'দেশবিরোধী আখ্যা দিয়ে সাংবাদিক দমন, স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য চরম হুমকি'
(last modified Wed, 03 May 2023 11:37:37 GMT )
মে ০৩, ২০২৩ ১৭:৩৭ Asia/Dhaka

গণমাধ্যম যেকোনো রাষ্ট্রে গণমানুষের সারথি। অসহায় মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, যন্ত্রণা, হতাশা আর দুর্দশা, অধিকারহরণের চিত্র তুলে ধরে সমাধানের পথ ত্বরান্বিত করে গণমাধ্যম। আবার দুর্নীতি, অপরাধ, অনাচার, অবিচার তথা সমাজের নেতিবাচক দিকগুলোর বিরুদ্ধেও হবে সোচ্চার। আর এ সোচ্চার হতে একমাত্র স্বাধীন গণমাধ্যমই পারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সঙ্গে গণমানুষের অধিকারের সম্পর্ক খুঁজতে গেলে তাকাতে হবে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের দিকে। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ ঘোষণা প্রদান করা হয়। এ ঘোষণাপত্রের ১৯ তম ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষেরই মতামত পোষণ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। অবাধে মতামত পোষণ এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে যেকোনো মাধ্যমে ভাব ও তথ্য জ্ঞাপন, গ্রহণ ও সন্ধানের স্বাধীনতাও এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো 'জাতির বিবেক' খ্যাত এই গণমাধ্যম তার অবস্থান থেকে কতটুকু নিরপেক্ষ বা স্বাধীনভাবে তার দ্বায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমসমূহের অবস্থা কেমন?

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে আরও এক ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। ফ্রান্সভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এর ১৮০টি দেশ নিয়ে করা রিপোর্টে বাংলাদেশের এবারের অবস্থান ১৬৩তম।

বুধবার (৩ এপ্রিল) গণমাধ্যম সূচকটি প্রকাশ করা হয়। ২০২৩ সালের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৩৫.৩১, যা গত বছরও ছিল ৩৬.৬৩। এর আগে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১তম। ২০২১ সালে ছিল ১৫২তম এবং ২০২২ সালে ১৬২তম। এবার আরও এক ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হলো ১৬৩তম।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক তৈরিতে আরএসএফ মূলত ৫টি বিষয় বিবেচনায় নেয়। সেগুলো হলো- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট ও নিরাপত্তা।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের এই অবস্থান নেমে যাওয়াকে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে আতঙ্কজনক অবনমন বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি। এবারে দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে: নজরদারির আওতায় গণমাধ্যম। মুক্ত গণমাধ্যমের আলোচনা এলে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকেই ধরা হয় প্রথম ও প্রধান সূচক। যেখানে বাংলাদেশের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন খুবই আলোচিত। অভিযোগ রয়েছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে এ আইন। যা বাতিলের দাবি রয়েছে বিভিন্ন মহলে। তবে আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)'র এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল হবে না, তবে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইনটি সংস্কার হবে।

তবে আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, সংশোধন কিংবা সংস্কার নয়, যেকোন মূল্যে এই নিবর্তনমূলক কণ্ঠরোধী আইনকে বাতিল করতে হবে। এদিকে মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অবস্থা জানতে চাইলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেছেন, দুর্নীতি, লুটপাট আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করা হলে যেখানে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ তোলা হয়, হেনস্তা হতে হয় সাংবাদিকদের সেখানে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা কতটুকু আছে তা স্পষ্টতই বোঝেন সবাই। কিন্তু এমন পরিস্থিতি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য কল্যাণকর নয় বলেও মন্তব্য করেন এই সাংবাদিক নেতা। #

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৩

ট্যাগ