বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না মুরাদ হাসান
নারীবিদ্বেষী মন্তব্য: তথ্য প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ চায় বিএনপি, প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন কাদের
জিয়া পরিবারকে নিয়ে দেওয়া বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের একটি মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় প্রতিমন্ত্রীকে তার মন্তব্য প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।
আজ (সোমবার) সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রীর একটি বিকৃত ও শিষ্টাচারবহির্ভূত নারী ও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী একজন ব্যক্তির এ ধরনের ঘৃণ্য ও কুরুচিপূর্ণ আচরণের প্রতিকার দাবি জানান তিনি।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ না পেয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন, ঠিক সেই সময় তার পরিবারের একজন নারী সদস্য তথা পরিবারের বিভিন্নজন সম্পর্কে এ ধরনের অশ্লীল ঘৃণ্য অপপ্রচার এরইমধ্যে নারী নেতৃত্বসহ দেশের সচেতন সব মহলের ঘৃণা কুড়িয়েছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবিলম্বে তথ্য-প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদকে হীন রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক এই নারী ও বর্ণবিদ্বেষী বিকৃত মন্তব্য প্রত্যাহার করে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত, দলের নয়: কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতার কন্যাকে নিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ভার্চুয়াল আলোচনায় নারী বিদ্বেষমূলক যে বক্তব্য দিয়েছে তা তাঁর ব্যক্তিগত মত, দলের বক্তব্য নয়। এই ধরনের বক্তব্য কেন সে দিল, অবশ্যই আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’
আজ সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা সিটির মেয়র-কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
এসময় ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব আবোল-তাবোল বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছেন। তারা ক্ষমতা দখলের যে দিবাস্বপ্ন দেখছে তা দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখনও স্বাধীনতা বিরোধীরা তৎপর। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী মুরাদের নিন্দায় নারী অধিকারকর্মীরা
বিরোধী দল বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতার কন্যাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করাসহ সাম্প্রতিক নানা সমালোচিত মন্তব্যের কারণে বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন নারী অধিকারকর্মীরা।
বেসরকারি সংগঠন নারীপক্ষ এবং ৪০ নারী অধিকার কর্মী আলাদা বিবৃতিতে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে। নারীপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'বর্তমান সরকার দাবি করেন যে তারা নারীবান্ধব। নারীর প্রতি ন্যূনতম সম্মান রেখে কথা বলতে পারেন না সেই ব্যক্তি তারপরও কি করে পদে বহাল থাকেন?'
সম্প্রতি বিরোধী বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার কন্যাকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ। পরে গত শনিবার একটি টিভি টকশোতে উপস্থিত বিএনপির একজন সাবেক নারী এমপিকে 'মানসিক রোগী' বলে অভিহিত করে তার সঙ্গে বিতণ্ডায় লিপ্ত হন তিনি।
এই দুটি ঘটনা নিয়ে গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসানের দল, আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক বলে পরিচিত অনেকেই ফেসবুকে তার সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন।
বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন না মুরাদ হাসান
তবে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ জানান, তিনি এসব বক্তব্য দিয়ে কোনো ভুল করেননি। এগুলো তিনি প্রত্যাহারও করবেন না কিংবা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সরকার ও দলের উপর থেকে কোনো চাপও নেই। তিনি বক্তব্য দেওয়ার আগে তাকে ‘নোংরা ভাষায়’ আক্রমণ করে কথা বলা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মুরাদ হাসান।
পেশায় চিকিৎসক মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে প্রথমে মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের মে মাসে তাকে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।