মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা- ফখরুল: বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ চেতনাবিরোধী- কাদের
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আবারো অভিযোগ করে বলেছে, একাত্তরে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছিল। অথচ ক্ষমতাসীনরা জনগণের ভোটাধিকার, মতপ্রকাশ, কথা বলা এবং লেখার গণতান্ত্রিক অধিকারও কেড়ে নিয়েছে।
আজ (রোববার) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় র্যালির উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র অর্জন করেছিলাম তার লক্ষ্য ছিল আমরা একটি নিরাপদ রাষ্ট্র পাব। আমরা কথা বলার অধিকার পাব, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার পাব। কিন্তু এই সরকার একটি বাকশালী রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে এদেশের জনগণকে জিম্মি করে ক্ষমতায় চেপে বসে আছে।"
তিনি বলেন, "শহীদ রাষ্ট্রপতি জিউর রহমান দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশ রক্ষার জন্য বহুদলীয় গণতন্ত্রের যে সূচনা করেছিলেন সেসবই ধ্বংস করেছে এই সরকার। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের সকল অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে।"
র্যালি শুরুর আগে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকে। দুপুর দেড়টার মধ্যেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একদিকে নাইটেঙ্গেল মোড় অন্যদিকে ফকিলাপুল মোড় পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মী দিয়ে ভরে যায়। বিএনপির বিজয় র্যালিতে আসা নেতাকর্মীরা ‘স্বাধীনতার অপর নাম, জিয়াউর রহমান’, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’- স্লোগানে পুরো নয়া পল্টন ও এর আশেপাশের এলাকা প্রকম্পিত করে তুলে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ টুকু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আযম খান, মহানগর উত্তরের সভাপতি আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের সভাপতি আব্দুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত: কাদের
এদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের সড়ক-সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে নতুন প্রজন্মের কাছে ইতিবাচক রাজনৈতিক কর্মসূচি তুলে না ধরে বিএনপি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তিনি দলটিকে অপপ্রচারের রাজনীতি পরিত্যাগ করে সঠিক ও সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
আজ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতারা 'লাগাতার মিথ্যাচার ও অপপ্রচার করছে' এমন অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাধীনতার ৫০ বছরে কোনো প্রাপ্তি খুঁজে পাননি! মির্জা ফখরুলের এই না পাওয়ার মর্মবেদনার উৎসমূল সম্পর্কে আমরা উপলব্ধি করতে পারি। দেশবাসী জানে, স্বাধীনতাবিরোধী যে অপশক্তি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে এদেশের মানুষের উপর গণহত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাট চালিয়েছিল এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও তাদের স্বপ্নের পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের চক্রান্তে লিপ্ত ছিল সেই পরাজিত অপশক্তি ও তাদের উত্তরাধিকারীদের ষড়যন্ত্রের হিসাব আজ অসার শূন্যতায় পর্যবসিত হয়েছে।
‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার জিয়া-মোশতাকের নেতৃত্বে বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত করার যে গভীর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল- বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির উত্তরাধিকার এবং একাত্তরের ঘাতক-যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি ও তাদের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলামের এই হতাশা ও মর্মবেদনাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ বিকাশের প্রধান অন্তরায়’, যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক সময়ের মঙ্গা-খরা দুর্যোগ-দুর্ভিক্ষ কবলিত, দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশ যখন জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জন করেছে তখন বিএনপি নেতারা কোনো প্রাপ্তি খুঁজে পাবেন না; এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাড়ি দাপিয়ে বিএনপি নেতারা সিলেট গমন করলেন, অথচ প্রশস্ত এই মহাসড়কের দুই পাশের উর্বর সবুজ প্রান্তর এবং বদলে যাওয়া উন্নত জনপদ তাদের চোখে পড়ে না।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।