বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
(last modified Sat, 02 Jul 2022 12:03:10 GMT )
জুলাই ০২, ২০২২ ১৮:০৩ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন, সংখ্যালঘু শিক্ষকদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা এবং পুজা মণ্ডপে হামলা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের 'মিথ্যাচারের' প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

আজ (শনিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর চলমান সহিংসতা ও নির্যাতন অস্বীকার করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে যে বিবৃতি দিয়েছেন তাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হতাশ হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এমন মিথ্যাচারের দায় স্বীকার করে অনতিবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় আগামী সংসদ নির্বাচনে যেকোনো দল থেকে তাকে প্রার্থী করা হলে সংখ্যালঘু ভোটাররা তাকে বর্জন করবে বলে হুঁশিয়ার করেন নেতারা।

সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে নয়াদিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে।

এ কে আব্দুল মোমেন

আজকের প্রতিবাদ সমাবেশে সংখ্যালঘু নেতারা বলেন, গত দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ দেশব্যাপী ২৬টি জেলায় পূজামণ্ডপ ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও তাণ্ডবের সময়ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই রকম মিথ্যাচার করেছিলেন।

ঐক্য পরিষদের নেতারা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে বারবার জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় নেতা ও কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। আর সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে অস্বীকারের প্রবণতা থেকে প্রশ্ন জাগে তিনি প্রকারান্তরে মন্ত্রণালয়ে কার স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার এই ধরনের মিথ্যাচার ও ঘটনাসমূহকে অস্বীকারের প্রবণতা থেকে মনে হয়, তিনি প্রকারান্তরে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এহেন ভূমিকায় দ্বিগুণভাবে উৎসাহিত হয়ে সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তরা শিক্ষক সম্প্রদায়সহ সাধারণ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন নিপীড়ন অব্যহত রেখেছে বলে অভিযোগ করেন হিন্দু নেতারা। এ জাতীয় সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিপীড়নের আশু অবসান এবং সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান নেতারা।

সমাবেশে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ঊষাতন তালুকদার বলেন, এ দেশে এখন সংখ্যালঘু শিক্ষকদের গলায় জুতার মালা পরানো হয়, তাও আবার প্রশাসনের উপস্থিতিতে। সরকার ভাবছে তাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সোনার বাংলা গড়তে হলে দেশের সব মানুষের অধিকার, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাঁচাতে হলে সরকারকে বাধ্য করতে হবে যে তারা এসব ঘটনার বিচার করে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আরেক সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘যে বাংলাদেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সে বাংলাদেশ আমরা পাইনি। দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, পাকিস্তানি ধারার অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে। নড়াইলে শিক্ষককে অপমান করা হয়েছে, শিক্ষককে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। এমন বাংলাদেশ কেউ চায় না। সবাই মিলে দেশের বিভিন্ন স্থানে হওয়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদ করতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে।’

নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়ে পরিষদের আরেক সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, সমাজের, দেশের মানুষ গড়ার কারিগরদের আজ অপদস্থ করা হচ্ছে, শিক্ষকদের খুন করা হয়েছে। এ লজ্জা রাখার জায়গা নেই। এসব ঘটনার খেসারত দিতে হবে এ জাতিকে।

পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতিমণ্ডলী সদস্য সুব্রত চৌধুরী বলেন, সারা দেশে অসংখ্য শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। হেফাজতের নির্দেশে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করা হয়েছে। দেশে মানবিকতা, মূল্যবোধ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও দুঃখ নিয়ে বলতে হচ্ছে, এমন বাংলাদেশ কেউ চায় না।

এ সময় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র ও নেত্রী নূপুর শর্মা কর্তৃক  মহানবীর বিরদ্ধে অশালীন মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের  সংখ্যালঘু বলেন, উপমহাদেশের সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ জনগণ এতে নিদারুণভাবে ক্ষুদ্ধ ও মর্মাহত হয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মন্তব্যকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেন, ধর্মীয় উস্কানিমূলক যেকোনো মন্তব্য বা উক্তি স্বাধীন ধর্মাচারের ও ধর্মানুশীলনের পরিপন্থী।

সমাবেশ থেকে আগামী ১৬ জুলাই বিকেল ৩টায় সারাদেশে নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি দল কর্তৃক সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নসহ একই দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি তোপখানা সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি (হিন্দু) নিম চন্দ্র ভৌমিক, সভাপতি (বৌদ্ধ) ঊষাতন তালুকদার, সভাপতি (খ্রিস্টান) নির্মল রোজারিও, সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার ও তাপস কুমার পালসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১