'মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ড ঘিরে অপপ্রচার ও উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা চলছে'
(last modified Fri, 07 Aug 2020 15:02:08 GMT )
আগস্ট ০৭, ২০২০ ২১:০২ Asia/Dhaka

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের দায়িত্বশীল মহল মনে করছেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা রাশেদের মর্মান্তিক ঘটনাকে ঘিরে কেউ কেউ দুই বাহিনীর মধ্যে উস্কানি দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে জনগণ এ বিষয়ে সচেতন রয়েছেন। 

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আশ্বস্ত করেছেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে যারাই দোষী সাব্যস্ত হবে, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। এ সময় মেজর সিনহার এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি যে সুপারিশ করবে, সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

আসাদুজ্জামান খান কামাল

ওদিকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বলেছেন, একটি অশুভ চক্র নানা ইস্যুতে গুজব রটনা ও অপপ্রচারে লিপ্ত। সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা রাশেদের মর্মান্তিক ঘটনাকে ঘিরে কেউ কেউ দুই বাহিনীর মধ্যে উস্কানি দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে জনগণ এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের শেকড় এ দেশের মাটির অনেক গভীরে। এই সরকারের বিরুদ্ধে গুজব রটিয়ে কোনো লাভ হবে না।

শুক্রবার ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবন থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের খুলনা সড়ক জোন, বিআরটিএ ও বিআরটিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সিনহা হত্যা বিষয়ে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক রয়েছে। ইতিমধ্যে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। 

গুজব রটনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার বন্ধে দেশ-বিদেশে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনা সরকার কারো হাতে ইস্যু তুলে দেবে না। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে যে কোনো বিষয়ে সুরাহা করা হবে।

ওবায়দুল কাদের

ওদিকে, পুলিশের দায়ের করা মামলায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সঙ্গে থাকা লোকজন, যাদের কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেখে এদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। সিনহার গাড়িতে থাকা তার সঙ্গী সিফাতের ভাষ্যমতে, সিনহাকে কোনোরূপ জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই চেকপোস্টে গাড়ি থেকে নামতে বলে চার রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে হত্যা করেন পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই লিয়াকত আলী।

এ ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। তদন্তের স্বার্থে গত রবিবার টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত আলীসহ সবাইকে প্রত্যাহার করা হয়। আর হত্যা মামলা হওয়ার পর বুধবার ওসি প্রদীপকেও প্রত্যাহার করা হয়।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যার বিচার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। মামলাটির শুনানিতে সন্তুষ্ট হয়ে তা ‘ট্রিট ফর এফআইআর’ হিসেবে আমলে নিতে টেকনাফ থানাকে আদেশ দেন আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ।

একইসাথে মামলাটি কক্সবাজার র‍্যাব-১৫-কে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মামলা অগ্রগতির প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিতকে ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এ ছাড়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ