সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত: রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
(last modified Wed, 24 Aug 2022 12:16:51 GMT )
আগস্ট ২৪, ২০২২ ১৮:১৬ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আজ (বুধবার) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ইভিএমে যাওয়ার একটা বড় সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের। ভোটটাকে হ্যান্ডল করবে রাজনৈতিক দল নয়, ভোটকে হ্যান্ডল করবে ইসি। যেসব ভোটার কেন্দ্রে আসেন, তাঁরা যেন আরও ভালোভাবে ভোট দিতে পারেন, তা বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এ সময় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমাদের পাঁচ মাসের বেশি সময় হয়ে গেল। আমরা ইভিএম নিয়ে চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। প্রথম থেকেই বলেছিলাম পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে, কতটা নির্ভরযোগ্য, পরখ করে দেখার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন দল, টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের ডেকেছি, অনেকের মতামত নিয়েছি। এর ওপর নির্ভর করে, কমিশন সব দলের মতামত বিবেচনা করে শেষ পর্যন্ত ১৫০-১৫০ এভাবে ভাগ করে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্তে নির্বাচনে সংকট ঘনীভূত হবে কি না, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘ভবিষ্যৎটা আমরা বলতে পারব না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আগের নির্বাচনগুলো নিয়েও আপনারা সংকটের কথা বলেছেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে সংকট হবে কি না, তা প্রেডিক্ট করার সাধ্য নেই।’

সিইসি আরও বলেন, ‘আপনারা ওয়েট করেন, আমরাও ওয়েট করি, দেখি সংকট কী হয়।’

স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আজ (বুধবার) নারী নেত্রী আইভি রহমানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর বনানীতে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘সংলাপে আমরা ৩০০ আসনেই ইভিএম চেয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন অর্ধেক আসনে সম্মত হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।

ইভিএমে কোনও ঝামেলা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা ইভিএমকে ভয় পায়, আমি জানি না, তারা জনগণের ভোট নিরপেক্ষ হোক, কারচুপিমুক্ত হোক— এটা চায় কিনা।’

নির্বাচন কমিশনশেখ হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ: রিজভী

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএম-এ ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন যে শেখ হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ, তা আবারও প্রমাণ করেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার কেন বিদেশিদের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছেন। সেটা আবারও প্রমাণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

আজ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন।

দায় নির্বাচন কমিশনের: ডা. জাফরুল্লাহ

সর্বোচ্চ ১৫০ আসনের সকল কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ইভিএমের কারণে যদি দলগুলো ভোট বর্জন করেন তাহলে এই দায় কমিশনের।

বুধবার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ইভিএম নিয়ে বেশ কিছু দলের বিরোধিতা রয়েছে। এখন যদি তারা ভোট বয়কট করে তাহলে সেই দায় ইসির ঘাড়ে চাপবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকার যেমন দায়ী হবে, ইসিও দায়ী হবে। আমার মনে হয়, ইসি যে এখানে শতভাগ একমত হয়েছে তা নয়। উনারা সরকারি চাপে রয়েছে বলে ভাবছেন।

সিইসির উদ্দেশ্যে তিনি জানান, দেড়শ’ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত ভুল কাজ হয়েছে। এর ফলে হয়ত নির্বাচনই হবে না। নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে বিএনপিকে আনার চেষ্টা রয়েছে। সবাই মনে করে, ইভিএমে আরেকটা চক্রান্ত।

তিনি বলেন,  তারা দেড়শ’ আসনে ইভিএম না করে তিনশ’ টাতে করতে পারে। কিন্তু মাত্র পাঁচটা করে কেন্দ্রে হবে।

কারচুপি করতেই ইভিএমে ভোট করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা: জি এম কাদের

এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, ‘দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনের ওপর সাধারণ মানুষের কোনো আস্থা নেই। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে কারচুপি করতেই ইভিএমে ভোটগ্রহণ করতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।’

কিসের ভিত্তিতে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট- প্রশ্ন মেননের

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ১৪ দলের শরিক সংসদ-সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন তার পূর্বসূরীদের পথেই হাঁটছে, যা শুভ লক্ষণ নয়। এতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিসের ভিত্তিতে ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট হবে-তা স্পষ্ট করেনি ইসি। এটা পরিস্কার বা খোলাসা করে বলা উচিত। তা না হলে নির্বাচনে কারসাজি করার যে বিতর্ক, তা থেকেই যাবে। নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা নেই: অলি আহমদ

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেছেন, ‘সরকারের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার লক্ষ্যেই এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা জনগণের জন্য কিছু করবে সেটা আমরা মনে করি না। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এমনকি সাধারণ মানুষেরও এ কমিশনের প্রতি আস্থা নেই। তারা সরকারের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে। তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

ইভিএমে ভোট নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার আবারও ডাকাতি করে ক্ষমতায় যেতে চায়। এবার তারা ভোট চুরির বাক্স ইভিএমকে বেছে নিয়েছে। ক্ষমতাসীনদের এ চাওয়াকেই বাস্তবায়ন করছে ইসি। তারা এখন পর্যন্ত যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা কোনোটাই জনগণের পক্ষে নেয়নি। সবশেষ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতকে উপেক্ষা করে তারা ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসির কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে, তারা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হিসাবে কাজ করছে।’

ইসির ওপর আমাদের আস্থা নেই: সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এটা বর্তমান রাজনৈতিক সরকার কর্তৃক ইসির ওপর চাপিয়ে দেওয়া একটা সিদ্ধান্ত। সরকারের চাপিয়ে দেওয়া এ সিদ্ধান্ত নাকচ করার সুযোগ এমনকি আইনি সাহস ইসির নেই। এসব কারণে ইসির ওপর আমাদের আস্থা নেই।’

ইসিকে নিরপেক্ষভাবে হাঁটার সুযোগ  সরকার দেয়নি: মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তারা সরকারের দেখানো পথেই হাঁটবে। ইসিকে নিরপেক্ষভাবে হাঁটার সুযোগ তো সরকার দেয়নি। ইভিএম বাতিল করা হলো এটা বলার সাহস ইসির নেই। তাদের এটাই বলতে হবে। তারা করতে থাকুক তাদের কাজ আমরা করব আমাদের কাজ।’ তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে ইসির কিছু করার ক্ষমতা নেই। তারা সেটা করতেও পারবে না। সরকার যা চাইবে তারা সেটাই করবে।’#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৫

ট্যাগ