অক্টোবর ২৩, ২০২৩ ১৬:৩৭ Asia/Dhaka

এক সময় বলা হতো, পৃথিবীতে জনসংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে, আর খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ছে গাণিতিক হারে। অতএব, পৃথিবীতে খাদ্যাভাব হবে, দুর্যোগ দেখা দেবে- এ ধারণার উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন থমাস ম্যালথাস। কিন্তু এ চিন্তার বিপরীতেও কথা বলেছেন বিজ্ঞানীরা।

তারা জানান, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাব উৎপাদনকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে। জনসংখ্যা বাড়লেও খাদ্য উৎপাদন বাড়ার কারণে কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না। এখন তা সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।

যে কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর আবাদি জমি কমে গেলেও বিপরীতে উৎপাদন বাড়ছে কয়েকগুণ হারে। ফলে যুদ্ধ-মহামারিতে কোনো খাদ্যঘাটতির শঙ্কা দেখছেন না দেশের কৃষি খাতের বিশেষজ্ঞরা।

১৯৭২ সালে এ দেশে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদন ছিল এক কোটি টন। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫.৪ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ৫৪ লাখ টনে। এ ৫০ বছরে খাদ্যশস্যের গড় প্রবৃদ্ধির হার হলো বছরে ৩ শতাংশ। গত অর্ধ শতকে জনসংখ্যা বেড়েছে সাড়ে সাত কোটি থেকে ১৭ কোটিতে। আর প্রবৃদ্ধির হার হলো বার্ষিক ১.৯ শতাংশ। অর্থাৎ জনসংখ্যার চেয়ে খাদ্যশস্যের প্রবৃদ্ধির হার বেশি। যা ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ’ বলে দাবি সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের। 

এর মধ্যদিয়ে কৃষকদের সক্ষমতার প্রমাণ মেলে দাবি করে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ দেশে দুর্ভিক্ষের কোনো শঙ্কা নেই। যদিও গম উৎপাদন একটু কম; কিন্তু এটি বাংলাদেশের ফসল না।  এদিকে, প্রতিবছরই বাংলাদেশে আবাদি জমি কমছে। শহরায়ণ ও নগরায়ণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন তৎপরতার কারণে বছরে দশমিক শূন্য সাত শতাংশ জমি কমছে। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ জমি কমলেও দেশীয় গবেষকরা এমন সব ধান, গম ও শস্যের জাত আবিষ্কার করছেন, যার ফলে এ স্বল্প জমিতেও সাফল্য বেড়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৯৭১-’৭২ সালে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ছিল ২৮ শতাংশ; এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশ। প্রতিবছর দেশে মানুষ বাড়ছে ২০ লাখেরও বেশি। কৃষিজমি কমছে ৮ লাখ হেক্টর। তারপরও জনপ্রতি সরবরাহ কমছে না কৃষিপণ্যের; বরং তা দিন দিন বাড়ছে।  বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এখনো কৃষি। বিশ্বে বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে থাকলেও বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়নে বাংলাদেশের স্থান হলো সবার ওপরে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো: হামিদুর রহমান বলেন, কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন আজ এই অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছে, যেখানে কৃষকদেরও রয়েছে শতভাগ অগ্রণী ভূমিকা।

আর কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম মনে করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃষি সাফল্য আসলেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতায় এখনো বেশ কিছু ঘাটতি রয়ে গেছে, সেদিকে নজর দেয়া এখন সময়ের দাবি। #

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/আশরাফুর রহমান/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ