কথাবার্তা: 'বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব কেন?'
(last modified Sun, 23 Aug 2020 11:58:29 GMT )
আগস্ট ২৩, ২০২০ ১৭:৫৮ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি মুজাহিদুল ইসলাম। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ২৩ আগস্ট রোববারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রক্রিয়ায় আমাদের দলের অভ্যন্তরে নানা খেলা শুরু হয়েছিল-প্রধানমন্ত্রী-বাংলাদেশ প্রতিদিন
  • দেশকে ক্রমান্ময়ে  ভয়াবহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার-ফখরুল- কালের কণ্ঠ
  • ৪,২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প,অস্বাভাবিক দামে কেনাকাটা-দৈনিক প্রথম আলো
  • প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করবে দুদক-দৈনিক মানবজমিন
  • অস্ত্র মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুরের বিরুদ্ধে আদলতের চার্জ গঠন-দৈনিক সমকাল
  • ট্রাম্প নিষ্ঠুর মিথ্যাবাদী, ওর কোনো নীতি নেই- বড় বোন-দৈনিক যুগান্তর
  • ঢিলেঢালা জীবন যাপনের কারণে বাড়ছে সংক্রমণ- ইত্তেফাক

ভারতের শিরোনাম:    

  • করোনায় আক্রান্ত প্রায় সাড়ে ত্রিশ লাখ -দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
  • হোটেল ব্যবসা খুললেও পর্যটকদের অভাবে পর্যটন শিল্প নড়বড়ে-দৈনিক আজকাল
  • পুলিশ-প্রশাসনকে রাজনীতির খাঁচা মুক্ত করুন’, ফের টুইটে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা ধনকড়ের-সংবাদ প্রতিদিন

পাঠক/শ্রোতা ! এবারে চলুন, বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। 

প্রথমে বিশ্ব করোনার সর্বশেষ খবর:  ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী করোনায় এখন পর্যন্ত বিশ্বে মৃত্যু ৮ লাখ  ৯ ছাড়াল এবং আক্রান্তও ২ কোটি ৩৪ লাখ। মোট সুস্থ্য হয়েছেন দেড় কোটির বেশি মানুষ।

ভারতের করোনা আপডেট খবরে দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ভারতে একদিনে ৬৯ হাজার ২৩৯, এসময় মৃত্যু ৯১২ জন। বাংলাদেশে গত- ২৪ ঘন্টায় করোনায়  ৩৪  জনের মৃত্যু হয়েছে। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

‘জাতির পিতা যাদেরকে বিশ্বাস করতেন তারাই বিশ্বাসঘাতকতা করলো’-দৈনিক মানবজমিনসহ প্রায় সব দৈনিকের এ সম্পর্কিত খবরে লেখা হয়েছে,১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানিরা পারেনি, কিন্তু জাতির পিতার যাদের প্রতি বিশ্বাস ছিল ভালোবাসা ছিল, তারাই জাতির পিতাকে হত্যা করে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। তিনি বলেন, যিনি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, একটি জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছিলেন তাকেই খুনিরা হত্যা করল।

আজ রোববার বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় গণভবন থেকে অংশগ্রহণ (ভার্চুয়াল) করে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়।

‘দেশকে ক্রমান্বয়ে নৈরাজ্যের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে সরকার’-দৈনিক মানবজমিন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আওয়ামী সরকার ফ্যাসিবাদী আচরণের আশ্রয় নিয়ে দেশকে ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার মানুষের ভোটের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে পাত্তা না দিয়ে বাকশালী কায়দায় বিরোধীদল ও মত দমনে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। বিরামহীন গতিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক কাহিনী তৈরীর মাধ্যমে মামলা দিয়ে কারান্তরীণ করা হচ্ছে। ভুয়া, বানোয়াট ও সাজানো মামলায় ঢাকা জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল আহসান রাশেদ এর জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ বর্তমান গণধিকৃত সরকারের ধারাবাহিক অপকর্ম থেকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি গণবিরোধী সরকারের চলমান দমন নীতিরই অংশ।

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব কেন-মতামত নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে অধ্যাপক আসিফ নজরুল লিখেছেন,

অধ্যাপক আসিফ নজরুল

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এক আকস্মিক সফর করে গেছেন বাংলাদেশে। এ সফরের নিশ্চিত কারণ জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখার তাগিদ সেখানে ছিল বলে ধারণা করা যায়।ভারতের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক ক্রমে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। চীন সম্প্রতি তিস্তা নদীবিষয়ক প্রকল্পে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ প্রকল্প তিস্তা নদী নিয়ে ভারত কর্তৃক বাংলাদেশকে বহু বছর ধরে ঝুলিয়ে রাখার একটি বিকল্প হতে পারে। এসব ভারতকে বিচলিত করতে পারে।

তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ আলোচনা করছে কয়েক দশক ধরে। ২০১১ সালে এ চুক্তি হবে বলে জোর আশ্বাস দেওয়া হলেও আজও এ চুক্তি সম্পাদনে রাজি হচ্ছে না ভারত পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কথা বলে। অথচ তিস্তার উজানে পানি ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গকে রাজি করানোর চেষ্টা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার করেছে বলে জানা যায়নি। আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন ভারতের আন্তপ্রাদেশিক বিরোধের বলি হবে, তারও কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

তিস্তা চুক্তি না হলেও গত ১০ থেকে ১২ বছরে ফেনী নদী চুক্তি, ট্রানজিট, নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্যসংক্রান্ত বহু চুক্তি হয়েছে, যাতে মূলত ভারতের স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে। ভারতের কয়েক লাখ নাগরিক এ দেশে চাকরি ও ব্যবসা করার সুযোগও পেয়েছেন।

দুই দেশের সম্পর্কে ভারসাম্যহীনতার এ বিষয় প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার করেন না। বিদায়ী ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বরং সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে দুই দেশের মধ্যে এমন ভালো সম্পর্ক বিশ্বে আর নেই। সীমান্ত হত্যা, নদী চুক্তির অচলাবস্থা প্রসঙ্গগুলোও তিনি এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, মনে হবে না যে এসব কোনো গুরুতর সমস্যা দুই দেশের মধ্যে।

দুই দেশের মধ্যে অসাধারণ ভালো সম্পর্ক থাকলে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ায় তা কিছুটা হলেও বোঝা যায়। কিন্তু অন্তত বাংলাদেশের মানুষের প্রতিক্রিয়ায় এমন কোনো আভাস পাওয়া যায় না কোনো ঘটনায়। যেমন রীভা গাঙ্গুলীর সাক্ষাৎকারের ওপর শতাধিক মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছিল প্রথম আলোর অনলাইনে। সেখানে অন্তত ৯০ শতাংশ মানুষ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক কথায় তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, এটা শুধু ভারতকে একতরফাভাবে দিয়ে যাওয়ার সম্পর্ক।

সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

দুই.-বাংলাদেশে এই ভারতবিরোধী মনোভাব কাম্য নয়, তবে এর পেছনে কিছু বাস্তব কারণ রয়েছে। শুধু সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যার বিষয়টি বিবেচনা করলেই এটি বোঝা যাবে। পৃথিবীর কোনো সীমান্তে এমন একতরফা বেসামরিক নাগরিক হত্যার নজির নেই। ভারত বলে থাকে যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ও অপরাধীদের ঠেকাতে এটি করা হয়। অথচ ভারত এদের গ্রেপ্তার ও বিচার করে এমন বহু হত্যাকাণ্ড এড়াতে পারত।

প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেছেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা আক্রান্ত হয় বলে হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। অথচ ফেলানী হত্যার মতো ঘটনাগুলোয় এবং বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে ঢুকে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটে, সেসব ক্ষেত্রে এটি বলার কোনো সুযোগ নেই। তা ছাড়া অল্প কিছু ঘটনায় ভারতীয় বাহিনী আক্রান্ত যদি হয়েও থাকে, সেখানে শক্তি প্রয়োগে তারা সামঞ্জস্য রক্ষা করেছে বলে মনে হয় না। এমন নজির থাকলে সীমান্তে বড়জোর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটত, অসংখ্য বাংলাদেশির নিহত হওয়ার ঘটনা নয়।

সীমান্তে এসব ঘটনা মানুষের মনে কী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, ভারতীয় হাইকমিশনারের সাক্ষাৎকারের ওপর মন্তব্যে তার অনেকটা আভাস রয়েছে। আমাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা, বছরখানেক আগে সীমান্তে একজন নেপালি নিহত হওয়ার পর দেশটিতে কী ধরনের প্রতিবাদ হয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে এমন প্রতিক্রিয়া হয় না, তা ভাবা ঠিক নয়।

প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশে তাহলে এমন প্রতিবাদ হয় না কেন? আমরা এর উত্তর নেপাল-ভারত সম্পর্কের দিকে তাকালে বুঝতে পারব। নেপালে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে স্বাধীন ভারতের প্রতি অনুগত রাজতন্ত্র ছিল। সে সময়ে নেপাল ও ভারতের মধ্যে যে চুক্তিগুলো হতো, তাতে ভারতের স্বার্থ প্রাধান্য পেত। যেমন গান্ধক ও কোশী নদী চুক্তি। নেপালের পররাষ্ট্রনীতি ও সমরনীতিতেও ভারতের প্রভাব বজায় ছিল। ভারত এভাবেই অভ্যস্ত ছিল এবং সে কারণে কয়েক বছর আগে নেপাল যখন নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে, সেখানে ভারতের ইচ্ছার প্রতিফলন না থাকায় ভারত তা সহজভাবে নেয়নি। ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে নেপালে কার্যত কোনো ভারতবিরোধিতা না থাকলেও ভেতরে-ভেতরে জনগণের মনে যে তা কতটা জোরালো হয়ে উঠেছিল, তা টের পাওয়া যায় সম্প্রতি কে পি শর্মা অলি নেপালের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর। তিনি ভারতবিরোধী প্রকাশ্য ভূমিকা গ্রহণ করার পর নেপালের মানুষের ভারতবিরোধী মনোভাবও প্রকাশ্যে চলে আসে। ভারতের বিভিন্ন বিশ্লেষকের লেখা পড়লে মনে হয়, এটা যে এত দিন সুপ্তভাবে ছিল, তা তাঁরা বুঝতে পারেননি আগে।

ভারত সম্পর্কে বাংলাদেশের বঞ্চনাবোধ কম নয়। এর কিছু কারণ ওপরে বলেছি। এ ছাড়া রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, ট্রানজিট, এনআরসি, এনসিসি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, বাংলাদেশ সম্পর্কে অবজ্ঞামূলক মন্তব্য—এমন বিষয়গুলোও কম গুরুতর নয়। আমার আশঙ্কা, নেপালের মতো বাংলাদেশেও যেকোনো রাজনৈতিক মহল সুবিধামতো সময়ে এমন ভারতবিরোধী মনোভাবকে পুঁজি করতে পারে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের লুকানো ফাটল উন্মোচিত হয়ে উঠতে পারে তখন।

তিন.---ভারত সরকারের বাংলাদেশনীতি দেখলে মনে হয়, এখানে মোটাদাগে দুটি সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, তারা বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাসংগ্রামে ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থনকে শুধু একপক্ষীয়ভাবে বিবেচনা করে থাকে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ভারতকে অনেক সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে ভারত তার দুই পাশে পাকিস্তানকে রেখে কখনোই আজকের অবস্থানে আসতে পারত না। এটি মনে রাখলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক হওয়া উচিত ছিল ভারসাম্যমূলক।

দ্বিতীয়ত, ভারতের অনেকের ধারণা, তিন দিকে ভারতপরিবেষ্টিত বাংলাদেশের ভারতনির্ভর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এটি বড় একটি ভুল। এর প্রমাণ এমনকি গণহত্যার দগদগে স্মৃতি নিয়েও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বঙ্গবন্ধুর আমলে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে ছিল। বাংলাদেশের পক্ষে যে অনায়াসে চীনমুখী হওয়া সম্ভব, সেটি পরে জিয়াউর রহমান তাঁর পুরোটা আমলে দেখিয়েছেন। এখনকার শেখ হাসিনা আমলেও তা কিছুটা হলেও বোঝা যাচ্ছে। এসব আমলে নিলে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সমমর্যাদা ও সমান সুবিধাভিত্তিক একটি প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে তুলত, যা হয়নি।

তারপরও আমি মনে করি, দুই দেশে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আছেন। তাঁরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে ভারত-বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধুত্বই দুই দেশের জন্য সবচেয়ে মঙ্গলজনক। এমন মানুষ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রাধান্য পেলে দুই দেশের জনগণ পর্যায়ে দূরত্বও কমবে।

করোনার ভয়ঙ্কর প্রভাব, অতিদারিদ্র্যের সীমায় নেমে যাবে ১০ কোটি মানুষ: বিশ্বব্যাংক-দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন

এ খবরে লেখা হয়েছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর আমেরিকাসহ ব্রিটেন, ব্রাজিল, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও মেক্সিকোর মতো দেশ। মহামারী রূপ নিয়ে বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে একযোগে তাণ্ডব চালাচ্ছে এই ভাইরাস।

এই মহামারীর কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, এর প্রভাবে প্রায় ১০ কোটি মানুষ ভয়াবহ দারিদ্রসীমার নিচে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্ব ব্যাংক। 

সম্প্রতি এ বিষয়ে সতর্ক করে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপ্যাস জানিয়েছেন, গরিব দেশগুলোকে ঋণের বোঝা থেকে স্বস্তি না দিতে পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন তারা।

মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে লকডাউন শুরু হওয়ার পর প্রাথমিক হিসাবে বিশ্ব ব্যাংক জানিয়েছিল, উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রেগুলোতে কাজ বন্ধ হয়ে পড়ায় দীর্ঘ লড়াইয়ে দারিদ্রসীমা পেরিয়ে আসা ৬ কোটি মানুষ ফের সেই দারিদ্রের অন্ধকারে ফিরে যাবে। 

মহামারীর প্রভাব আগের হিসাবের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে স্বীকার করে নিয়ে রাষ্ট্রগুলোকে ঋণদানের সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ব্যাংক। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট নতুন যে হিসাব দিচ্ছেন, তাতে আগের ৬ কোটির সংখ্যাটি বেড়ে ৭ থেকে ১০ কোটিতে দাঁড়াতে চলেছে।

সংস্থাটির প্রধান ম্যালপ্যাস জানান, স্বাভাবিকভাবে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে আছে বিশ্বের গরীব দেশগুলো। ঋণ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি যাতে তাদের কাছে বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়, সেজন্য অসুবিধায় পড়া দেশগুলোর সঙ্গে নতুন করে আলোচনা দরকার।

জি২০ সংগঠনের সদস্য উন্নত দেশগুলো গরীব দেশগুলোর ঋণ ফেরত আপাতত স্থগিতের কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মনে করেন, পরিস্থিতি এখন যে জায়গায়, তাতে এতেই সমস্যা মিটবে না। গরিব দেশগুলো যাতে তাদের নাগরিকদের জীবনধারণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে আগামী বছরের জুন থেকে বিশ্ব ব্যাংক ১০০টি সবচেয়ে গরিব দেশের জন্য ১৬ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দের প্রকল্প নিয়েছে।

তবে মহামারীর ফলে জনজীবন যত বেশি দিন স্তব্ধ থাকবে, দারিদ্রসীমার নীচে নেমে যাওয়া মানুষের সংখ্যাটাও তত বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু তারপরও বিশ্ব ব্যাংকের চিফ ইকনমিস্ট কারমেন রেনহার্টের সুরে পরিস্থিতিকে এখনই তিনি ‘মহামারিজনিত মন্দা’ বলতে রাজি নন। ম্যালপ্যাস বলেন, “পরিস্থিতিকে মন্দার সূচনা বলা যেতে পারে বড় জোর।” সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, ম্যানিলা স্ট্যান্ডার্ড

 এবার ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

কীভাবে কার্যকর হবে নতুন শিক্ষানীতি? বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষাসচিবদের মতামত চাইল কেন্দ্র-দৈনিক আজকালের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, একক সিদ্ধান্ত নয়, বরং সকলের মতামত নিয়েই কার্যকর হবে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP 2020)। এ মর্মে আজ টুইট করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল। রাজ্যের শিক্ষাসচিবদের কাছে মতামত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষাসচিব। জানতে চাওয়া হয়েছে শিক্ষক, অধ্যাপকদের মতামতও। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি ঘোষণার পর থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বারবার অভিযোগ তুলেছে, আলোচনা না করে এককভাবে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করছে কেন্দ্র। নতুন শিক্ষানীতিতে যে বিবিধ ভাষা শিক্ষা প্রাধান্য পেয়েছে, তাও ভালভাবে গ্রহণ করতে পারেনি অনেকে। দক্ষিণের রাজ্যগুলির স্পষ্ট বক্তব্য, এভাবে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে, যা তারা কিছুতেই মেনে নেবে না। এমনকী এ রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর, শিক্ষামহলের বিশিষ্টজনেরাও নয়া শিক্ষানীতির সমালোচনা করেছেন।

পুলিশ-প্রশাসনকে রাজনীতির খাঁচা মুক্ত করুন’, ফের টুইটে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা ধনকড়ের-সংবাদ প্রতিদিন

বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, ফের টুইটে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে বললেন, “রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসন রাজনীতির খাঁচায় বন্দী। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে মুক্ত করুন।” রাজ্যপালের এই টুইট নিয়েই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। রোববার সকালেই পরপর দুটি টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সেখানেই লেখেন, “রাজ্যে পুলিশ-প্রশাসন রাজনীতির খাঁচায় বন্দী। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে মুক্ত করুন। দুর্ভাগ্যজনক যে, পুলিশ এবং প্রশাসন সবসময় শাসকপক্ষের দরজায়।” আরেকটি টুইটে ধনকড় লেখেন, “গণতন্ত্র এবং আইনের ভূমিকায় এ এক বড় আঘাত। রাজনৈতিক-প্রতিশ্রুত পুলিশ-প্রশাসন মৃত গণতন্ত্রের দৃষ্টান্ত। সরকারী কর্মীরা রাজনৈতিক কর্মী নন।”#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৩

ট্যাগ