‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা না থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয় না’
(last modified Sun, 17 Jul 2022 07:12:11 GMT )
জুলাই ১৭, ২০২২ ১৩:১২ Asia/Dhaka
  • কাজী হাবিবুল আউয়াল
    কাজী হাবিবুল আউয়াল

বাংলাদেশের ২০২৩ সালের শেষ অথবা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে জাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে সহায়তা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। 

আজ (রোববার) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এ সংক্রান্ত সংলাপে অংশ নিয়ে সূচনা বক্তব্য তিনি বলেন, ইতোপূর্বে আমরা বহুবার বলেছি, সকল রাজনৈতিক দল বিশেষত প্রধান দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া খুবই প্রয়োজন। কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অবশ্যই বাধ্য করতে পারব না। তবে সকল দলকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে আমরা বারবার আহ্বান করে যাব। সে প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে সব দলকে আহ্বান জানাচ্ছি সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা না থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয় না। পক্ষ-প্রতিপক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম, কারচুপি, দুর্নীতি, অর্থ শক্তির বৈভব ও পেশি শক্তির প্রয়োগ ও প্রভাব বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন কমিশন সকলের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। অন্যথায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রয়াস যতই আন্তরিক হোক, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। সেটা কাম্য নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। একটি মাত্র দল ৩০০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সাংবিধানিকভাবে কোনো বাঁধা নেই। তবে ইতিহাস বলে, সেক্ষেত্রে অচিরেই গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হবে। স্বৈরতন্ত্র মাথা জাগিয়ে তুলবে। গণতন্ত্রের আরাধ্য পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে দুরূহ। 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নানাবিধ আশা, হতাশা ও তর্ক-বিতর্ক চলছে। বিতর্কগুলো নিরসন হওয়া প্রয়োজন। ইতিপূর্বে কমিশনের পক্ষ থেকে আমরা কয়েটি উন্মুক্ত সংলাপ করেছি। এতে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের সক্ষমতা ও সাধ্যের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা নির্ধিদায় তা স্বীকার করে নিয়ে কারণগুলো বারবার ব্যাখ্যা করে বলেছি।

তিনি আরও বলেন, ইভিএম নিয়ে পাঁচ-সাতটি কর্মশালা করার পর আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি। কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি। ইভিএম এবং ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আরপিও ২৬ অনুযায়ী, কারচুপির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো প্রতিপালন করা হলে কারচুপি প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন সিইসি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইভিএম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমরা সত্যি উদ্বিগ্ন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে প্রতিরোধ কতটা সম্ভব হবে। আমাদের প্রত্যাশা জাতীয় নেতৃবৃন্দ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও মতৈক্য হয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর নিরসন করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি সৃষ্টি করবেন বলে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নতুন এ নির্বাচন কমিশন প্রধান বলেন, অরাজনৈতিক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগত সংগঠিত হয়ে এগিয়ে এসে জাতির একটি সংকটময় মূহুর্তে তাদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান প্রয়োগ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সংলাপে আহ্বান করে আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন। আমরা নির্বাচন করতে চাই অনুকূল পরিবেশ ও শক্ত ভিত্তির ওপর। এজন্য সকলের সহায়তা কাম্য।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে দেশের ৩৯ রাজনৈতিক দলকেই সংলাপের সময় দিয়ে আমন্ত্রণ জানায় ইসি। প্রথম দিনের প্রথম অংশে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। এতে দলের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এছাড়া অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সংলাপে অংশ নেন। আজ বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) বৈঠকে অংশ নেবে। সংলাপ চলবে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত।#

পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ