বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকা প্রথম: বাড়তে পারে করোনার সংক্রমণ
বিশ্ব্যাপী মহামারী শ্বাসকষ্টের ব্যাধি কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস বাংলাদশের দুষিত বায়ুর প্রণোদনা পেয়ে আরো ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।
বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় আজকেও প্রথম অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। আজ সকাল ৮টা ২১ মিনিটে একিউআই (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) এ ঢাকার গড় স্কোর ছিল ২২৭ যার অর্থ ঢাকার বাতাসের মান খুবই অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে।
বারিধারা এবং গুলশানের মতো ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকার একিউআই স্কোর আজকে পাওয়া গেছে যথাক্রমে ৩২২ ও ২৪২ যা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরকম অবস্থায় স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ জরুরি ব্যবস্থা বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞগণ।
এ প্রসঙ্গে ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার কাজী রকিবুল ইসলাম রেডিও তেহরানকে বলেন, ক্ষতিকর মাত্রার বায়ুদূষণের কারণে অনেক রকম রোগবালাইয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ। আর মহামারি করোনার সংক্রমণ স্থলও মূলত শ্বাসযন্ত্র। তাই যাদের মাঝে আগ থেকেই শ্বাসতন্ত্রের অসুখ রয়েছে তাদের জন্য করোনা আরো দ্রুত ঘাতকের ভূমিকা পালন করে পারে। এ অবস্থায় সতর্কতা হিসেবে বাইরে বের হবার সময় সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করে বায়ু দূষণ থেকে কিছুটা হলে মুক্ত থাকা যাবে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দেলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আবদুল মতিন রেডিও তেহরানকে বলেন, দূষিত বায়ু নানা প্রকার অসুখ বিসুখের কারণ তা আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বলতে গেলে এটা এখন মানুষের শরীরে রোগাক্রামণের সর্বোচ্চ বাহ্যিক উৎস হয়ে দেখা দিয়েছে। আর দুষিত বায়ু বর্তমান সময়ে কোভিড সংক্রমণের জন্য ইতিবাচক সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে মানুষজন ঘরে আটকে থাকায় বায়ু দূষণের মাত্রা কিছুটা হলেও কমেছিল। এবার লকডাউন শিথিল করে কলকারখানা, বাজার-ঘাট যানবাহন পূনরায় চালু করে দেবার ফলে পরিস্থিতির অবনতি আশঙ্কা করেছেন এ চিকিৎসক-পরিবেশবাদী নেতা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মাত্র তিন দিন আগে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলন করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, বাংলাদেশের উচ্চ মাত্রার বায়ু দূষণ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
বায়ু দূষণ নিয়ে গবেষণারত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের (সিআরইএ) এক সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এমন আশঙ্কার কথা জানায় বাপা।
সিআরইএ’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান বায়ুদূষণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা ধরনের শারীরিক অক্ষমতায় ভুগছে বা কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসা নিচ্ছে।
সেখানে আরও বলা হয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি গবেষণায় বায়ু দূষণ ও উচ্চ রক্তচাপ বা ফুসফুসে প্রদাহের মতো দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগের সম্পর্ক মিলেছে। একই সঙ্গে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে ক্রনিক রোগে আক্রান্তরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে সহজে সুস্থ হচ্ছেন না বা তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বায়ুদূষণ করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যাকে বাড়িয়ে তুলছে এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতকে চরম চাপের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৭
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।