চা-শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার: মজুরি ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী
ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আপাতত ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশের ২৪১টি চা বাগানের সোয়া লাখ শ্রমিক। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর থেকে ফিরে বৈঠক করবেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে। এ সময় তিনিই ঠিক করবেন মজুরি।
গতকাল (রোববার) রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের এক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
তাতে বলা হয়, মজুরি বাড়ানোর দাবি নিয়ে শ্রমিকরা দুর্গাপূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলবেন, যা আয়োজনের উদ্যোগ নেবে জেলা প্রশাসন। আর বাগান মালিকরা বাগানের প্রচলিত প্রথা অনুসারে ধর্মঘটকালীন মজুরি শ্রমিকদের পরিশোধ করবেন। এরপর আজ সকালেই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন।
দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন শ্রমিকেরা। প্রথম চারদিন শ্রমিকরা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা।
১১ দিন পর গত ২০ আগস্ট শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকায় রাজি হয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু আন্দোলনকারী শ্রমিকদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে রোববার রাজপথে নামে।
এই প্রেক্ষাপটে রোববার রাতে আবার চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নাহিদুল ইসলাম। এ সময় চা- শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, চা-শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখে তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন এবং কাজে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ‘সম্মান’ জানিয়ে ১২০ টাকা মজুরিতেই সোমবার থেকে কাজে যোগ দিচ্ছেন তারা।
যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে বিজয় ছাড়াও রয়েছেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেণ পাল, সহসভাপতি পংকজ চন্দ্র, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালন্দি প্রমুখ।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “মামনীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তার সম্মানে চা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি নং-বি ৭৭ তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আগামীকাল ২২/০৮/২২ কাজে যোগ দেবেন। আপাতত চলমান মজুরি অর্থাৎ ১২০/-(একশত বিশ) টাকা হারেই শ্রমিকগণ কাজে যোগদান করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্স পরবর্তীতে মজুরির বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার পর চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে মর্মে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ দাবি জানান।
“আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার পূর্বে মামনীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হওয়ার জন্য চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আবেদন করেছেন যা জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উপস্থাপিত হবে। চা শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিসমূহ লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করবেন। জেলা প্রশাসক প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনার জন্য দাবিসমূহ প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন।"
বাংলাদেশ বিশ্বের তিন শতাংশ চা উৎপাদন করে। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশি চায়ের বাজারের মূল্য প্রায় ৩ হাজার পাঁচশ’ কোটি টাকা। জিডিপিতে এই শিল্পের অবদান প্রায় ১ শতাংশ।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।