সংসদে বাজেট পেশ: প্রবৃদ্ধির টার্গেট ৭.৫%, 'লুটপাটের লক্ষ্যে গোঁজামিলের হিসেব!-বিএনপি
(last modified Fri, 10 Jun 2022 12:01:11 GMT )
জুন ১০, ২০২২ ১৮:০১ Asia/Dhaka
  • অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
    অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

বাংলাদেশের  আগামী  অর্থবছরে  প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধার্য করে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 

এ বারের বাজেটে  জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ  অর্থাৎ ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকার  ঘাটতি দেখানো হয়েছে। তবে  এ বিরাট ঘাটতি পূরণের চ্যালেঞ্জের  চেয়েও অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সম্ভাব্য অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে ৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এসব পণ্যের বাইরেও আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মূল্য এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে অভ্যন্তরীণ বাজারে আমদানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের পথ প্রশস্ত করতে একটা গোঁজামিলের হিসেব দেখান হয়েছে যার  সাথে বাস্তবতার মিল  নেই  এবং  এ বাজেট প্রণয়নের এখতিয়ারও নেই  বর্তমান অবৈধ সরকারের। 

সংসদে  বিএনপি দলীয় সদস্যরাও সরকারের বিরাট ঘাটতি বাজেটের সমালোচনা করেন। জাতীয়  পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের  এ বাজেটকে উচ্চাভিলাসী  বলে  অভিহিত করেছেন। 

এদিকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মন্তব্য করেছে, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় প্রস্তাবিত বাজেটে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেই । বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়া দরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ না বাড়িয়ে বরং কমানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে তাৎক্ষণিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। এছাড়াও সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উপস্থিত ছিলেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি মোকাবিলাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তাবিত পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়। সিপিডির প্রস্তাব ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন- চাল, গম ও চিনির ওপর শুল্ক্ তুলে দেওয়ার। কিন্তু শুধু গমে শুল্ক ছাড়ের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, পাচার হওয়া টাকা ফেরতের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা অনৈতিক। এছাড়া সামগ্রিকভাবে বাজেটে যেসব লক্ষ্য ধরা হয়েছে সেগুলো ঠিকই আছে। তবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ পরিপূর্ণ নয়; নীতি কৌশল অসম্পূর্ণ ও অপর্যাপ্ত।

পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর এ বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের বিষয় উল্লেখ করেছেন।  তার পর্যবেক্ষণ  মতে সরকারর পক্ষে  এবারের  রাজস্ব ঘাটতি মেটানোটাই কঠিন হবে। এছাড়া প্রণোদনার অর্থ মেটানোটাও বেশ কঠিন হতে পারে। বর্তমানে দেশের অর্থ বাজারে অস্থিরতা চলছে। তাই অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে কতটা অর্থ নেওয়া যাবে তাও অনিশ্চিত। বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিদেশ থেকে ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার অর্থ লাগবে উল্লেখ করে এ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ  বলেন, কীভাবে এটা সংস্থান হবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোন উল্লেখ নেই। বিদেশ থেকে এটা বিনিয়োগ না ঋণ হিসেবে নেওয়া হবে সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়।

ওদিকে, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের যে প্রত্যাশা সেটির প্রতিফলন হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোবাবিলায় বাংলাদেশের জন্য অগ্রাধিকারগুলো নির্ধারণ করা হয়নি। কোন পদ্ধতিতে এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে সেগুলো সুস্পষ্ট নয়। ঘাটতির লক্ষ্য পূরণে সরকারকে ব্যাংক-ঋণ নির্ভর হতে হবে। সরকার ব্যাংক-ঋণ বাড়ালে সেটি ব্যক্তি-ঋণের ওপর  প্রভাব ফেলে। এর প্রভাবে বিনিয়োগ সংকুচিত হতে পারে।#

পার্সটুডে/এআরকে/১০

ট্যাগ