শ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী (সা) ও তাঁরই নূরের এক অনন্য নক্ষত্রের কথা
(last modified Mon, 02 Nov 2020 11:30:00 GMT )
নভেম্বর ০২, ২০২০ ১৭:৩০ Asia/Dhaka

১৭ রবিউল আউয়াল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাফর সাদিকের পবিত্র জন্ম-বার্ষিকী। এ উপলক্ষে শ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী (সা) ও তাঁরই নূরের এক অনন্য নক্ষত্রের কথা শীর্ষক বিশেষ আলোচনা

বিশ্বনবী (সা.) মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় উপহার। তাঁর শুভ জন্মদিন তাই মানব জাতির জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন এবং এই দিন মুসলমানদের মিলন ও ঐক্যের সবচেয়ে বড় শুভ-লগ্ন। এই মহাখুশির দিন উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি অশেষ মুবারকবাদ, মহান আল্লাহর প্রতি জানাচ্ছি অশেষ শুকরিয়া এবং বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি পেশ করছি অশেষ দরুদ ও সালাম। আজ বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)'রও শুভ জন্মদিন। তাই এ উপলক্ষেও সবাইকে জানাচ্ছি মুবারকবাদ এবং এই মহান ইমামের উদ্দেশে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ ও সালাম। ইসলামী আইনসহ এই মহান ধর্মের নানা দিক ও জ্ঞানের সব শাখা বিকশিত হয়েছিল মহান ইমাম হযরত ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)'র মাধ্যমে। তাঁর হাজার হাজার উচ্চ-শিক্ষিত ছাত্রের মধ্যে অনেক উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও খ্যাতনামা বিজ্ঞানীও ছিলেন। ইসলামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ও এ ধর্মকে সাংস্কৃতিক বা চিন্তাগত হামলাসহ সার্বিক ক্ষতিকর দিক থেকে সুরক্ষার জন্য যা যা করার দরকার তার সবই তিনি করেছিলেন।

 ইমাম জাফর আস সাদিক ৮৩ হিজরির ১৭ ই রবিউল আউয়াল মদীনায় ভূমিষ্ঠ হন। ৩৪ বছর ধরে মুসলিম জাহানের নেতৃত্ব দেয়ার পর ১৪৭ হিজরির ২৫ শে শাওয়াল শাহাদত বরণ করেন। আব্বাসিয় শাসক মনসুর দাওয়ানিকি বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে। এই মহান ইমাম সম্পর্কে আমরা আরও কথা বলব আরও কিছুক্ষণ পর।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন মহামানবদেরও শিক্ষক এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ও মহান আল্লাহর সর্বশেষ অথচ সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর পর আর কোনো নবীর আবির্ভাব হবে না এ কারণেই যে মানব জাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ ও সৌভাগ্যের জন্য যা যা দরকার তার সব নির্দেশনাই তিনি দিয়ে গেছেন এবং তাঁর নির্দেশনাগুলোর যুগোপযোগী ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন তাঁরই বংশে জন্ম নেয়া পবিত্র ইমামগণ।

বিশ্বনবী  হযরত মুহাম্মাদ (সা) সর্বকালের সেরা মহামানব ও মানবজাতির সবচেয়ে বড় এবং পরিপূর্ণ আদর্শ। পবিত্র কুরআন তাকে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য মহান আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বনবী ছিলেন গণমুখী চরিত্রের ও মানব-প্রেমিক। তিনি মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন এবং তা করতে ভুলেননি। তিনি নিজেও সাধারণ মানুষের মতই মানুষের মধ্যে জীবন-যাপন করতেন। দাস ও নিম্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অন্তরঙ্গতা রাখতেন। তিনি তাদের সঙ্গে বসতেন ও খাবার খেতেন। তাদের ভালবাসতেন ও তাদের প্রতি কোমল ছিলেন। ক্ষমতা তাঁকে বদলে দেয়নি। রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় সম্পদের অভিভাবক হয়েও তিনি বদলে যাননি। কঠিন নানা সংকট ও কষ্টের সময়ে এবং এইসব সংকট কেটে যাওয়ার পরও সব সময়ই আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল ছিলেন গণমুখী ও মানবপ্রেমিক। তিনি সব সময়ই মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে ও তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট ছিলেন। খন্দকের যুদ্ধের সময় তিনি নিজে শত্রুদের মোকাবেলার জন্য খন্দক বা গর্ত করার কাজে অংশ নিয়েছেন মানুষের সঙ্গে এবং অন্য সবার সঙ্গে তিনিও ক্ষুধার্ত থেকেছেন।

আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল ও সর্বকালের সেরা মহামানব বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)  দাসদের সঙ্গে উঠতেন ও বসতেন এবং তাদের সঙ্গে খাবার খেতেন। তিনি একবার মাটিতে বসেছিলেন এবং একদল দরিদ্র মানুষের সঙ্গে বসে খাবার খাচ্ছিলেন। এক বেদুইন নারী সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই নারী সবিস্ময়ে প্রশ্ন করল: হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বান্দা বা সাধারণ মানুষের মতই খাবার খান? মহানবী মুচকি হেসে বললেন, আমার চেয়েও বেশি সাধারণ মানুষ কেউ কী আছে? তিনি খুবই সাদাসিধে পোশাক পরতেন। তাঁর সামনে যে খাবারই পাওয়া যেত ও তৈরি করা হত তা তিনি খেতেন। বিশেষ খাবারের প্রত্যাশা করতেন না ও অপছন্দের খাবার বলে প্রত্যাখ্যান করতেন না। পুরো মানবজাতির ইতিহাসে এইসবই হল নজিরবিহীন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ও লেনদেন সত্ত্বেও মহানবী বাহ্যিক ও আত্মিক পবিত্রতার দিক থেকেও ছিলেন সর্বোত্তম আদর্শ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেছেন, তাঁর চেয়েও বেশি দানশীল আর সাহায্যকারী, বেশি সাহসী ও বেশি প্রোজ্জ্বল কাউকে দেখিনি। তাঁর সামাজিকতা ছিল মানবীয় ও সুন্দর এবং তা ছিল সাধারণ মানুষের মতই দম্ভ, শক্তিমত্ততা আর আভিজাত্যবিহীন।

নিম্নবিত্ত সমাজের তথা সাধারণ ও দরিদ্র শ্রেণীর অংশ হওয়া সত্ত্বেও মহানবী (সা) একজন ঐশী ব্যক্তিত্ব। এরপরও তিনি প্রতিদিন ৭০ বার তওবা করতেন। মানুষের কল্যাণের জন্য তাঁর প্রাণ কাঁদত, এমনকি কাফিরদের ব্যাপারেও যখন তিনি দেখতেন যে তারা মুসলমান হচ্ছে না, তিনি কষ্ট পেতেন এই ভেবে যে এরা মুসলমান না হওয়ায় দোযখের এতসব কঠিন যন্ত্রণায় কষ্ট পাবে!

মহানবীর চেহারার বাহ্যিক গঠনের সঙ্গে অন্যান্য মানুষের বাহ্যিক চেহারায় কোনো পার্থক্য ছিল না। ফলে যখন তিনি মানুষের মধ্যে মিশে থাকতেন তখন তাঁর সাক্ষাৎ-প্রত্যাশী অপরিচিত ব্যক্তি এই বলে প্রশ্ন করত: আপনাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি নবী মুহাম্মাদ? মহানবী (সা) ও এই মহামানবের পবিত্র আহলে বাইত এবং একদল বিশিষ্ট সাহাবিকে যে বিষয়টি বিশিষ্টতা দিয়েছে তা হল তাঁদের মহান, উন্নত ও কোমল এবং শক্তিশালী আত্মা। মহানবীর শ্রেষ্ঠত্ব উনার পবিত্র শরীরের জন্য ঘটেনি, বরং শক্তিশালী ও উন্নত আত্মার জন্যই ঘটেছে। 

শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এতো বেশি ইবাদত তথা নামাজ আদায় ও খোদাপ্রেমের সাধনায় নিয়োজিত হন যে মহান আল্লাহ সুরা ত্বাহায় তা উল্লেখ করে বলছেন, ‘আপনাকে ক্লেশ দেয়ার জন্য আমি আপনার প্রতি কুরআন নাজিল করিনি।’

রাসুলে খোদা (সা)’র কোনো কোনো স্ত্রী জানিয়েছেন, আমরা রাসুলে খোদার সঙ্গে কথা বলতাম, তিনিও আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন, কিন্তু নামাজের সময় হলে তিনি এমন হয়ে যেতেন যেন আমাদেরকে তিনি কখনোই চিনতেন না এবং আমরাও কখনও তাকে যেন দেখিনি, তিনি অন্য সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এভাবেই আল্লাহর গভীর ধ্যানে ডুবে যেতেন।

মহান আল্লাহর ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) ভূপৃষ্ঠের ধনভাণ্ডারের চাবি আনেন বিশ্বনবীর (সা) জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে, কিন্তু তিনি বিনম্রতা দেখালেন ও তা নিলেন না, বরং দারিদ্রকেই নিজের জন্য গর্ব বলে মনে করতেন। হাদিসে এসেছে, রাসুলে খোদা (সা) কোনো সমাবেশ বা সভা থেকে বের হতেন না ২৫ বার তওবা করা তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা না করা পর্যন্ত।

আল্লাহর বান্দাহদের প্রতি রাসুলে খোদার বিনম্রতা ছিল অন্য সবার চেয়ে বেশি। সঙ্গী বা সাহাবিরা তাঁর সম্মানে দাঁড়াবেন-এটা তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি মসজিদে গেলে সবার পেছনে বসতেন। তিনি মাটিতে বসে খাবার খেতেন ও মাটিতে বসতেন। তিনি ঘরের লোকদের সঙ্গে ঘরের কাজে শরিক হতেন। নিজের পবিত্র হাতে ছাগলের দুধ দোহন করতেন, নিজের জামা ও জুতো নিজেই সেলাই করতেন, খাদেমের সঙ্গে গম ভাঙ্গানোর ডালা ঘুরাতেন ও রুটির খামির তৈরি করতেন। মহান নবীর জীবনযাপনের অবস্থা ছিল খুবই সহজ-সরল। তিনি সর্বোচ্চ উচ্চ পদে থেকেও নিজের বৈষয়িক জীবনের স্বার্থে পদকে কখনও ব্যবহার করেননি ও নিজের জন্য কিছুই রেখে যান নি। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হয়েও তিনি ছিলেন জন-সেবক ।

মহানবীর জীবনের প্রথম ক্ষেত্রটি হল দাওয়াত ও জিহাদের ক্ষেত্র। মানুষকে সত্য ও মহান আল্লাহর দিকে এবং জিহাদের দিকে আহ্বান ছিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিজের যুগের সেই অন্ধকার দিনগুলোতেও তিনি কখনও উদ্বেগ বা হতাশার শিকার হননি। যখন মক্কায় নিঃসঙ্গ ছিলেন ও তার চারদিকে যখন গড়ে উঠেছিল অতি ক্ষুদ্র একটি মুসলিম সমাজ সে সময় তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়েছে দাম্ভিক আরব ও বর্বর আর বেয়াড়া এবং শক্তিশালী কুরাইশ নেতাদেরকে। একই সময়ে তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে অসভ্য বেদুইন ও শিক্ষা-দীক্ষাহীন সাধারণ জনগণকে। সেই সময়ও তিনি কখনও ভয় পাননি, বরং বলেছেন ন্যায্য কথা। সেইসব কথা তিনি বার বার বলতেন ও ব্যাখ্যা দিয়ে স্পষ্ট করতেন। এ জন্য তিনি সহ্য করেছেন অনেক অপমান এবং প্রাণপণ ধৈর্য ধরে সেইসব দুর্বিসহ কষ্ট আর যাতনা সহ্য করেছেন। ফলে বহু মানুষ হন মুসলমান। সেইসব কঠিন দিনে কিংবা যখন তিনি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করে সেই রাষ্ট্রের প্রধান হন ও ক্ষমতাসীন হন সেইসব দিনেও তিনি ছিলেন সত্য-প্রচারে অবিচল এবং নিঃশঙ্ক। বিশ্বনবী (সা) এতোসব কষ্ট স্বীকার ও পরিশ্রমের পরও জালিমের বিরুদ্ধে জিহাদের পথ কখনও ত্যাগ করেননি এবং তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই নীতিতে অবিচল ছিলেন। 

মহানবী কেবল তাঁর বক্তব্যে নয়, আচার-আচরণে, জনগণের সঙ্গে মেলামেশায় ও লেনদেনে, পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সঙ্গে আচরণে, শত্রু ও বিজাতীয়দের সঙ্গে আচরণে এবং দুর্বল ও দরিদ্র আর শক্তিশালী বা ধনীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রসহ সবক্ষেত্রেই সর্বোত্তম আদর্শ। যে ইসলামের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা) ও পবিত্র ইমাম ও সাহাবিরা জীবন দিয়েছেন এবং যে ইসলাম সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মানুষকে শক্তি, সম্মান ও পৌরুষত্ব দান করে; যে ইসলাম বলদর্পি, জালিম ও তাগুতি শক্তিকে ক্ষমতার সিংহাসন থেকে নীচে নামিয়ে আনে বিশ্বের বুকে সেই প্রকৃত ও পবিত্র সংগ্রামী ইসলামকেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে মহানবীর আদর্শের অনুসারীদের পবিত্র দায়িত্ব। আর সেই প্রকৃত ইসলামের সঙ্গে যে যত বেশি ঘনিষ্ঠ হবেন তারা দাম্ভিক শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে তত বেশি আঘাত, হামলা, অপবাদ, হৈচৈ ও হত্যা প্রচেষ্টারও শিকার হবেন।

বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র নাম বিশ্বের সব মুসলমানের জন্য অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ ও ঈমান। তাই এই নাম ও এই নামের স্মরণ মুসলমানদেরকে নানা ক্ষেত্রে এমন শক্তি যোগায় যে ইসলামের অন্য অনেক দিক- যা কেবল ঈমানের সঙ্গে জড়িত ও আবেগের প্রভাবমুক্ত- সেসব কখনও এমন শক্তি যোগায় না। তাই তো দেখা যায় আজ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাকরণ যখন মহানবীর অবমাননা করে কথা বলায় মহানবীর পবিত্র নামের স্মরণ বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মুসলমানের হৃদয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে আবেগ ও ঈমান। বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের বিক্ষোভ মিছিল ও ফরাসি পণ্য বর্জনের হিড়িক কাঁপিয়ে দিয়েছে বাক-স্বাধীনতার মিথ্যা দাবিদার ও ইহুদিবাদের ক্রীড়ণক ফরাসি সরকারের প্রাসাদকে।

মহানবীর জন্ম দিবসটি গোটা মানব জাতির জন্য উৎসবের দিন, কারণ, এই আধুনিক যুগেও মহানবীর রেখে যাওয়া পবিত্র ধর্ম ইসলাম মানব জাতির সব সংকট ও সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান দেয়।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম রাজনীতিকে ধর্মের ভিত্তিমূলে স্থাপন করেছিলেন। তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাষ্ট্রনীতি বা রাজনীতির নানা কাঠামো ও কেন্দ্র। বিশ্বনবীর মত কঠিন সমস্যা ও সংকটের শিকার আর কেউই হয়নি, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি শেষ পর্যন্ত সুদৃঢ় থেকে নিজের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে গেছেন।

মহানবী দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানে এক মুহূর্তের জন্যও হতাশ বা হতোদ্যম হননি। তিনি খুব জোরালোভাবে সর্বশক্তি দিয়ে ইসলামী সমাজকে এগিয়ে নেন এবং এই সমাজকে সম্মান ও ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেন। তাঁরই গড়ে তোলা রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা তাঁর অবিচলতা ও দৃঢ়তার সুবাদেই পরবর্তী বছরগুলোতে যুদ্ধ ও দাওয়াতের ময়দানে বিশ্বের এক নম্বর শক্তিতে পরিণত হয়।

মহানবীর আদর্শের অনুসরণই যে জনগণকে জুলুম থেকে মুক্তির উপায় তা বোঝাতে হবে জোরালোভাবে যাতে তারা বড় বড় জালিম শক্তিগুলোকে মোকাবেলা করতে পারে। জনগণ যে এটা করতে পারবে তা তাদেরকে বোঝাতে হবে। রাসুলে খোদার রিসালাতের লক্ষ্য হল মানুষের আচার-আচরণ, চরিত্র, তাদের আত্মা ও শরীরকে নানা ধরনের অন্ধকারাচ্ছন্নতা থেকে মুক্ত করে সেখানে আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দেয়া।

এবার আমরা কথা বলব বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ও তাঁর অন্যতম সুযোগ্য উত্তরসূরি ইমাম জাফর সাদিক (আ) সম্পর্কে। ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) যে অভাবনীয় ও অতুল জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন তা ছিল নবুওতী জ্ঞানেরই উত্তরাধিকার। 

 ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) বলেছিলেন, আমাদের তথা রাসূল (সাঃ)'র আহলে বাইতের কাছে রয়েছে ভবিষ্যতের জ্ঞান, অতীতের জ্ঞান, অন্তরে অনুপ্রাণিত বা সঞ্চারিত জ্ঞান, ফেরেশতাদের বাণী যা আমরা শুনতে পাই, আমাদের কাছে রয়েছে রাসূল (সাঃ)'র অস্ত্রসমূহ এবং আহলে বাইতের সদস্য ইমাম মাহদী (আঃ)'র কাছে না পৌঁছা পর্যন্ত সেগুলো আমাদের হাতছাড়া হবে না। আমাদের কাছে রয়েছে সব আসমানী কেতাব। এ ছাড়াও আমাদের কাছে রয়েছে হযরত ফাতেমা (সঃ)'র সহিফা যাতে রয়েছে সমস্ত ভবিষ্যৎ ঘটনার বিবরণ এবং পৃথিবীর শেষ ঘণ্টা পর্যন্ত সমস্ত শাসকের নাম তাতে লেখা আছে। আমাদের কাছে রয়েছে আল জামী নামের দলীল, যাতে লেখা রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)'র নিজ মুখের উচ্চারিত ও নির্দেশিত বাণী এবং ঐসব বাণী আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ) নিজ হাতে লিখেছিলেন। আল্লাহর শপথ! এতে রয়েছে মানুষের জন্যে কিয়ামত পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সবকিছু।

আব্বাসীয় খলিফা আল মানসুর ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) 'র ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও প্রভাব প্রতিপত্তি দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারই নির্দেশে ১৪৮ হিজরীর ২৫ শে শাওয়াল বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করা হয় নবী বংশ তথা আহলে বাইতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম জাফর সাদেক (আঃ)কে। কিন্তু বস্তুবাদী শাসকচক্রের অন্ধ স্বার্থপরতার সীমানা পেরিয়ে অন্য অনেক মহান ইমামের মতোই ধার্মিক মানুষের অন্তরের রাজ্যে আজো ক্ষমতাসীন হয়ে আছেন হযরত ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)।

ইমাম জা’ফর আস সাদিক (আ.)মুসলমানদের সব মাজহাবের কাছেই বরেণ্য ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তাঁর আদর্শ হতে পারে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের সূত্র। চারজন সুন্নি ইমামের মধ্যে একজন তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্র এবং আরো দুই জন সুন্নি ইমাম তাঁর পরোক্ষ ছাত্র ছিলেন।

মালিকি মাজহাবের ইমাম মালেক বিন আনাস ইমাম জা’ফর আস সাদিক (আ.) সম্পর্কে বলেছেন, আল্লাহর শপথ! মানুষের কোনো চোখ সংযম সাধনা, জ্ঞান, ফজিলত ও ইবাদতের ক্ষেত্রে জা’ফর ইবনে মুহাম্মাদের চেয়ে বড় কাউকে দেখেনি, কোনো কান এসব ক্ষেত্রে তাঁর চেয়ে বড় কারো কথা শুনেনি এবং কোনো হৃদয়ও তা কল্পনা করেনি।

ইমাম জা’ফর আস সাদিক (আ.)’র একটি অমূল্য বাণী শুনিয়ে শেষ করব আজকের আলোচনা। তিনি বলেছেন,

যারা নামাজকে গুরুত্বহীন মনে করবে আমাদের তথা বিশ্বনবী (সা.)’র আহলে বাইতের শাফায়াত তাদের ভাগ্যে জুটবে না।

আজকের এই মহাখুশির দিন উপলক্ষে আবারও সবাইকে জানাচ্ছি অশেষ মুবারকবাদ, মহান আল্লাহর প্রতি জানাচ্ছি অশেষ শুকরিয়া এবং বিশ্বনবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের প্রতি পেশ করছি অশেষ দরুদ ও সালাম। #

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। 

ট্যাগ