ডেঙ্গুতে চিকিৎসা: নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে; আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে গেছে-দাবি মন্ত্রীর
(last modified Wed, 28 Aug 2019 12:19:47 GMT )
আগস্ট ২৮, ২০১৯ ১৮:১৯ Asia/Dhaka
  • ডেঙ্গুতে চিকিৎসা: নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে; আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে গেছে-দাবি মন্ত্রীর

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় আক্রান্ত ব্যক্তি বা তা পরিবারের পক্ষ থেকে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে তার একটি জরীপ চালিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট।

জরীপের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে  হাসপাতাল বা সরকারের পক্ষ থেকে খরচ বাদ দিয়েও চলতি আগস্ট মাস পর্যন্ত একজন রোগীর চিকিৎসাবাবদ নিজস্ব ব্যয় হয়েছে গড়ে ৫ হাজার ৩৩২ টাকা আর সাধারণ মানের বেসরকারি হাসপাতালে খরচ করতে হয়েছে রোগী প্রতি গড়ে ৫৩,৫০০ টাকা। এ ক্যাটাগরির বেসরকারি হাসপাতালে এ খরচের পরিমাণ রোগী প্রতি গড়ে  ১,৫০,০০০ টাকা।

রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি দু'সন্তানের পিতা জানালেন, সন্তানের চিকিৎসা চালাতে তিনি আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

এদিকে, সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেকটা কমে এসেছে বলে দাবি করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। আজ (বুধবার) সকালে সাভারের আশুলিয়ার একটি  সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেঙ্গু সচেতনতাকরণ প্রচারকার্য  উদ্বোধন শেষে তিনি এ দাবি করেন।

এখনো ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন কোনো না কোনো রোগী মারা যাচ্ছে, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সচেতন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া, কমিউনিটি ক্লিনিকে গ্রামবাসী যেন সঠিকভাবে চিকিৎসা পায় সেজন্য তিনি ডাক্তারদের নির্দেশ দেন।

ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসলেও মশা নিধন কার্যক্রম নিয়মিত চালাবার পরামর্শ  দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড: সৈয়দ আবদুল হামিদ।

এদিকে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও এডিস মশা নিধনে ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপকভাবে ওষুধ ছিটানো ও অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আজ (বুধবার) বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

মশা নিধনে আদালত বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদারহণ টেনে বলেছে, প্রয়োজনে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত এক-দুই দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ও এডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংসে একযোগে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে।

ডেঙ্গু পরিস্থতি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে একটি কমিশন গঠন করে দেবার কথা থাকলেও আদালত আজ এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায় নি। এ বিষয়ে আগামী ১৬ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছে আদালত।

ওদিকে গত চব্বিশ ঘণ্টায় গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে ত্রিশালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাফিজুল ইসলাম (৩৫) নামে এক পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ঢাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

হাফিজুল ঈদের আগে ঢাকায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। মঙ্গলবার প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে তাঁকে পুনরায় ময়মনসিংহ মেডিকেলে নেয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার উন্নত সেবার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করেন। ঢাকায় নেয়ার পথে ময়মনসিংহের ভালুকায় ভোর পৌনে চারটায় তিনি মারা যান।

খুলনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে শাহিদা বেগম (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ভোরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। শাহিদা বেগম পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার পশারীবুনিয়া গ্রামের সাইদুর রহমানের স্ত্রী। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে শাহিদা মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোর সাড়ে চারটার দিকে তার মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুর পাশাপাশি তিনি ডায়াবেটিস ও লিভার রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

এ নিয়ে খুলনায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুজন নারীসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার ভোর ৫ টার দিকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মাহমুদা নামের পয়ত্রিশ বছর বয়সী এক গৃহবধূ। মাহমুদা  পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কলারদুয়ানিয়া গ্রামের আমির হোসেনের স্ত্রী।

গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত  ২৩৪ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত ২২ জন ভর্তি ছিলেন। বাকী ২১১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।#

পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

ট্যাগ