অক্টোবর ২৪, ২০২২ ১৭:১৭ Asia/Dhaka

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং রুপ নিচ্ছে সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রমে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে এমন তথ্যই মিলছে। সর্বশেষ আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হচ্ছে, সিত্রাংয়ে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণত ট্রপিক্যাল সাইক্লোনে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে।

অন্যদিকে বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১০ হলেই সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে সিত্রাং। এমন পরিস্থিতিতে উপকূলীয় এলাকায়সমূহ দূর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার ও স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। তবে ১৩ জেলার নদী ও সমুদ্র উপকূলের বাসিন্দারা আতঙ্কিত সময় পার করছেন।

ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সোমবার দুপুরে। এর প্রভাবে দেশের ৩ টি বিমান বন্দর বন্ধের নোটিশ দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আবহাওয়ার পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ড. আবুল কালাম মল্লিক রেডি তেহরানকে জানান, সবশেষ তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ অতিক্রম করার সময়ে এর বায়ুচাপের প্রভাবে ৫-৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এর কারণে ভারি বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশংকা করছে আবহাওয়া বিভাগ।

উপকূলের জেলা বরগুনার পাথরঘাটা থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'আস্থা'র সভাপতি শফিকুল ইসলাম খোকন রেডিও তেহরানকে জানান, উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পিপিপিসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো কাজ করছে দিনরাত। তবে বরাবরের মতো বাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনিহা দেখা যাচ্ছে।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক নির্বাহি প্রকৌশলী ও জলবায়ু বিশ্লেষক আমিরুল ইসলাম রেডিও তেহরানকে বলেন, এ ধরনের ঝড়ো আবহাওয়ায় উপকূলের জেলাগুলোর সুরক্ষার জন্য প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও সংস্কারের অভাবে ২/৪টি স্থানের বাঁধে ফাটল থাকতে পারে। যেখান থেকে পানি ঢুকে পড়লে ব্যাপক ক্ষতি হবে রবিশষ্য ও আমন ধানের।

এ বিষয়ে  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আতিকুল হক রেডিও তেহরানকে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বেড়েছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই জানমালের ক্ষতি কমাতে সবধরনের ব্যবস্থাই নিয়েছেন তারা। বিশেষ করে দূর্যোগপ্রবণ উপকূলীয় এলাকা ও বর্ষণকবলিত পাহাড়ি এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ সাধারণ বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে নিতে কাজ করছে তাদের কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবীরা। এ কাজের জন্য প্রায় ৭৬ হাজার প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবী মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও জানান তিনি। যতবেশি মানুষকে যত দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা যাবে তত দুর্যোগের ক্ষতির পরিমাণ কমবে বলে মনে করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আতিকুল হক। অতিবর্ষণে পাহাড়ে সম্ভাব্য ভূমি ধস রোধ করতে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে বলেও রেডিও তেহরানকে জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

আর পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ রেডিও তেহরানকে বলেন, অবৈধপাহাড় দখল ও বনকেটে পাহাড় ধ্বংসের ফলে এ ধরনের বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। এসব কারণে পাহাড় ধসের মত দুর্যোগ মোকাবেলা করতে স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া আছে। অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে যে কোন পরিস্থিতি সমাধানের জন্য জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ।#   

পার্সটুডে/নিলয় রহমান/আশরাফুর রহমান/২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ