বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, মৃতের সংখ্যা ১৪: ত্রাণের অভাব নেই-মায়া
(last modified Sat, 30 Jul 2016 11:01:27 GMT )
জুলাই ৩০, ২০১৬ ১৭:০১ Asia/Dhaka

বাংলাশের উত্তরাঞ্চলে বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তি রয়েছে। এদিকে উজান থেকে নামা ঢল ও মৌসুমি বৃষ্টির পানি ব্রহ্মপুত্র , যমুনা ও পদ্মা হয়ে সাগরে যাবার পথে দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় নতুন করে বন্যা সৃষ্টি করছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে উত্তরের  জেলাগুলিতে আগামী তিন দিন ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি কমতে পারে। তবে গঙ্গা-পদ্মার পানি বাড়তে পারে।

সরকারী তথ্য  অনুযায়ী  উজান থেকে নামা ঢল ও বৃষ্টির পানিতে দেশের ১৬টি জেলার ৫৯টি উপজেলা এখন বন্যাকবলিত।

এরমধ্যে ছয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলাগুলো হলো জামালপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জ। 

তবে,  পানি কমতে শুরু করলেও এখনও ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপরে থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। আজ  সকাল ন’টার পরিমাপ থেকে জানা যায়,  ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েণ্টে বিপদসীমার ৮২ সে.মি ও ধরলার নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জে একটি পাকা সড়ক ভেঙে ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার শহরের কিছু এলাকা এখনও প্লাবিত রয়েছে। চিলমারী উপজেলা শহরে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি।

কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আকতার হোসেন আজাদ জানান, ৯টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ৭২৮টি গ্রাম এখন পানির নিচে। ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৮৬ পরিবারের প্রায় ৬ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ১০ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত রয়েছে।

এদিকে  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল  আজ (শনিবার) মহাখালীতে অধিপ্তরের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বন্যা পরিস্থিতি ও তা মোকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরতে   গিয়ে  জানান,  “যেসব নদীর পানি বেড়েছিল, সেগুলো দুয়েকদিনের মধ্যে কমে আসতে শুরু করবে। এই পানি বঙ্গোপসাগরে যাওয়ার সময় রাজবাড়ী, ফরিদুপর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল জেলার প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৯ জুলাই পর্যন্ত বন্যায় তিন লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৬টি পরিবারের মোট ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৫ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; নয় হাজার ৩১৪টি ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১২ হাজার ৩৭১টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে রংপুরে একজন, কুড়িগ্রামে দুই জন, গাইবান্ধায় চার জন এবং জামালপুরে সাত জন।

সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “দুর্গত এলাকায় ত্রাণের কোনো অভাব নেই। ৫ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত দুর্গত এলাকায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন চাল দেয়া হয়েছে।

এছাড়া সাড়ে পাঁচ কোটি নগদ টাকাও ছাড় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।  বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পুনর্বাসন কাজেও মন্ত্রণালয় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানান মন্ত্রী।

এদিকে,  পদ্মায় তীব্র স্রোত ও ফেরি-সংকটের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। নদীতে পানি বাড়ার কারণে গতকাল শুক্রবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শিবালয়ের আরিচা কার্যালয়  সুত্রে  জানা গেছে,   আরিচা ও পাটুরিয়া পয়েন্টে কয়েক দিন ধরে পানি বাড়ছে। গত মঙ্গলবার পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমায় (৯ দশমিক ৪০ মিটার) পৌঁছায়। গত বুধবার আরও ১৪ সেন্টিমিটার ও বৃহস্পতিবার ১৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। গতকাল বিকেল পাঁচটায় ১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৮৭ মিটারে পৌঁছেছে, যা বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপরে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ ধরে পদ্মায় পানি বেড়ে তীব্র স্রোত দেখা দেয়। এ ছাড়া স্রোতের মধ্যে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করে যানবাহন পারাপার করতে গিয়ে তিনটি ফেরি বিকল হয়ে যায়। বুধবার সন্ধ্যায় খানজাহান আলী নামের একটি বড় ফেরি বিকল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ফেরী দু’টি  স্রোতের প্রতিকূলে চলাচল করতে পারছে না। এ কারণে পাটুরিয়ায় যানবাহনের চাপ আরও বেড়ে যায়।

আজ (শনিবার) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয়  থাকায় বৃষ্টিপাতের  এ  আশঙ্কা করা হয়েছে।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/৩০ 

ট্যাগ