নভেম্বর ১২, ২০২১ ২৩:৪২ Asia/Dhaka

১৯৪৭ সালে সুইজারল্যান্ডের প্রকৌশলী কার্ল এদুয়ার্দ গ্রুনে প্রথম গথার্ড বেস সুড়ঙ্গ বা টানেল নির্মাণের ধারণা দেন।

এর বহু বছর পর ১৯৯৮ সালে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের অর্থায়ন নিয়ে সেদেশে ভোটাভুটি হয়। তখন ৬৪ শতাংশ সুইস ভোটার এ প্রকল্পের পক্ষে মত দেন। গথার্ড বেস সুড়ঙ্গ সুইজারল্যান্ডের আল্পস পর্বতমালার মধ্য দিয়ে নির্মিত একটি রেল সুড়ঙ্গ। এটি ১ জুন ২০১৬ সালে খোলা হয়। নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে। খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। কাজ করেছেন প্রায় ২ হাজার ৪০০ শ্রমিক। এটিই এখনও বিশ্বের দীর্ঘতম এবং গভীরতম সুড়ঙ্গ রেলপথ বা টানেল। নির্মাণ ক্ষেত্রে এটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হলেও যেসব আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই টানেলটি উদ্বোধন করা হয়েছে সেগুলো মোটেই স্বাভাবিক ছিল না। হাফপোস্ট পত্রিকা এক প্রতিবেদনে ঐ অনুষ্ঠান সম্পর্কে লিখেছে,বিশ্বের দীর্ঘতম এবং গভীরতম সুড়ঙ্গ রেলপথ বা টানেল বিস্ময়কর প্রক্রিয়ায় উদ্বোধন করা হয়েছে।                                                       

টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউরোপের কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এই উৎসব শুরু হয়েছিল শয়তানের উপাসনার মধ্যদিয়ে। সেখানে শয়তান পূজারীরা অদ্ভুত সব আচার-আচরণ প্রদর্শন করে। বৃহত্তম সুড়ঙ্গ রেল পথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শয়তান পূজারীদের দাপটে অনেকেই বিস্মিত হন। অবশ্য পাশ্চাত্যের অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শয়তান পূজারীদের প্রদর্শনী সম্পর্কে বিস্তারিত খবর ও প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। কেবল কয়েকটি ওয়েবসাইটকে ঐ অদ্ভুত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিষয়ে কন্টেন্ট অ্যানালাইসিস করতে দেখা গেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক ব্যক্তি ছাগলের বেশধারণ করে হাজির হয়। প্রথম দিকে দেখানো হয় সে মারা গেছে, পরবর্তীতে সে বেঁচে ওঠে। এরপর তাকে পূজা করা হয় এবং গোটা বিশ্বের রাজা হিসেবে তার মাথায় মুকুট পরানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী মাইকেল স্নাইডার ঐ অনুষ্ঠানে ছাগলের বেশধারী ব্যক্তির উপস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন,পাশ্চাত্যকে এক অন্ধকার ঢেকে দিচ্ছে। বর্তমান যুগের নেতারা এতটাই ঔদ্ধত্য হয়ে গেছেন যে,তারা আমাদের ওপর দুর্দশা চাপিয়ে দেওয়ার ইচ্ছেটা আর গোপনও করছেন না। 

বর্তমানে বিশ্বের নানা প্রান্তে মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের কথা বলে নানা ধরণের মত ও গোষ্ঠীর উৎপত্তি ঘটেছে। এ ধরণের মতবাদ ও গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার পর কিছু দিন তা নিয়ে ব্যাপক মাতামাতি হয়,এরপর যখন এসব মত ও গোষ্ঠীর অসারতা প্রমাণিত হয় তখন তা ক্রমেই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। তবে এর মাধ্যমে যারা প্রভাবিত হয়,তাদের ওপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে যায় অনেক দিন। শয়তানবাদ বা স্যাটানিজম এ ধরণেরই একটি চিন্তাধারা। এই ধারার অনুসারীরা যৌনতা ও মিউজিককে এ ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় উপাদান হিসেবে ব্যবহার করছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ক্রমেই শয়তান পূজারীদের প্রভাব ও দাপট বাড়ছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলো ট্রান্স-মর্ডানিজমে প্রবেশের একই সময়ে শয়তানবাদে বেশি করে ঝুঁকছে।  পাশ্চাত্য এ পর্যন্ত মর্ডানিজম ও পোস্ট মডার্নিজম পর্যায় অতিক্রম করে এখন ট্রান্স-মর্ডানিজমের যুগে প্রবেশ করছে। মর্ডানিজম বা আধুনিকতাবাদের পর্বে ঐশী বিষয়াদির পরিবর্তে বস্তুবাদ বেশি গুরুত্ব পেয়েছে এবং গির্জার স্থান ও মর্যাদায় পরিবর্তন এসেছে। সেখানে মানব কেন্দ্রিকতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

পোস্ট মর্ডানিজম বা উত্তর আধুনিকতাবাদের পর্বে এসে মানব কেন্দ্রিকতার চেয়ে আত্মকেন্দ্রিকতা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এরপর  ট্রান্স-মর্ডানিজমের পর্বে এসে পাশ্চাত্যের মানুষ জীবনযাপনের নিম্নতম পর্যায়ে পতিত হচ্ছে। শয়তান‌বাদ বা শয়তানের উপাসনার মতো অদ্ভুত সব বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে তাদের কাছে।  কেউ কেউ মনে করেন, উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পাশ্চাত্যে শয়তানবাদ বা শয়তানের উপাসনার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ‘বিশ্বের সংস্কৃতি ও ধর্ম’ নামক বইয়ের লেখক জন আর হিনেল্‌য মনে করেন, উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীর কিছু প্রভাবশালী সদস্য লন্ডনে স্যার ফ্রান্সিস ডাশউডের নেতৃত্বে হেলফায়ার ক্লাব নামক শয়তান পূজারী গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। এরপর থেকে লন্ডন ইউরোপীয় শয়তান পূজারীদের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। এছাড়া ১৯৬৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে শয়তানের গির্জা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন অ্যান্টন ল্যাভি। এই গির্জা প্রতিষ্ঠাকেই আমেরিকায় শয়তানের পূজারীদের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের সূচনা হিসেবে গণ্য করেন কেউ কেউ। 

বর্তমানে আমেরিকায় শয়তানের পূজা করার কেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। তবে নিউ ইয়র্ক শহরেই শয়তান পূজারীদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। শয়তান পূজারীদের তৎপরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কয়েক বছর আগে তারা মার্কিন শিক্ষা দপ্তরের কাছে বড় ধরণের এক আবেদন পেশ করেছে। এই আবেদনে বলা হয়েছে,প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শয়তান পূজা সংক্রান্ত শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সম্প্রতি আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ইউটার ৩৫ বছর বয়সী শয়তান পূজারী এক শিক্ষকের কর্মকাণ্ড দেশটির অভিভাবকদেরকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ফেলেছে। ব্রায়ান আলতিস নামের ঐ শিক্ষক সাড়ে তিনশ'শিক্ষার্থীকে প্রতারিত করে শয়তান পূজার দিকে নিয়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক ছাত্র পুলিশকে বলেছে, ঐ শিক্ষকের মাধ্যমে সে শয়তান পূজারীদের গ্রুপে যোগ দিয়েছিল এবং বাধ্য হয়ে এমন অনেক কাজ করেছে যা ভাবা যায় না। ঐ কিশোর জানিয়েছে,শয়তান পূজারিরা তাকে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছিদ্র তৈরি করতে বাধ্য করেছে, অসংখ্য ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়তে প্ররোচিত করেছে এমনকি সে শয়তান পূজারীদের প্ররোচনায় মানুষের মল খেয়েছে।  

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দু'টি মসজিদে হামলার কথা নিশ্চয় সবারই মনে আছে। ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ ক্রাইস্টচার্চের দু'টি মসজিদে বন্দুক নিয়ে গুলি করতে শুরু করে এক সন্ত্রাসী। গুলি করার দৃশ্য সে সরাসরি অনলাইনে প্রচার করে। জুমার নামাজের সময় আল নূর মসজিদে সে প্রথম হামলা করে। এরপর গাড়ি চালিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের লিনউড মসজিদে গিয়ে আবার হামলা করে আরও মানুষ হত্যা করে। দুই মসজিদে হামলায় ৫১ জন নিহত ও বহু মুসল্লি আহত হন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ব্রেন্টন টেরান্ট নামের ঐ নৃশংস হামলাকারীও শয়তান পূজারী। নিউজিল্যান্ডের আদালতে তার একটি ছবি থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, এই খুনি, শয়তান পূজারী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত। আদালতে সাংবাদিকেরা যখন তার ছবি তুলছিল তখন সে তার হাত ইশারা করে তিনবার সিক্স সংখ্যাটি প্রদর্শন করে। সিক্স সিক্স সিক্স হচ্ছে শয়তান পূজারীদের সাংকেতিক চিহ্ন। শয়তান পূজারীরা তাদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের জন্য নানা ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে থাকে। এটি হলো এসব সাংকেতিক চিহ্নেরই একটি। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ০৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ