আওয়ামী লীগের তোপের মুখে সিইসি
গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধে হঠকারি কিছু করেনি কমিশন: সিইসি
গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ স্থগিত করে সরকারি দলের তোপের মুখে পড়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার পদত্যাগের দাবিতে আজ ফুলছড়িতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
এ প্রেক্ষাপটে আজ (বৃহস্পতিবার) অপরাহ্নে রাজধানীর নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে তার সিদ্ধন্তের স্বপক্ষে দৃঢ়তা ব্যক্ত করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন বন্ধে হঠকারি কিছু করেনি কমিশন। অনিয়ম দেখায় নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটি সিইসির একক সিদ্ধান্ত নয়। অনিয়মের বিষয়ে সতর্ক করা হলেও প্রিজাইডিং অফিসার ব্যবস্থা নেয়নি, তাই বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।
অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কমিটি গঠন হয়েছে। সাত দিনের মধ্য রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারপর এই নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্যা, বুধবার (১২ অক্টোবর) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল। দুপুর সোয়া ২টায় রাজধানীতে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সিসিটিভি ফুটেজে অনিয়মের চিত্র দেখে ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। প্রভাব বিস্তার ও ভোট দিয়ে দেয়াসহ নানা অনিয়মের কারণে দুপুর নাগাদ ৫১ কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ঢাকায় বসে, জাহাজে বসে, না ঘরে বসে সিদ্ধান্ত নেব- সেটা বিষয় নয়, কমিশন চাইলে আইন অনুযায়ী যেকোনো জায়গায় বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশন চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেই নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যদি ইসির সাথে বসে নির্বাচন দেখতেন, তিনিও বুঝতেন।
বুথে সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আগের অভিযোগের (অনিয়মের) প্রেক্ষিতেই বুথে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগের অসন্তোষ
গাইবান্ধার উপ-নির্বাচন স্থগিত করার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকায় বসে গোপন বুথের যে ছবি ধরা পড়েছে, তার ভিত্তিতে নির্বাচন বন্ধ করা কতটা যৌক্তিক? কতটা বাস্তবসম্মত? কতটা আইনসম্মত? ইসিকে তা ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাই না। তবে অতীতে কখনো এরকম নজিরবিহীন কিছু ঘটেছে বলে জানা নেই। কী কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হলো, তা স্পষ্ট নয়। প্রিসাইডিং অফিসাররা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশে ১৪৫টি কেন্দ্রের ৫১টির ভোট বন্ধ করেছেন। বাকি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসাররা সবাই একবাক্যে বলেছে ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি।
এ ছাড়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মন্তব্য করেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোট স্থগিত হওয়ায় জনগণ হতবাক হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্তে এটা প্রমাণ হয়েছে, যে বিএনপি যে তত্ত্বাবধায়কের কথা বলে সেটার প্রয়োজন নেই। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেখানকার ভোটার এই সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছে। কোথাও কোনো গণ্ডগোল হয়নি। কোনো অভিযোগ ছিল না। সহিংসতার কোনো ঘটনা হয়নি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিইসি ৫০০ কিলোমিটার দূরে বসে ভোট বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে জনগণ হতাশ হয়েছে। কারণ এ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। যে কারণে সিইসির নির্বাচন বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবোধক। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইসি নিজেদের বিতর্কিত করেছে।’
সিইসি’র পদত্যাগের দাবিতে আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ
ওদিকে, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের পদত্যাগের দাবিতে আজ ফুলছড়িতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গাইবান্ধা-ফুলছড়ি সড়কের ফুলছড়ি উপজেলা চত্বরের সামন থেকে নৌকার প্রার্থী মাহমুদু হাসান রিপনের পক্ষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা। পরে উপজেলা গেট সংলগ্ন সড়কে আধা ঘণ্টা অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। এসময় উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়েও বিক্ষোভ করেন নেতাকর্মীরা। এতে সড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন সব যাচাই বাছাই না করে অতি নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে ভোট বন্ধ করে দিয়েছে। দ্রুত নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও ভোটের ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান তারা।
এর আগে বুধবার ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তের পরপরই ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার বেশ কিছু স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়েও প্রতিবাদ করেন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
এর আগে গতকাল বুধবার ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ বিপুল ভোটে আবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বিএনপি এবং দেশবিরোধীদের বিভিন্ন অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।