সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির ‘কিছুটা’ উন্নতি, বাড়ছে যমুনার পানি
(last modified Sun, 19 Jun 2022 09:25:46 GMT )
জুন ১৯, ২০২২ ১৫:২৫ Asia/Dhaka
  • সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির ‘কিছুটা’ উন্নতি, বাড়ছে যমুনার পানি

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাকবলিত সিলেট-সুনামগঞ্জের পরিস্থিতির ‘কিছুটা’ উন্নতি হয়েছে। গতরাত থেকে আজ (রোববার) সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় কিছু জায়গায় পানি কমেছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী সোম ও মঙ্গলবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থা থেকে কিছুটা উন্নতির দিকে যাবে।

ওদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বন্যায় বিপর্যস্ত সিলেটসহ ২০টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে; সঙ্গে হতে পারে বজ্রবৃষ্টি। পূর্বাভাসে বলা হইয়েছে, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে; সঙ্গে থাকতে পারে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি।

আজ সিলেটের বিভিন্ন সড়ক থেকে পানি কিছুটা নেমে গেছে। নিচতলা থেকে পানি সরে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়েছে এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে। ফলে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছেন চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনরা।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানিয়েছেন, সিলেট সদরের দিকে নদীর পানি কিছুটা কমলেও উজানে পানির উচ্চতা বেড়েছে। এই পানি বিকেল নাগাদ ভাটিতে নেমে আসলে এদিকেও পানি বাড়বে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত কমায় নদীর পানিও কিছুটা কমেছে। বন্যার পানিও কিছুটা কমেছে বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু গেজ স্টেশনে (পানির উচ্চতা পরিমাপের জায়গা) অনেক পানি থাকায় সেখানে গিয়ে পানির উচ্চতা জেনে আসাটা কিছুটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তাই তথ্য সংগ্রহে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী

হাওরে আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে গিয়ে বন্যায় আটকেপড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীকে অবশেষে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সুরমা নদীর চর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার সকালে এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

সুরমা নদীতে আটকেপড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়েব আহমেদ জানান, আমরা গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার এলাকার একটি ফেরিঘাটে আশ্রয় নিয়েছিলাম এবং সকাল পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেছিলাম। আজ সকাল ৮টার পর সেনাবাহিনী আমাদের উদ্ধার করতে আসে।

জানা গেছে, গতকাল শনিবার দুপুর ২টার দিকে পুলিশ লাইন্স থেকে ‘কপোতাক্ষ অনির্বাণ ট্যুরিজম বোট’ নামের একটি লঞ্চে করে ঢাবির ৪৫ জন ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী সিলেট শহরের দিকে রওনা দেন। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের কাছে সুরমা নদীর চরে আটকা পড়েন। ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের লঞ্চটি একদিকে হেলে পড়েছে। বিকল হয়ে গেছে লঞ্চের দুটি ইঞ্জিন।

বাড়ছে যমুনার পানি

উজান থেকে নেমা আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর প্রভাব পড়েছে যমুনা নদীতে। এতে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। জেলার কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা পানি শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় আরও ৪৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের মানুষ।

এ ছাড়া,  বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় সব নদ-নদীর পানি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, বাঙ্গালী, ঘাঘট, করতোয়ায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এসব নদী এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। কিছু কিছু এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যে যমুনা নদীর পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। শনিবার বিকাল ৩টায় যমুনার মথুরাপাড়া স্টেশনে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। যা বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপরে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২ সেন্টিমিটার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা এবং ধুনট যমুনা নদী তীরবর্তী উপজেলা। তবে গাবতলী উপজেলার সারিয়াকান্দির সঙ্গে লাগোয়া হওয়ায় এই উপজেলারও বেশ কিছু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়।

জানা গেছে, যমুনার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদী তীরবর্তী নিচু এলাকার বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কর্নিবাড়ী, বোহাইল, কাজলা, চন্দনবাইশা, সারিয়াকান্দি সদর, হাটশেরপুর, কুতুবপুর ও কামালপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এবং এসব এলাকার রোপা, মাশকলাই, মরিচ, স্থানীয় জাতের গাঞ্জিয়া ধানসহ ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করেছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, আরও ২/৩ দিন ২০-২৫ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়তে পারে। আগামী ৭ দিন পর্যন্ত নদীর পানি বিপদসীমার উপরেই থাকবে। এবার নদীর পানি বিপদসীমার সর্বোচ্চ ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা। এতে করে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলগুলোই প্লাবিত হবে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৯

ট্যাগ