যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসার মাধ্যম ইরানবিরোধী কঠোর অবস্থান
(last modified Sun, 03 Nov 2024 12:19:48 GMT )
নভেম্বর ০৩, ২০২৪ ১৮:১৯ Asia/Dhaka
  • আমেরিকার ইরান-বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং দ্বিমুখী আচরণ
    আমেরিকার ইরান-বিরোধী কর্মকাণ্ড এবং দ্বিমুখী আচরণ

পার্সটুডে- ওয়াশিংটন এখনও ইরানের বিরুদ্ধে একতরফা মার্কিন নীতি বাস্তবায়ন ও কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় বিভিন্ন অজুহাতে ইরানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে।

পার্সটুডে-জানিয়েছে, জো বাইডেন প্রশাসনের শেষ মাসগুলোতে এবং ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট গত শুক্রবার প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটের প্রধানদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে ইরানের ব্যাপারে জরুরি অবস্থা জারির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো কথা জানিয়েছেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখলের ১০ দিন পর, ১৯৭৯ সালের ১৪ নভেম্বরে এক নির্বাহী আদেশে সেদেশে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং দেশটির ব্যাপারে জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই থেকে তারা প্রতি বছর এই মেয়াদ নবায়ন করে আসছে।

ইরানের বিরুদ্ধে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাইডেনের পদক্ষেপ থেকে তেহরানের প্রতি ওয়াশিংটনের বিদ্বেষী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায় যা ইরানি জাতির সাথে তাদের অব্যাহত শত্রুতারই প্রমাণ। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয় এবং ইরানে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব সবসময় ইরানের প্রতি বৈরী আচরণ করে আসছে। তারা ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থা উৎখাত করাকে তাদের এজেন্ডার শীর্ষে স্থান দিয়েছে। গত চার দশকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন উপায়ে ইরানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে একতরফা নীতি ও কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। যেমন সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সামরিক হুমকি, প্রবল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা যায়।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে, পূর্ববর্তী স্লোগান থেকে সরে এসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ ও প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন এবং প্রায়ই বিভিন্ন অজুহাতে তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং দেশটির কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার লক্ষ্যে ইহুদিবাদী লবিং গ্রুপ আইপ্যাকের সমর্থন লাভের জন্য ইরান বিরোধী কঠোর বক্তব্য বিবৃতি দেয়া শুরু করেছেন। অবশ্য, নির্বাচনি সুবিধা নেয়ার জন্য এক সময় জো বাইডেন এবং বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন। তারা প্রায়ই ইরান বিরোধী অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে ইরানের ব্যাপারে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইরানের ব্যাপারে আমেরিকা সুস্পষ্টভাবে দ্বিমুখী নীতি নিয়ে চলে। তেহরানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের ক্রমাগত অভিযোগগুোর মধ্যে একটি হল ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রচেষ্টা এবং এই অজুহাতে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় থেকে এখন পর্যন্ত মার্কিন সব সরকারই ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছে। যাইহোক, ইরানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগ নিয়ে শুধু যে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা প্রশ্ন তুলেছে তাই নয় একইসাথে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

গত বছর জুলাই মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের দফতর থেকে প্রকাশিত একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি এবং দেশটি কেবল গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে, আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক এপ্রিল হেইনস স্বীকার করেছিলেন যে এমন কোনও তথ্য নেই যা থেকে প্রমাণ হয় যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে।

এর আগে, সিআইএ পরিচালক উইলিয়াম বার্নস জর্জিয়ার সি আইল্যান্ডে একটি নিরাপত্তা সম্মেলনের অবকাশে বলেছিলেন যে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনও প্রমাণ নেই এবং ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সাথে সাথে তা বুঝতে পারবে।

তবে, ইরানের বিরুদ্ধে সব ব্যবস্থাই খোলা রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র যে হুমকি দিয়ে আসছে তারও জবাব দিয়ে তেহরান বলেছে, কোনো আগ্রাসনই বিনা জবাবে পার পাবে না এবং ইরান প্রতিশোধ গ্রহণে কঠোর। উপরন্তু, ইরানের বিরুদ্ধে জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়ানের সিদ্ধান্তও তেহরানের সংকল্পের পথে কোনো বাঁধা হবে না।#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ