'বাংলাদেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে নেই, ব্যাংক খাতের অবস্থাও নাজুক'
(last modified Mon, 29 Apr 2019 14:06:31 GMT )
এপ্রিল ২৯, ২০১৯ ২০:০৬ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুম্তফা কামাল জাতীয় সংসদে স্বীকার করেছেন, দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। ব্যাংক খাতের অবস্থাও নাজুক। আর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণেই ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাছাড়া সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বি আই ডি এস বলেছে, ব্যাংকিং খাতে অযাচিত হস্তক্ষেপ, ঋণ পুনর্গঠনের শর্ত শিথিল করা এবং খেলাপী ঋণের সঙ্গা পরিবর্তনের কারণে ব্যাংক খাত বিশ্বমানের চেয়ে পিছিয়ে গেছে। 

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের জন্য সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং কার্যকর নীতি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে।

তবে, গতকাল রোববার জাতীয় সংসদে সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এটাও দাবি করেছেন, “দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত চাঙ্গা, অত্যন্ত শক্তিশালী। বিশ্বব্যাংক ও আই এম এফ বাংলাদেশের অর্থনীতি দেখে উচ্ছসিত।"

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের বিষয়ে নানা সমালোচনার মধ্যেই সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক অনাদায়ী ঋণের নীতিমালার পরিবর্তন করে নতুন এক প্রজ্ঞাপন জারী করেছে। এ নতুন নীতিমালায় বলা হয়, মেয়াদী ঋণের গ্রাহক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করলে অতিরিক্ত আরো ৬ মাস পর তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা যাবে।

চলতি মাসেই এককালীন ২ শতাংশ টাকা জমা দিয়ে ৯ শতাংশ হারে ১২ বছরে খেলাপীঋণের বাকি অর্থ পরিশোধের অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার বিষয়েও আলোচনামুখর  ব্যাংকপাড়া।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন খেলাপী ঋণের এ নতুন নীতিতে ঋণ গ্রহীতাকে বাড়তি সময় দেয়া হলো কিন্তু কাগজে কলমে খেলাপী ঋণের পরিমাণ কম দেখানো হলেও বাস্তবে ব্যাংকের তারল্য সংকট থেকেই যাবে।

এ অবস্থায় গতকাল (রোববার) রাজধানীতে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠন (বিআইডিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণেই ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাংক খাত একসময় বিশ্বমানের ছিল। এখন তা থেকে পিছিয়ে গেছে। 

ব্যাংক কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যানের মতে, পিছিয়ে যাওয়ার কারণ তিনটি। যেমন, পরিচালনা পর্ষদের অযাচিত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণ, ঋণ পুনর্গঠনের শর্ত শিথিল করা এবং খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন।

অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহি আনা উচিত। রাজনৈতিক বিষয়ে সম্পৃক্ত না হয়ে শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে জবাবদিহি আনা সম্ভব। তিনি বলেন, "আমরা এখন এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তে এসেছি, যেখানে এক দলের প্রাধান্যে শাসনব্যবস্থা চলছে। এ ধরনের শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহির কাঠামো কেমন হবে, তা বলা উচিত। সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।"

এসময় ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উল্লেখ করেন, সক্রিয় নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যম একটি গণতান্ত্রিক সমাজের অত্যন্ত প্রয়োজন। এ দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বেশি প্রয়োজন। কেননা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যন্ত দুর্বল।

অনুষ্ঠানের কর্ম অধিবেশনে অংশ নিয়ৈ বাংলাদেশের ব্যাংকসমূহের  প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি)’র সভাপতি, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ব্যাংক খাতের দৈন্যদশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, দেশে ৫৯টি ব্যাংক আছে। কিন্তু ৫৯ জন দক্ষ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা নেই। আমরা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য অর্জনের দিকে দৌড়াই। অনাদায়ী ঋণের জন্য গ্রাহকদের পাশাপাশি নিজেদেরও দোষ দিতে হবে।

সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থিক খাতবিষয়ক অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে না পারলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না। এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহিরের মতে, দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমছে; যা প্রবৃদ্ধির হিসাবের সঙ্গে মিলছে না। উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বৈষম্যও বাড়ছে।।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/২৯

 

ট্যাগ