রাফিকে যৌন হয়রানি ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা: বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন
ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি ও পরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে আজ রাজধানী ঢাকায় রাষ্ট্রপতির বাসভবন বঙ্গবভন থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।
আজ (শনিবার) সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন,সাংস্কৃতিক সংগঠন, নারী অধিকার সংগঠন, বাম ছাত্র সংগঠন, সরকারপন্থী ছাত্রলীগ এবং বিভিন্ন এনজিও’র উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট-আসাদগেট, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, শাহাবাগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, রাজউক ভবন এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
বঙ্গভবনের সামনে মানববন্ধনে দাড়িয়ে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, 'কোনো অপরাধের বিচার না হওয়াই এই হত্যাকাণ্ডের কারণ।শাসক দল এর সঙ্গে জড়িত। অপরাধীরা জানে সরকারি দলে থাকলে পার পাওয়া যায়। তবে ১৬ কোটি মানুষ প্রতিবাদ জারি রেখেছে।
ওদিকে সরকারের তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আশ্বাস দিয়েছেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নেভি কনভেনশন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ঘটনায় যাতে উপযুক্ত শাস্তি হয়, এজন্য প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে তদন্তকারী সংস্থা থেকে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন। আপনারা জানেন হাইকোর্ট থেকেও একটা নির্দেশনা এসেছে। আমি দূঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অভিযুক্তরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে। সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। আর এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
এর আগে মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিনিধিদলের প্রধান আল মাহমুদ ফায়জুল কবির বলেছেন, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা ঘটনার মূল হোতা। তাছাড়া, ২৭ মার্চ অধ্যক্ষের কক্ষে রাফির সাথে অশালিন আচরণের ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন যদি অবহেলা না দেখাতো তাহলে ৬ এপ্রিলের আগুনের ঘটনা ঘটতো না।
উল্লেখ্য সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়। নুসরাত গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসা কেন্দ্রে গেলে কৌশলে তাকে মাদ্রাসা ভবনের ছাদে নিয়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ১০ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুর লাগানোর ঘটনায় সন্দেহভাজন মুখোশধারী নুর উদ্দিনকে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নুসরাতের ভাইয়ের দাবি, নুর উদ্দিনই তার বোনের প্রধান হত্যাকারী।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বনোজ কুমার মজুমদার জানান, জবানবন্দিতে সে বলেছে, অপারেশনে বোরকা পড়া চারজন মধ্যে দুই জন ছেলে আর বাকি দুইজন মেয়ে ছিল। তারা সবাই ওই মাদরাসার শিক্ষার্থী।এদের মধ্যে শাহদাত হোসেন শামীমকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১৩