‘বাংলাদেশে অর্থনীতির গতি বাড়লেও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে’
(last modified Tue, 03 Mar 2020 09:27:38 GMT )
মার্চ ০৩, ২০২০ ১৫:২৭ Asia/Dhaka
  • প্রতীকী ছবি
    প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে গত এক দশকে অর্থনীতির গতি বাড়লেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ কমে গেছে। এ সময়ে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি দ্রুত বাড়লেও কর্মসংস্থানে দেখা দিয়েছে নেতিবাচক ধারা। ২০১০ সালের পর কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশে। এরকম আবস্থা চলতে থাকলে বেকারত্ব আগামীতে সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে।

গতকাল রাজধানীতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত এক সেমিনারে এসব মতামত ব্যক্ত করছেন বিশিষ্ট  অর্থনীতিবিদরা।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা রিজওয়ানুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, ২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর উৎপাদন খাতে সাড়ে তিনলাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৫-১৬ সালে এ খাতে বার্ষিক কর্মসংস্থান কমে দুই লাখে নেমে আসে। এ সময় তরুণদের মাঝে বেকারত্বের হার ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০.৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

এর আগে, গত ডিসেম্বর মাসে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা ‘ন্যাশনাল জবস স্ট্র্যাটেজি ফর বাংলাদেশ’-শীর্ষক কৌশলপত্রের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে,  বেসরকারি খাতের বাইরে সরকারিভাবে প্রতি বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার চাকরিতে নিয়োগ হয়। ফলে কর্মক্ষমদের বড় অংশই বেকার থেকে যাচ্ছে। দেশের কর্মক্ষম জনশক্তির ৩৫ ভাগ পড়াশোনা, কাজকর্ম ও কোনো ধরনের প্রশিক্ষণের মধ্যে নেই। আর শতভাগ বেকার মানুষের সংখ্যা ৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৪০ ভাগই কোনো কাজ পাচ্ছে না। পুরোনো এসব বেকারের সঙ্গে প্রতি বছর যুক্ত হচ্ছে নতুন বেকার। ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির ফারাক বাড়ছে।

এ অবস্থায় দ্রুত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে না পারলে বাংলাদেশ চলমান জনসংখ্যার বোনাসকালের সুফল ভোগ করতে পারবে না বলে উঠে এসেছে শ্রম মন্ত্রণালয়ের এক কৌশলপত্রের খসড়ায়।

তারা বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ‘কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি’ বলে উল্লেখ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বেকারত্ব দূর করতে হলে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৯-৩০ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতি বছর পাঁচ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর পাশাপাশি দেশে ১৮ লাখ ৪০ হাজার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র অর্থনীতিদ ড’ গোলাম মোয়াজ্জেম রেডিও তেহরানকে বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। শিল্পখাতে কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে উৎপাদিত পণ্য বিপনের কাজ পুরোটাই এখন বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান দখল করে নেবার কারণে শ্রমনির্ভর মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাত মার খাচ্ছে। তাই নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

বিদেশে কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে ড. গেলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অল্প-শিক্ষিত অদক্ষ বা কিছুটা দক্ষ যুবকদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে কর্মসংস্থানের সূযোগ কমে গেছে। এখন দরকার বেকার যুবকদের দক্ষতা বাড়িয়ে বৈদেশিক শ্রমবাজার ধরে রাখা এবং নতুন নতুন শ্রম বাজারের অনুসন্ধান করা। 

গতকালকের সেমিনারে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেছেন, দেশে আর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সরকার দক্ষতার ঘাটতি মেটাতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার দিকে বেশি জোর দিচ্ছে। দেশে বৈষম্য বাড়লেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। #

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ