মহানবীর (সা) রিসালাতের আনুষ্ঠানিক মিশন শুরুর ১৪৫৮ তম বার্ষিকী
(last modified Wed, 07 Feb 2024 04:23:30 GMT )
ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২৪ ১০:২৩ Asia/Dhaka

সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। 'মহানবীর (সা) রিসালাতপ্রাপ্তির ১৪৫৮ তম বার্ষিকী' শীর্ষক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি সাদর আমন্ত্রণ। এ উপলক্ষে সবাইকে আবারো জানাচ্ছি প্রাণঢালা অভিনন্দন। মহানবীর (সা) রিসালাতপ্রাপ্তির মিশন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার ঘটনা ১৪৫৭ বছর পেরিয়ে ১৪৫৮ তম বার্ষিকীতে উপনীত হল।

 মহান আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া যে আমরা এ দিবসটি স্মরণ করতে পারছি এবং এ উপলক্ষে কিছু কথা বলার সুযোগ পেয়েছি।

তুমি না আসিলে মধুভাণ্ডার ধরায় কখনো হত না লুট,

তুমি না আসিলে নার্গিস কভু খুলতো না তার পত্রপুঠ,... (ফররুখ)

তুমি সুন্দর,- সুন্দরতম

আদর্শ নিখিলের,

হে রাসুলে খোদা! জুলমাতে পথ

দেখালে জান্নাতের।

মিথ্যার কাছে মানুষ যখন

সঁপেছিল তার সারা তনু মন,

ভাঙ্গিলে তখন নিজ হাতে তুমি

মূর্তি অসত্যের।

তোমার আলোকে মিলাল হে নবী,

অন্যায়, অবিচার।

তুমি দিলে চির বঞ্চিত জনে

মানুষের অধিকার।

এ ধরণী তল চির ভুলে ভরা

পেল অপরূপ শান্তি পশরা

দিলে এনে যবে খোদার কালাম

সওগাত সত্যের। (ফররুখ)

মহান কবি শেখ সাদি লিখেছিলেন, বালাগাল উলা বি-কামালিহি,কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি,হাসুনাত জামিয়ু খিসালিহি,সাল্লু আলায়হি ওয়া আলিহি।।

তাবৎ পূর্ণতা নিয়ে শীর্ষে হয়েছেন উপনীত,অপার সৌন্দর্যে তিনি আলো করেছেন তমসাকে, আশ্চর্য চারিত্র তাঁর অতুলন সৌন্দর্যে মন্ডিত, রাহমাতুল্লিল আ’লামীন-হাজার সালাম তাঁকে। (কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ)

একই কবিতা অবলম্বনে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন:

কুল মখলুক গাহে হযরত

বালাগাল উলা বেকামালিহী।

আঁধার ধরায় এলে আফতাব

কাশাফাদ দুজা বেজমালিহী ||

 

রৌশনীতে আজো ধরা মশগুল

তাইতো ওফাতে করি না কবুল,

হাসনাতে আজো উজালা জাহান

হাসুনাত জমিউ খেসালিহী ||

 

নাস্তিরে করি’ নিতি নাজেহাল

জাগে তাওহীদ দ্বীন-ই কামাল

খুশবুতে খুশী দুনিয়া বেহেশত

সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী ||

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ উপহার। হাদিসে কুদসি তথা মহান আল্লাহর বিশেষ বাণী অনুযায়ী মহানবীকে সৃষ্টি না করলে মহান আল্লাহ কিছুই সৃষ্টি করতেন না। পবিত্র কুরআনে মহানবীকে জগতসমূহের জন্য আল্লাহর রহমত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। খোদ্ পবিত্র কুরআনকে আল্লাহ মুমিনদের জন্য রহমত বলে উল্লেখ করেছেন অথচ মহানবী জগতসমূহের জন্য রহমত হওয়ায় কুরআনের চেয়েও অনেক অনেক বড় রহমত। মহানবী একাই সবচেয়ে বড় জীবন্ত কুরআন এবং কুরআনকে বোঝানোর, বাস্তবায়নের ও এর সব রহস্য আর জটিল বিষয় বুঝিয়ে দেয়ার সবচেয়ে বড় ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক শিক্ষক। খোদায়ি হিকমাত ও আধ্যাত্মিকতা শেখানোরও সবচেয়ে বড় শিক্ষক হলেন তাওহীদের প্রধান কাণ্ডারি মহানবী-সা.। মানবিকতা ও আল্লাহর প্রতিনিধিত্বকে পূর্ণতা দানই ছিল তাঁর মিশনের উচ্চতম লক্ষ্য। 

২৭ রজব মহান আল্লাহর প্রিয়তম হাবিব রাসুলে পাকের রিসালাতের মিশন শুরুর বার্ষিকী। অনেকের মতে ২৭ রজব মহানবী (সা.) ঊর্ধ্বলোকে আধ্যাত্মিক সফর বা মে’রাজে গিয়ে ছিলেন। অনেক আলেম মনে করেন মহানবীর মে'রাজ হয়েছিল বেশ কয়েকবার, আর ২৭ রজব হচ্ছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:)’র নবুওত ও রিসালাত প্রাপ্তির দিবস এবং এ দিনেই পবিত্র কুরআন সামগ্রিকভাবে রাসূলে পাকের কাছে নাজেল হয়েছিল। অবশ্য ধাপে ধাপে তা প্রথম নাজিল হয়েছিল রমজান মাসের ক্বদরের রাতে।    

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ-সা'-কে সর্বোত্তম চরিত্র দিয়ে গড়ে তুলেছেন মহান আল্লাহ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুলের জীবন-চরিতে রয়েছে সুন্দরতম আদর্শ। আর এই আদর্শ জীবনের সবক্ষেত্রের জন্যই প্রযোজ্য।

মানবজাতিকে সুপথ ও হেদায়েত দেখানোর সবচেয়ে বড় প্রদীপ হিসেবে বিবেচিত মহানবী নিজের উম্মতকে নেতৃত্ববিহীন অবস্থায় রেখে যাননি। তাঁর পরেও যাতে মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়া যায় এবং পবিত্র কুরআনের শিক্ষাকে যথাযথভাবে রক্ষা করা যায় ও এর মহান আলো সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া যায় সেজন্য তিনি রেখে গেছেন তাঁর পবিত্র আহলে বাইত। তাই মহানবীকে ভালোবাসার পাশাপাশি মহানবীর আহলেবাইতকে ভালোবাসাও হচ্ছে ইসলাম ধর্মের প্রধান ভিত্তি। মহানবীর হাদিসের আলোকে বলা হয় যখন মহানবীর প্রতি দরুদ পেশ করা হয় তখন তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতিও দরুদ পেশ না করা হলে তা অপূর্ণ থেকে যায় এবং পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য হয় না।

পৃথিবী যখন অজ্ঞতা, নৈরাজ্য, হানাহানি, কুসংস্কার ও মানবতাহীনতার ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত তখন মহান আল্লাহ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) কে মানবজাতির সর্বশেষ রাসূল ও নবী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। এর উদ্দেশ্য ছিল মানব জাতিকে মুক্তির আলোকিত পথে এনে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পূর্ণতা দান করা। সূরা আলে ইমরানের ১৬৪ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'নিঃসন্দেহে আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলেন যখন তিনি তাদের মধ্য থেকেই একজনকে রাসূল হিসেবে মনোনীত করেন যিনি তাদের কাছে আল্লাহর নির্দেশাবলী পাঠ করেন, তাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করেন সব ধরনের অজ্ঞতাও বর্বরতার কলুষতা থেকে, তাদেরকে ধর্মের বিধান ও জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেন, যদিও এর আগে তারা ছিল অজ্ঞানতা ও বিপথগামিতার অন্ধকারে নিমজ্জিত।'

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:)’র নবুওত প্রাপ্তি সম্পর্কে খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা জাহরা (সা:) বলেছেন,

মহান প্রতিপালক মুহাম্মাদ (সা:)কে মনোনীত করেছিলেন যাতে আল্লাহর নিজের কর্তব্য পরিপূর্ণ হয় এবং তিনি মানবজাতির জন্যে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তা যেন সম্পন্ন হয়। মহান আল্লাহ মানুষের মধ্যে বিরাজমান  অজ্ঞতা ও কু-প্রথার মহাআঁধার মুহাম্মাদের আলোর মাধ্যমে দূর করেন।

মহান আল্লাহ বলেছেন,"আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠান। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর রহমতের তরে দরুদ পাঠাও এবং তাঁর প্রতি যথাযথ সালাম পাঠাও তথা  পুরোপুরি তাঁর অনুগত হও।"

ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন মহান আল্লাহর সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। সব নবী-রাসুলেরও নেতা তিনি। মহানবীর (সা) আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন প্রত্যেক নবী। পবিত্র কুরআন বলে, মহানবীকে পাঠানো হয়েছে পুরো মানবজাতির জন্য। সুরা তওবায় মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনিই পাঠিয়েছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য-ধর্ম সহকারে, যেন এ ধর্মকে অন্যান্য ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন,যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।

নিঃসন্দেহে ইসলাম ধর্ম সর্বজনীন ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং মহানবীর রিসালাত কোনো অঞ্চল, সময় ও ভাষা, বর্ণ আর গোত্রের গণ্ডীতে সীমিত নয়। কুরআন আরও বলে,মহানবীকে (সা) গোটা মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে পাঠানো হয়েছে।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন মহান আল্লাহর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। মহান আল্লাহ মহানবীর নবুওতের শুরুতেই তাঁর শ্রেষ্ঠ চরিত্রের স্বীকৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে তুমি অতি মহান চরিত্রে প্রতিষ্ঠিত।’ ব্যবহারিক ক্ষেত্রে মুমিনদের প্রতি তাঁর ভালবাসার তীব্রতাকে এভাবে তুলে ধরেছেন মহান আল্লাহ, ‘তোমাদের দুর্ভোগ তাঁর পক্ষে দুর্বিষহ। সে তোমাদের কল্যাণের অভিলাষী, বিশ্বাসীদের প্রতি অতিশয় দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দাহ হতে চাইলে পবিত্র কুরআনের এ উপদেশটি হৃদয়ে গেঁথে নেয়া উচিত যাতে বলা হয়েছে,  ‘ তারা যদি আল্লাহকে ভালবাসে তাহলে তারা যেন আল্লাহর শেষ রাসুলের অনুসরণ করে যাতে আল্লাহও তাদের ভালবাসেন।’-

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:)’র আবির্ভাব গোটা মানব জাতির জন্যে আল্লাহর নিজস্ব রহমত বা  বিশেষ অনুগ্রহ। তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে। তিনি মানুষকে শেখালেন প্রকৃত সাম্য, ন্যায়বিচার, ভ্রাতৃত্ব এবং  প্রকৃত স্রষ্টার ইবাদত। তাঁর প্রচারিত ধর্মের শিক্ষা বিশ্ব সভ্যতাকে এতো বেশী সমৃদ্ধ করেছে যে এর আগে সভ্যতা কখনও এতো সমৃদ্ধ ও উন্নত হয় নি। তাই অনেক অমুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীও রাসূলে পাক (সা:)কে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও মানবজাতির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব সৃষ্টিকারী বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। প্রখ্যাত ভারতীয় লেখিকা সরোজিনী নাইডু  বিশ্বনবীর (সা:) আদর্শ তথা ইসলাম সম্পর্কে দ্যা আইডিয়ালস অব ইসলাম গ্রন্থে লিখেছেন, ন্যায়বিচারবোধ ইসলামের এক অনুপম আদর্শ। যখনই আমি কুরআন অধ্যয়ন করেছি তখন প্রত্যক্ষ করেছি জীবন সম্পর্কিত সমস্ত গতিশীল নীতিকথা যা ভাববাদী অর্থে নয় বরং বাস্তব অর্থেই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার পথ-নির্দেশনা।

বিশ্বনবী (সা:) মানুষের কাছে যে ধর্ম প্রচার করেছেন সে সম্পর্কে এ. জে. টয়েনবি লিখেছেন, মুসলমানদের মধ্যে সংকীর্ণ জাতি বা গোত্রীয় চেতনার পরিপূর্ণ বিলোপ সাধন ইসলামের এক অবিসম্বাদী সাফল্য। বর্তমান বিশ্বকে গোষ্ঠী-প্রীতির অভিশাপ থেকে বাঁচানোর জন্যে ইসলামের প্রচার অত্যন্ত জরুরী।

জর্জ বার্ণার্ড শ বিশ্বনবী (সা.’র অবদান ও আদর্শ সম্পর্কে 'দ্যা জেনুয়িন ইসলাম' গ্রন্থে লিখেছেন, 'মুহাম্মাদ (সা.)কে যতটুকু আমি জেনেছি তাতে অকুণ্ঠচিত্তে বলতে পারি,তিনি সমগ্র মানবজাতির ত্রাণকর্তা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি,বর্তমান সময়ে যদি তাঁর মতো মহান ব্যক্তি পৃথিবী পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতেন তবে তিনি মানব জাতির সেই কাঙ্ক্ষিত শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারতেন, আজকের দিনে যার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী।'

পবিত্র কুরআনের ভাষায় জীবনে চলার পথ, মত ও স্বভাব বা আচরণের দিক থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ছিলেন শ্রেষ্ঠ আদর্শ বা উসওয়াতুন হাসানাহ। জীবনের সব ক্ষেত্রে এবং কখন কোথায় কী করতে হবে তা জানার শ্রেষ্ঠ উৎস হলেন মহানবী (সা)। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, আইনি ও রাষ্ট্রীয় জীবনসহ জীবনের সব ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। কথায় ও কাজে সবক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা)-কে অনুসরণ করাই হবে একজন প্রকৃত মুসলমানের জন্য ঈমানের দাবি। তা না হলে আল্লাহর সর্বশেষ রাসুলের রেসালতের প্রতি বিশ্বাস রাখার দাবি করাটা হবে প্রতারণা মাত্র। অন্য কথায়  মহানবীর অনুসারী বা মুসলমান হওয়ার দাবি করলে জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রিয় নবীজীকে শ্রেষ্ঠ আদর্শ বলে মানতে হবে। 

মহানবী (সা) তৎকালীন আরব সমাজের বেশিরভাগ মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন তার সুন্দর ও শ্রেষ্ঠ চরিত্র আর ক্ষমা-সুন্দর ব্যবহার দিয়ে। মহানবী (সা) চেয়েছিলেন তাঁর আশপাশের সব মানুষকে তাঁরই আদর্শের ধারায় শ্রেষ্ঠ বা পূর্ণাঙ্গ মহামানব হিসেবে গড়ে তুলতে। কিন্তু সবাই তাঁর দাওয়াতকে গ্রহণ করেনি। অনেকেই মুশরিক ও কাফিরই থেকে গেছেন। কেউ কেউ নামে মুসলমান হলেও বাস্তবে  ছিলেন মুনাফিক। কিন্তু বিশ্বনবীর আহলে বাইতের সদস্যরা ছিলেন তাঁরই কাছাকাছি পর্যায়ের আদর্শ মহামানব যাঁদের নিষ্পাপ হওয়ার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনেই।

তাই মহানবীর (সা) আদর্শ ও পবিত্র কুরআনকে ভালোভাবে বুঝতে হলে জানতে হবে পবিত্র আহলে বাইতের জীবন-ধারাকে। জানতে হবে কিভাবে মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করেছিল নানা বিচ্যুতি, অনাচার, জুলুম ও ইয়াজিদি স্বৈরতন্ত্র, রাজতন্ত্র প্রভৃতি। বিশ্বনবীর আহলে বাইতের আদর্শকে ছেড়ে দেয়ার কারণেই যে মুসলমানদের মধ্যে নানা বিভক্তি এবং অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছিল তাও বোঝা সম্ভব হবে ইসলামের ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠ বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

বিশ্বনবী (সা)’র রিসালাত মানব-ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপ্লব। সেই মহান বিপ্লবের ধারাবাহিকতা ও সাফল্য ধরে রাখাটা ছিল মুসলমানদের দায়িত্ব। ইসলাম এ জন্যই প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জনকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছে।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (র) বলেছেন, ‘রাসুলে খোদার রিসালাতের বার্ষিকীর চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আর কোনও দিবস নেই। কারণ,এর চেয়ে বড় কোনও ঘটনা আর ঘটেনি। অন্যান্য নবী-রাসুলের নিযুক্তির চেয়েও এ ঘটনা অনেক বেশি বড়। এর চেয়ে বড় কোনও ঘটনা থাকার বিষয় কল্পনাও করা যায় না। এমন দিনে জনগণকে জুলুম থেকে মুক্তির উপায় বোঝাতে হবে জোরালোভাবে যাতে তারা বড় বড় জালিম শক্তিগুলোকে মোকাবেলা করতে পারে। জনগণ যে এটা করতে পারবে তা তাদেরকে বোঝাতে হবে। '

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিশ্বনবী (সা)’র রিসালাত লাভ প্রসঙ্গে বলেছেন, মানবজাতির ইতিহাসের এই মহান মিশনের লক্ষ্য হল মানুষকে মুক্তি দেয়া এবং তাদের আত্মা ও চরিত্রকে পরিশুদ্ধ, মার্জিত ও অলঙ্কৃত করার পাশাপাশি সব যুগের মানুষকে সব সংকট আর সমস্যা থেকে মুক্ত করা-যেসব সমস্যা ও সংকটের বেড়াজালে আজও ঘুরপাক খাচ্ছে মানুষ। তিনি আরও বলেছেন,

মহানবীর রিসালাতের লক্ষ্য ছিল মানুষের মুক্তি সাধন। ইসলাম ও মহানবীর (সা) পক্ষ থেকে মানুষের জন্য রোগমুক্তির যে প্রেসক্রিপশন রয়ে গেছে তা সব যুগে মানুষকে মুক্ত করে অজ্ঞতা থেকে। এই নির্দেশিকা দিয়ে মোকাবেলা করা যায় জুলুম, বৈষম্য, দুর্বলের ওপর সবলের শোষণ এবং অন্য সব যন্ত্রণা যার শিকার মানবজাতি সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত হয়েছে ও হচ্ছে। এই নির্দেশিকা যদি বাস্তবে মেনে চলা হয় তাহলেই সুফল আসবে।'

বস্তুতান্ত্রিক খোদাহীন সমাজবাদ, পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্রের ও পশ্চিমা লিবারেলিজম বা কথিত উদারনৈতিকতা তথা নীতিহীনতার ব্যর্থতার পর আবারও ইসলামী সভ্যতার উত্থানের সুযোগ এসেছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লব প্রকৃত ইসলাম তথা মহানবীর সেই সংগ্রামী ইসলামকে আবারও তুলে ধরছে শাহাদত ও ত্যাগের পথ বেয়ে। মহান আল্লাহর কাছে  আবারও প্রকৃত খেলাফত প্রতিষ্ঠার ও ইমাম মাহদির বিশ্ব-ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেয়ার তৌফিক চেয়ে শেষ করছি মহানবীর রিসালাত প্রাপ্তি দিবসের আলোচনা।#

পার্সটুডে/এমএএইচ//১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।