মার্চ ১৯, ২০২৪ ১৫:১৫ Asia/Dhaka

বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজের সন্ধানে পাড়ি জমাচ্ছেন সৌদি আরবে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে বলা হয় বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশীর বসবাস মরুর ঐ দেশটিতে। কিন্তু সেখানে কথিত ফ্রি ভিসা ও সাপ্লাই কোম্পানির ফাঁদে পড়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি।

ফ্রি ভিসায় গিয়ে মাসের পর মাস কাজ না পেয়ে এক সময় ভিসার ইকামার মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবৈধ হয়ে পড়ছেন তারা।গত এক সপ্তাহে ২৩ হাজার ৪০ প্রবাসীকে গ্রেপ্তার করেছে সৌদি আরব সরকার। যাদের বিরুদ্ধে আবাসন, শ্রম ও সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে রয়েছে। গেলো ১০ মার্চ এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে সাপ্লাই কোম্পানিগুলো কর্মীদের দিয়ে কাজ করিয়ে বেতন তুলে নিয়ে তাদেরকে কম বেতন দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ অনেকের। পাশাপাশি অনেকের পাসপোর্টও নিয়োগ কর্তার কাছে রক্ষিত থাকায় কর্মীরা পড়ছেন ভোগান্তিতে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সম্প্রতি সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সেখানে কর্মরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশিকে তাদের পাসপোর্ট নিজেদের কাছে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসকে এক কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে এই তথ্য জানিয়েছে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রিয়াদ দূতাবাস।

এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা হয় সৌদিআরব প্রবাসী জাফর আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, বেশিরভাগ বাংলাদেশি কর্মীর কাজের নিশ্চয়তা এবং চুক্তিপত্র না থাকায় প্রতারিত হচ্ছেন সেখানে গিয়ে।

আর তাবুক প্রবাসী রইসুল বলেছেন, ভালো কোম্পানির কথা বলে সাপ্লাই কোম্পানিতে কাজ করতে হয় সৌদির অনেক প্রবাসীকে। বিভিন্ন কোম্পানিতে পরিচ্ছন্ন কর্মী বা সাধারণ শ্রমিক হিসেবে ভাড়ায় কাজ করিয়ে বেতনের দুই ভাগ নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ হাফিজুল ইসলামের।

নতুন কর্মীদের বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এসব ভিসাতে এনে কাজ করিয়ে ঠিকমতো বেতন দিতে পারে না তারা। এসব নিয়ে মুখ খুলতে গেলে তাদের নানান ভয়-ভীতিসহ পাসপোর্ট এবং রেসিডেন্ট কার্ড আটকে রাখারও অভিযোগ কোনো কোনো প্রবাসীর।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব কর্মীরা বৈধতা হারিয়ে পালিয়ে বসবাস করছেন সৌদি আরবে। তারা বলছেন, একদিকে যেমন বৈধতা হারিয়ে অবৈধ হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে হচ্ছে তাদের। আবার ফিরতে পারছেন না নিজ দেশে। তাই বিদেশগামী কর্মীদের যাচাইবাছাই করে সৌদি আরব আসার আহবান তাদের। 

মেরিনা সুলতানা

এ বিষয়ে অভিবাসন সংক্রান্ত গবেষণা সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট -'রামরু'র পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেছেন, চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমানে কর্মী পাঠানোর ফলে এ ধরনের সংকট তৈরী হচ্ছে।ফলে বাড়ছে অনিরাপদ অভিবাসন, আর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বাংলাদেশি প্রবাসীরা। এমন সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সীকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রামরু পরিচালক।

আলী হায়দার চৌধুরী

তবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা)র মহাসচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার চৌধুরী বলেছেন, যারা ব্যক্তিগত যোগাযোগে এবং নিয়মনীতির বাইরে গিয়ে কাজ করেন তাদের বিষয়ে তো সমাধানের পথ জটিল। কারণ অনেকে এক কোম্পানির ভিসায় গিয়ে অন্য কোম্পানিতে কাজ করেন, ডকুমেন্টস ফেলে অবৈধ হয়ে পড়েন তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় কিংবা এজেন্সীর করণীয় কম। কিন্তু বৈধভাবে সৌদিআরবে গিয়ে কোন এজেন্সীর গাফেলতিতে কেউ সমস্যায় পড়লে তাদের সরাসরি এজেন্সীর বিরুদ্ধে দূতাবাস কিংবা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বায়রা মহাসচিব।#

পার্সটুডে/বাদশা রহমান/জিএআর/এমএআর/১৯

ট্যাগ