসে। তাতে সঠিকভাবে কিন্তু ডায়াগনোসিস কিন্তু হবে না। ফলে একটা সমস্যায় পড়তে পারেন রোগী। সেজন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে জ্বরের সময়কালটা সঠিকভাবে জানাতে হবে। এতে রোগ নির্ণয় করাটা সহজ হবে। 

ডাক্তার,মো. আমির হোসেন আপনাকে আবারও অশেষ ধন্যবাদ আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য। 

ডা.আমির হোসেন: ধন্যবাদ আপনাকে এবং ধন্যবাদ সবাইকে।

ব্যায়াম করা জরুরি

শ্রোতা/পাঠক বন্ধুরা! আপনারা এতক্ষণ ডেঙ্গু জ্বর,এর লক্ষণ,কিভাবে পরীক্ষা করা হবে এবং ডেঙ্গু ও অন্যান্য জ্বরের পার্থক্য নিয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মো আমির হোসেনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শুনলেন। আগামী সপ্তার আসরও শুনতে ভুলবেন না। আর ভুলবেন না করোনার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি। মাস্ক পরবেন,সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন সাবান পানি অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত পরিস্কার করবেন সাথে ব্যায়াম করবেন ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে গুটিয়ে নিচ্ছি আজকের আসর।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৫

ট্যাগ