সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৬ ২১:০২ Asia/Dhaka

হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণা বন্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজ (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন। হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম ও  হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী পরিচালক হজ ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও কতিপয় হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও হজ যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল, হজ ফ্লাইটে বিলম্ব, হজ যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে হজে না পাঠানো, চুক্তিহীন বাড়িতে হজযাত্রীদের রাখা, এক বাড়ির হজযাত্রীকে অন্য বাড়িতে ওঠানো, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, চুক্তি অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত সুবিধা না দেয়াসহ নানা অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ করছেন হজযাত্রীরা।

তিনি বলেন, অনিয়ম ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত এসব হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে একদিকে প্রতারক এজেন্সিগুলোর দৌরাত্ম্য যেমন বাড়বে, অন্যদিকে ধর্মপ্রাণ হজযাত্রীদের আর্থিক ক্ষতি ও দুর্ভোগ অব্যাহত থাকবে।

হজ ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-প্রতারণার বিষয়ে হজ কর্তৃপক্ষ ও এজেন্সিগুলোর একে অপরকে দোষারোপ করছে অভিযোগ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুঃখজনক বিষয় হলেও কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের হয়রানি ভোগান্তি দূর করতে স্থায়ী কোনো সমাধান করছে না।’

তিনি এ সমস্যা সমাধানের উপায় নিরূপণে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য বলে মনে করেন।

এর আগে, হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের হজ পরিচালককে  অপসারণের দাবি করেছেন।

চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার বাংলাদেশিকে হজ পালনের অনুমোদন দিয়েছে রাজতান্ত্রিক সৌদি সরকার। কিন্তু কোটা পূরণ না হওয়ায় সরকারি কোটার ৪ হাজার ৮০০ হজযাত্রীকে বেসরকারি কোটায় স্থানান্তরের অনুমোদন দেয় সৌদি সরকার। সরকারি কোটার এসব হজযাত্রীকে ১৪৩টি এজেন্সির মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু হজযাত্রীর কোটা বণ্টন করা হলেও মোয়াল্লেম ফির টাকা যথাসময়ে সৌদি আরব পাঠানো হয়নি। ফলে ১৪৩টি এজেন্সির মালিকরা বাড়িভাড়াও করতে পারে নি। 

হাবের সভাপতি আরও বলেন, সৌদি সরকার নির্ধারিত কোটার বাইরে আরও ১১ হাজার বাংলাদেশিকে হজ পালনের অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু ৪ হাজার ৮০০ হজযাত্রীর মোয়াল্লেম ফি প্রদান ও বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় সেই ১১ হাজার হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে মোয়াচ্ছাসা অফিস ছাড়পত্র দেয় নি।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব অনভিজ্ঞ হওয়ায় এবং হজ পরিচালক ডিও লেটার দিতে বিলম্বসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি করায় হজ ব্যবস্থাপনায় চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছে  বলে হাবের নেতারা অভিযোগ করেছেন। 

ওদিকে হজযাত্রী না পাওয়ায় বিমানের একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে অন্তত: ১৫টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালে হজগমণেচ্ছুকদের প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ঘোষনা দিয়েছিলেন ‘হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অনিয়ম দেখা গেলে দায়ী ব্যক্তি, এজেন্সি, কর্মকর্তা, কর্মচারী যিনিই হোন না কেন, তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

ধর্মমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হজ ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমান। তাদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়।

এ বছর সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনাকেও ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। হজ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখার পাশাপাশি হজে যেতে ইচ্ছুকরা যাতে কোন প্রকার হয়রানি ছাড়াই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হজ পালন করতে পারে সে লক্ষ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় এ বছরই প্রাক-হজ নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২

ট্যাগ