'বর্তমান আইনে দেয়া ক্ষমতার প্রয়োগেই ব্যর্থ হয়েছে ইসি, অজ্ঞতায় নতুন সংশোধনীর প্রস্তাব'
(last modified Sat, 10 Jun 2023 09:03:01 GMT )
জুন ১০, ২০২৩ ১৫:০৩ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে উত্থাপিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল পাস হলে তা নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরো খর্ব করবে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস করা হলে কমিশনের নিকট নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘনের কারণে যৌক্তিক বিবেচিত হলে যেকোনো নির্বাচনী এলাকায় চলমান নির্বাচন বাতিলের যে ক্ষমতা বিদ্যমান আইনে রয়েছে, তা কেড়ে নেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সেখানে বলা হয়, বিদ্যমান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(ক) ধারায় বলা আছে, “নির্বাচন কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করিতে সক্ষম হইবেন না, তাহা হইলে যে কোনো ভোট কেন্দ্র [বা, ক্ষেত্রমত, সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায়] নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করিতে পারিবে।”

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে "যে কোনো ভোট কেন্দ্র বা, ক্ষেত্রমত, সম্পূর্ণ নির্বাচনি এলাকায় নির্বাচনের যে কোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করিতে পারিবে", এই বিধানটিকে সুকৌশলে বাতিল করে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ (পোলিং) বাতিল করার মধ্যে কমিশনের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এই সংশোধনীটি আইনে পরিণত হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কমিশনকর্তৃক  নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা থাকবে না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গত বছর অক্টোবরে সিসিটিভি ক্যামেরায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে গাইবান্ধা-৫ আসনের  উপনির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছিলো কমিশন। কমিশনের এই পদক্ষেপ ক্ষমতাসীন দলের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে মর্মে পর্যবেক্ষকদের অনেকের মধ্যে যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছিলো, এই সংশোধনী তার যথার্থতাই প্রতীয়মান করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সংশোধনীতে প্রস্তাবিত “ইলেকশন” এর স্থলে “পোলিং” শুধু শব্দগত পরিবর্তন নয়, এর ব্যাপকতা আরো অনেক বেশি। এই বিল পাসের মাধ্যমে কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করা হলে তা দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পর্কে আস্থাহীনার সংকটকে আরো ঘনীভূত করবে। উল্লিখিত সংশোধনী প্রস্তাবটি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। পাশাপাশি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার চর্চার স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকার, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষ ও স্বার্থের দ্বন্দমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণেরও আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। 

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও জানিপপ চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, অনেক সময় নির্বাচন কমিশনের থাকা লোকজনই তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন, ফলে ক্ষমতা খর্ব হয়েছে তাদের নিজেদের কারণেই। একই সঙ্গে অ্যাবসুলেট ক্ষমতার অপব্যবহারও যাতে না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ  এই স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞর।

আর সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের বর্তমান কর্মকর্তারা তাদের জন্য আইনে রক্ষিত ক্ষমতাকেই তারা ব্যবহার কিংবা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অজ্ঞতার কারণে নতুন ক্ষমতা চাইতে গিয়ে ইসি এখন প্রকৃত ক্ষমতা হরণের মুখে বলে মন্তব্য করেছেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।#

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/১০

ট্যাগ