সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১ ১৭:১৯ Asia/Dhaka

জীবনের সব তৎপরতা আর কর্মসূচিকে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার আওতাধীন রাখা খুবই জরুরি এবং ইসলাম এ বিষয়টিকেও খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

আর এ বিষয়টি শেখার এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হল পরিবার। ধর্মীয় নীতিমালা এবং সামাজিক আচার-আচরণ ও প্রথার আলোকে শিশু ও কিশোরদেরকে দায়িত্বশীল, সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করানোর প্রাথমিক ও অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হল পরিবার। 

মানুষের জীবনে নানা সমস্যা ও অচলাবস্থার অন্যতম কারণ হল শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার অভাব। জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার রয়েছে অনেক সুফল। সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত জীবন মানুষের সময়কে নষ্ট হতে দেয় না ও জীবনের নানা লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হয়। মানুষকে তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধাপে ধাপে এগুতে হয়। কারণ মানুষ একই সময়ে অনেক কাজ সম্পন্ন করতে পারে না। তাই খুব তড়িঘড়ি করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বহু কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করা উচিত নয়। উদ্দিষ্ট কাজগুলোর মধ্যে যে কাজগুলো বেশি জরুরি আগে সেসব সম্পন্ন করতে হবে। আর কোন্‌ কাজগুলো কখন করতে হবে তার সময় নির্ধারণ করে নেয়া উচিত।

মানুষের কিছু কাজ থাকে যা ব্যক্তিগত ও কিছু কাজ আবার সামাজিক। এসব কাজের জন্যই উপযুক্ত সময় বাছাই করা উচিত যাতে সবাই তা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারে।  শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে এটা শেখাতে হবে যে খেলাধুলা, খাওয়া-দাওয়া, ইবাদত ও পড়াশুনা এসব কিছুর জন্যই থাকতে হবে সুনির্দিষ্ট সময় এবং কর্মসূচি। ব্যক্তিগত কাজে সুশৃঙ্খল হওয়া হঠাৎ করে নেয়া কোনো সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সম্ভব হয় না। শিশু-কিশোরদেরকে এ ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে তা তাদের মধ্যে সারা জীবনের জন্য রুটিন বা বদ্ধমূল বিষয় হয়ে যায়।

শিশু ও কিশোরদেরকে দায়িত্বশীল, সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত করানোর কাজ বাবা-মা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। শিশুরা জন্ম থেকেই নিয়মানুবর্তিতা শিখে আসে না। এ জন্য তাদের দরকার দীর্ঘমেয়াদি ও ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ। এ ব্যাপারে তাদেরকে যত বেশি অনুশীলনে ব্যস্ত রাখা যাবে ততই তারা উন্নতি করবে। নিয়মানুবর্তিতা শেখানোর উদ্দেশ্য হল তারা যেন নিজ জীবনকে পরিচালনার মত যোগ্যতা অর্জন করে। নিয়মানুবর্তিতা শিশু কিশোরদেরকে নতুন ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে শেখায় এবং তাদের মধ্যে যৌক্তিক চিন্তাভাবনার বিকাশ ঘটায়। নিয়মানুবর্তিতা শিশু কিশোরদেরকে যথাসময়ে সঠিক পথটি বেছে নেয়ার যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ দেয়।

শিশু-কিশোর সন্তানদেরকে নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে গিয়ে কোনো কোনো পরিবার খুব কঠোর আচরণ করে আবার কোনো কোনো পরিবার তাদেরকে লাগামহীন স্বাধীনতা দিয়ে রাখে এবং কোনো কোনো পরিবারের প্রধানরা এক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করেন। এই শেষোক্ত শ্রেণীর অভিভাবকরা শিশু-কিশোর সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ও তাদের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখেন। এক্ষেত্রে ওই অভিভাবকরা নিজ শিশু-কিশোর সন্তানের বয়স ও ক্ষমতার বিষয়টি মাথায় রেখে নিয়মানুবর্তিতার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। শিশু-কিশোরদের মধ্যে যারা খুব ছোটো তারা কেবল খেলতেই অভ্যস্ত। তারা যে সব সময় নিজের সব খেলনা গুছিয়ে রাখবে ও নিজ ঘর পরিপাটি করে রাখবে সেই প্রত্যাশা তাদের কাছ থেকে করা উচিত নয়। তাই খুব কঠোরতা দেখাতে গেলে তারা নিয়মমাফিক তো হবেই না বরং আরও অগোছালো হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে যেসব অভিভাবক সন্তানদেরকে সব সময় সব কিছুতে যেমন খুশি তেমন চলার সুযোগ দেন তারাও নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে ব্যর্থ হন। কারণ তারা নিয়মানুবর্তিতার এবং গোছানোর ও পরিপাটি হওয়ার কোনো কাজই শিশুকে করতে দেন না। এসব কাজ হয় নিজে করেন অথবা অন্য কাউকে দিয়ে করান। ফলে শিশু কিশোর সন্তানরা এসব বিষয়ে মনোযোগী হতে পারে না। এই শ্রেণীর বাবা-মা বা অভিভাবক মনে করেন যে শিশু-কিশোররা বড় হলে এমনিতেই নিয়মানুবর্তিতা শিখবে -তাই তাদের ওপর কোনো কাজই চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। আর এ ধরনের নীতির পরিণতিতে শিশু-কিশোররা হয়ে পড়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন।

অন্যদিকে সচেতন ও মধ্যপন্থী অভিভাবকরা শিশু-কিশোর সন্তানদের সঙ্গে সব সময় যৌক্তিক ও সর্বোত্তম এবং দৃঢ়তাপূর্ণ আচরণ করে থাকেন। তবে তারা কখনও নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে শিশু-কিশোর সন্তানকে মারধোর করেন না। বরং নিজেরাই শিশু-কিশোর সন্তানদের জন্য নিয়মানুবর্তিতার আদর্শ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকেন। তারা এসব বিষয়ে কঠোরতা না দেখিয়ে বয়স ও ক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখেন। ইসলাম ধর্মও এ ধরনের মধ্যপন্থা অবলম্বনেরই পরামর্শ দেয়। ইসলাম পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করতে বলে। শিশু-কিশোর সন্তানদের ওপর অযৌক্তিক কড়াকড়ি আরোপ তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর পথে বাধা হয়ে উঠতে পারে বলে ইসলাম তা সমর্থন করে না। সন্তানদের ওপর সাধ্যাতীত কিছু চাপিয়ে দেয়া হলে তারা বিপথগামীও হতে পারে। আবার তাদেরকে লাগামহীন স্বাধীনতা দেয়াকেওে ইসলাম সমর্থন করে না।

শিশু-কিশোররা হচ্ছে অনুকরণ-প্রিয়। তাই তাদেরকে সুশৃঙ্খল করতে হলে আগে বাবা-মাকেই এক্ষেত্রে আদর্শ হতে হবে। অভিভাবক যদি নিজের কাপড়চোপড় গুছিয়ে না রাখেন ও গাড়ি চালানোর সময়ও নিয়ম মেনে না চলেন তাহলে সন্তানরাও এক্ষেত্রে বড়দেরই অনুসারী হবে। শিশু-কিশোররা যে বড়দের থেকেই সব কিছু শেখে এ বিষয়টি সব বাবা-মাকে মনে রাখতে হবে।

শিশু-কিশোরদেরকে কোনো বিষয় একবার বলে দিলেই তারা তা সব সময় মনে রাখবে এমন প্রত্যাশা করাও ঠিক নয়। তাই নিয়মানুবর্তিতা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো মাঝেমধ্যেই তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে হবে। শিশুর যখন অনেক বেশি খেলনা থাকে তখন সেসব পরিপাটি ও গুছিয়ে রাখা তার একার পক্ষেও সম্ভব নয়। তাই খেলা শেষে এ বিষয়ে তাকে সহায়তা করতে হবে এবং বলতে হবে যে: আসো আমরা সবাই মিলে আগের সব খেলনাগুলো গুছিয়ে ফেলি এবং এরপর নতুন খেলনাগুলো দিয়ে খেলা শুরু করব।

জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-ভিত্তিক নিয়মানুবর্তিতার প্রশিক্ষণ ও তাতে অভ্যস্ত করানো শিশু-কিশোর সন্তানদেরকে দেয় টেনশনমুক্ত জীবন ও প্রশান্তি এবং তা ভবিষ্যৎ সৌভাগ্য অর্জনের পথকে করে প্রশস্ত।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/ ০৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ