মে ২৭, ২০২৩ ১৭:৪৫ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের রাজধানী, বায়ান্ন বাজার তেপান্ন গলির ঢাকা। যে শহরের মোট আয়তন ৩০৬ বর্গ কিলোমিটার। সবশেষ জনশুমারী অনুযায়ী ঢাকায় এখন ১ কোটি ৩ লাখ মানুষের বসবাস। দিনদিন এই সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না সবুজের পরিমান। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, একটি আদর্শ শহরের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ সবুজ থাকার কথা পরিবেশবিদরা বললেও ঢাকা শহরের আছে মাত্র ৬-৮ শতাংশ মাত্র। যা গত একদশকে নিন্মমুখি।

পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা তথ্য বলছে, ২০০৯ সালে ঢাকায় সবুজায়ন ছিল ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। যা ২০১৯ সালে নেমে দাঁড়ায়  ৯ দশমিক ১৯ শতাংশে। কিন্তু এই নিন্মগামি চিত্র আরো হতাশ করেছে  ২০২২ সালে, তখন পুরো ঢাকার সবুজের পরিমান কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশে। একই সাথে জনসংখ্যাধিক্যের কারনে বাড়ছে নতুন নতুন ভবনের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে উষ্ণায়নে পুড়ছে ইটপাথরের নগরবাসী। 

গেল কয়েক সপ্তাহে একেবারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল দেশের তাপমাত্রা। আর আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা শহরের তাপমাত্রা উঠেছিল গত ৫৮ বছরে সর্বোচ্চ মাত্রায়।

ঢাকায় দুই দশকের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময়ে নগরে জলাশয় ও খোলা জায়গার পরিমাণ কমে তিন ভাগের এক ভাগে নেমেছে। এর পর জলাশয় ভরাট আর গাছ কাটার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে আর নগর বনায়নের যে প্রকল্প ছিল, তাতেও গতি আসেনি।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, একটি ‘আদর্শ শহর’ গড়ে ওঠে কংক্রিট, সবুজ ও পানির সমন্বয়ে। অন্তত ২৫ শতাংশ সবুজ, ১৫ শতাংশ জলাধার থাকবে। বাকি ৬০ ভাগের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কংক্রিট এলাকা করতে পারে, বাকিটা ভবনের মাঝখানে খালি জায়গা হিসেবে থাকবে। কিন্তু ঢাকায় এখন মোট জমির ৮০ শতাংশের বেশি জায়গাজুড়ে কংক্রিট, ৯ শতাংশের কিছু বেশি এলাকায় সবুজ আচ্ছাদন টিকে আছে। খোলা জায়গা এবং জলাভূমি আছে পাঁচ শতাংশেরও কম।

রিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবার) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান

এ প্রসঙ্গে, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবার) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেছেন, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত সবুজ গাছপালা ও জলাশয় না থাকায় গ্রামের চেয়ে গরম বেশি অনুভূত হয়। এই গরম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এসির অতিরিক্ত ব্যবহার। বাসস্থানের অভাবে গড়ে উঠছে ভাসমান মানুষের বস্তি। উন্নয়নের নামে নগরায়ন হলেও নাগরিক জীবনকে দুঃসহ করে তুলেছে এই কর্মকান্ড।

আর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার মনে করেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকা শহরে তিল পরিমাণ স্থান খুঁজে পাওয়া হয়ে পড়েছে দুষ্কর। সমস্যার অন্ত নেই। যার ফলশ্রুতিতে ঢাকা শহরে বাড়ছে কংক্রিটের রাজত্ব। সবশেষ ঢাকার ধানমন্ডিতে গাছ কেটে সড়ক উন্নয়নের ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়েছেন নগরবাসী। তারা বলছেন,  নগরে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প নিলে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় মানুষের মতামত নিতে হয়। ধানমন্ডির সাত মসজিদ সড়কে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা করেনি সিটি করপোরেশন। বরং গভীর রাতে সড়ক বিভাজকের গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। এটা জবাবদিহিহীনতার ফল। ##

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/বাবুল আখতার/২৭ 

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ