কোনও দল নির্বাচনে না আসলে আমরা বাধ্য করতে পারব না: সিইসি
(last modified Thu, 21 Jul 2022 11:35:06 GMT )
জুলাই ২১, ২০২২ ১৭:৩৫ Asia/Dhaka

নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের ধারাবাহিকতায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আজ বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনটা কিন্তু হেলাফেলার জিনিস নয়। কাজেই আমরা মনে করি, নির্বাচনটা জনপ্রতিনিধিত্বমূলক এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন হওয়া উচিত। এজন্য একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন, যেখানে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবে।

আজ (বৃহস্পতিবার) নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপে সিইসি  বলেন, ‘নির্বাচনে সব দলকে আহ্বান করছি এবং করে যাবো। নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা যে দায়িত্ব নিয়েছি আইন ও সংবিধানের অধীনে, সেই দায়িত্ব অনুযায়ী আমাদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। কোনও দল না আসলে আমরা বাধ্য করতে পারব না। তবে আমরা বারবার আপনাদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করছি।’

সিইসি আরও বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানোর চেষ্টা করবো। পেশীশক্তি যাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, এজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাইবো। নির্বাচন কমিশন একা করবে না। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এমনকি সেনাবাহিনীরও অংশগ্রহণ প্রয়োজন হতে পারে। আমরা সেই অর্থেও কাজ করব। নির্বাচন সংক্রান্ত আইনে আমাদের বেশ খানিকটা ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আমরা সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করে যেন সম্ভাব্য সহিংসতা বা পেশি শক্তির প্রয়োগ হ্রাস করতে পারি।’

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে যে সংশয়, আস্থাহীনতা আছে, তা নিয়ে অবহিত আছি। আমরা অন্ধভাবে ইভিএম নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে এর যে কিছু ভালো দিক আছে, মন্দ দিক আছে- সেটাকে আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। সেই সম্ভাব্যটা কতটা বস্তুনিষ্ঠ তা পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করছি।’

'আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করে'

এদিকে, সরকারের সড়ক-সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ সব অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, ‘আশা করি, সব দলের অংশগ্রহণে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা কারও ষড়যন্ত্রের মুখে থেমে থাকবে না, অতীতেও থাকেনি, আগামীতেও থাকবে না। গণতন্ত্রের ট্রেন কারও জন্য অপেক্ষা করবে না।’

আজ এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।

বিএনপিসহ দেশের একটি চিহ্নিত মহল মনস্তাত্ত্বিকভাবে ‘ডিনায়াল সিনড্রোম’-এ ভুগছে অভিযোগ করে কাদের বলেন, ‘দেশের সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন, জনমত, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি কোনও কিছুর প্রতি তাদের কোনও ধরনের আস্থা নেই। বরবারই তারা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের পথ বেছে নেয়। তারা সব সময় নির্বাচন ছাড়া হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের অপচেষ্টা চালায়।’

বিবৃতিতে কাদের বলেন, ‘বিএনপি সব সময় অবৈধভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে ঐতিহ্যগতভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং বার বার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিরোধের মুখে তারা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে বিএনপি নেতাদের সম্প্রতিক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ধ্বংসের দায়ও বিএনপির। বিএনপি তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে নির্লজ্জভাবে দলীয়করণ করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করেছিল। দলীয় রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদটি পর্যন্ত হাইজ্যাক করেছিল বিএনপি। বিএনপি তাদের শাসনামলে দেশের সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ও অসংবিধানিক বলে চূড়ান্ত রায় প্রদান করেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, বিএনপি নামক দলটি কখনই গণতন্ত্র চর্চা করে না এবং দল পরিচালনায়ও তারা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে না। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে না, যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত হয়— কেবল তারাই বলতে পারে ‘নির্বাচন কমিশন চিনি না, নির্বাচন কমিশন বুঝি না, নির্বাচন কমিশন মানি না।’

বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন প্রত্যাশা করে। আমরা প্রত্যাশা করি, সব দলের অংশগ্রহণে সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা কারও ষড়যন্ত্রের মুখে থেমে থাকবে না, অতীতেও থাকেনি, আগামীতেও থাকবে না। গণতন্ত্রের ট্রেন কারও জন্য অপেক্ষা করবে না।’

'একটি মহল নির্বাচনকে বানচাল করতে অরাজকতা সৃষ্টি করে'

ওদিকে, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই একটি মহল নির্বাচনকে বানচাল করতে নানান ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করে। নড়াইলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলার ঘটনা এরই বহিপ্রকাশ। ঘটনা ছোট নাকি বড় সেটি মুখ্য বিষয় নয়। ঘটনাটি ঘটলো কেন এটি হচ্ছে সরকারের মূল প্রশ্ন। আমরা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বাড়াতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক কর্মসূচির অংশ হিসেবে একটি চুক্তি সই অনুষ্ঠান শেষে আজ মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালেন তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলেছি। ডিসি ও ইউএনও মাঠে কাজ করছেন। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় জনগণের মাঝে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বাড়াতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী একবছর প্রচারধর্মী এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে। মন্ত্রণালয়ের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় একটি মিডিয়া প্রতিষ্ঠান, একটি আইসিটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। এ প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয় একটি চুক্তি সই করেছে।

কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মিডিয়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘বাংলার ঢোল লিমিটেড’ এবং আইসিটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রিভ সিস্টেম লিমিটেডেরে মধ্যে এই চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ‘ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ’  প্রকল্পের পরিচালক আবদুল্লা আল শাহিন, বাংলা ঢোল লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক এবং রিভ সিস্টেম লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগ অংশীদার অ্যাডি সফট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচলাক সাকিব রাব্বানী নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২১

 

ট্যাগ