অক্টোবর ০৭, ২০২৩ ১৮:৫৫ Asia/Dhaka

ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে আজ শনিবার দুপুর ১২টায় চোখ ধাঁধানো মনোমুগ্ধকর এই টার্মিনালের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই মহাযজ্ঞের উদ্বোধন করতে শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে নতুন টার্মিনালে প্রবেশ করেন তিনি। এ সময় তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান একদল শিশু শিল্পী। সেখান থেকে তাকে একটি চেক-ইন কাউন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। চেক-ইন কাউন্টার থেকে তাকে একটি নমুনা বোর্ডিং পাস দেয়া হয়। এরপর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কাউন্টার, সিকিউরিটি গেট, মুভিং ওয়াকওয়ে (স্ট্রেট এসকেলেটর) পরিদর্শন করেন তিনি। পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নতুন এই অগ্রযাত্রার বিস্তারিত জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আকাশপথের যাত্রীদের জন্য বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আগামীতে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগের এক নতুন হাব। সেলক্ষ্য নিয়েই বিমানবন্দরগুলোর সম্প্রসারণকাজ চলছে। শুধু বিদেশ নয় আকাশপথে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার জন্যও বিমানসেবা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন এই টার্মিনাল যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত হবে আগামী বছর। 

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত তৃতীয় টার্মিনাল চালু হওয়ায় যাত্রীসেবায় যুক্ত হলো নতুন মাত্রা। টার্মিনালের মনোমুগ্ধকর নির্মাণশৈলির মাধ্যমে আকাশপথের যাত্রী ও বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্সকে তাক লাগিয়েছে বাংলাদেশ। এই টার্মিনাল ব্যবহার করে ভোগান্তি এড়াতে পারবে যাত্রীরা।

এ টার্মিনাল চালু হওয়ায় তাতে মিলবে পার্কিং বে,নতুন কার্গো ভিলেজ সুবিধা। এতে রয়েছে উন্নত বিশ্বের আধুনিক বিমানবন্দরগুলোর মতো সুবিধা। দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকার দুর্ভোগ কমাতে মূল সড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সরাসরি যুক্ত করা হচ্ছে টার্মিনালটি। গাড়ি নিয়ে দ্রুত প্রবেশ এবং দেশে আসা যাত্রীরা কম সময়ে ইমিগ্রেশন শেষ করে রওনা দিতে পারবেন নিজ নিজ গন্তব্যে।এতে থাকছে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ,১১৫টি বহির্গমন চেক-ইন কাউন্টার, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টার। রয়েছে ৭০টির মতো বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার। থাকবে ৫টি স্বয়ংক্রিয় আগমনী চেক-ইনসহ ৫৯টি কাউন্টার। ৪০টি কেবিন ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার মেশিন।

এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে । বহুতল পার্কিংয়ে রাখা যাবে ১ হাজারের বেশি গাড়ি।২০১৭ সালের শাহজালাল বিমানবন্দরে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটারের এই টার্মিনালের নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। সে সময় ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ। তখন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। খরচের বেশিরভাগ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকা।

বেবিচক জানায়, তৃতীয় টার্মিনালের ৯০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজগুলো মূলত অপারেশন সংক্রান্ত। এজন্য আরও সময় লাগবে। বাকি কাজ সমাপ্ত করতে রাত-দিন নিরলস কাজ করে চলেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে দেশের এভিয়েশন খাতে নতুন দুয়ার উন্মোচন হবে।

তবে এত আয়োজন করে এত আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বিমান বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদের সেবার মানসিকতা যদি ভাল না হয়, যদি সেবা দেয়ার আগ্রহ কম থাকে তাহলে যাত্রীদের লাভ খুব কমই হবে বলে মন্তব্য করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান। আর দ্য মনিটর পত্রিকার সম্পাদক ও আরেক এভিয়েশন খাত বিশ্লেষক ওয়াহিদুল হক মনে করেন, এই আধুনিক  বন্দর ব্যবস্থাপনার মত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে যে কোন মুহূর্তে সেবা বঞ্চিত হবেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এতে ক্ষুণ্ণ হবে দেশের সম্মান। #

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ