করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা: প্রস্তুতির নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর, বিশেষজ্ঞদের অভিমত
(last modified Mon, 21 Sep 2020 13:06:27 GMT )
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০ ১৯:০৬ Asia/Dhaka

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে শুরুর দিকে সরকারের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছিলেন,আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী। এরপর নানা সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দাবি করেছেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্য অনেক দেশের চেয়ে ভাল। দাবি করা হয়েছিল সরকার যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে করোনা পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এ বছর মার্চে মাসের  আট তারিখে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত  হবার পর ১৮ মার্চ  করোনা জনিত  প্রথম  মৃত্যুর কথা সরকারিভাবে স্বীকার করা হয়। ইতোমধ্যে করোনা প্রাদুর্ভাবের ধারাবাহিতকা ছ’মাসের বেশি সময় অতিক্রম করেছে। কবে নাগাদ এ অতিমারি শেষ হবে তা এখনো অনিশ্চিত। ইতোমধ্যে ভাইরাসটির সামাজিক সংক্রমণের মাত্রা ছাড়িয়ে সারা দেশে বিস্তার লাভ করেছে। প্রতি ঘন্টায়  গড়ে একজনের বেশি মানুষ করোনা সংক্রমণে মারা যাচ্ছেন। সরকারি হিসেবে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারে পৌঁছে গেছে। আর সংক্রমণের সরকারি হিসাব হচ্ছে আজ সোমবার পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার ৯২১ জন। তবে বেসরকারি হিসাব যে এর চেয়ে বেশি সেটা সকলেই স্বীকার করছেন। কারণ, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা  বা শনাক্তহীন রোগীর সংখ্যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায়  অন্তর্ভূক্ত করা হয় না।

ওদিকে,শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া জীবন-জীবিকার দোহাই দিয়ে ব্যবসা,শিল্প-কারখানা,গণ-পরিবহন,সরকারি-বেসরকারি অফিস,বাজার-ঘাট সবই খুলে দেয়া হয়েছে। লকডাউন আর  রেড-ইয়োলো জোনের লুকোচুরি খেলারও অবসান হয়েছে।  সামাজিক দূরত্ব বজায় রাথা,মাস্ক ব্যবহার এসব স্বাস্থ্যবিধি পালনে আর তেমন তাগিদ বোধ করছে না জনসাধারণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে যে,আসছে শীতে করোনাভাইরাস মহামারি আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। বিশেষ করে শীতের আগে থেকেই উত্তর গোলার্ধের দেশগুলোয় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বারংবার সতর্কবাণী উপেক্ষিত হয়ে আসছিল। হঠাৎ করেই গত দু’দিন ধরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দেশে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ ও আসন্ন শীতে সংক্রমণ বাড়ার ব্যাপারে  তার আশঙ্কার কথা বলতে শুরু করেছেন। অবশ্য ক’দিন আগে থেকেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বরাদ দিয়ে এরকম কথা বলে আসছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

আজ  মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আগামীকাল মঙ্গলবার আন্ত মন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রী পরিষদের আজকের বৈঠক থেকে সবাইকে মাস্ক পরার জন্য সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এ বিষয়ে যোহর ও মাগরিবের নামাজের সময় মসজিদ থেকেও প্রচারের জন্য বলা হয়েছে। জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমেও সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে ।

বাংলাদেমের করোনা পরিস্থিতি

এর আগে,কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদাহরণ উল্লেখ করে বাংলাদেশেও  পুনরায় সংক্রমণের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। 

জাতীয় কমিটির সদস্যরা জানান,গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী হলেও এ হার এখনও স্বস্তিকর মাত্রায় পৌঁছায়নি।

জাতীয় কমিটি পরামর্শ দিয়েছে,দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ দ্রুত নির্ণয়ের লক্ষ্যে বর্ধিত হারে টেস্ট করা প্রয়োজন। এজন্য করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।

দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে দ্রুত রোডম্যাপ প্রস্তুত করে সেই মোতাবেক পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি কমিটি।

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এক্স-রে ও রক্তের কিছু পরীক্ষার ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় পরামশর্ক কমিটি জানিয়েছে,শহরের হাসপাতালগুলোতে এ ব্যবস্থা থাকলেও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে তা বৃদ্ধি করা দরকার।

পরামর্শক কমিটির মতে, করোনার ভ্যাকসিন উৎপাদনে সারা বিশ্ব সক্রিয় হলেও কার্যকর ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা সময় সাপেক্ষ। জীবিকার স্বার্থে লকডাউন জারি রাখা সম্ভব না হওয়ায় জনসাধারণকে আরও সচেতন এবং স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয় সভায়।

মহামারি করোনা

কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে স্বল্প পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসন্ন দুর্গাপূজা উদযাপন করার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি কমিটি।

সভায় বলা হয়,বিভিন্ন দেশ থেকে যাত্রীরা দেশে আসছেন। এ বিষয়ে ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ বা নিয়ম জারি করা এবং বিদেশ থেকে আগতদের স্ক্রিনিং,কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

করোনা আক্রান্তদের প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এ বিষয়ে করোনাট্রেসার অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত দেন কমিটির সদস্যরা।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন,যেহেতু এখনও এই ভাইরাসের প্রতিরোধে টিকা বাজারে আসেনি। তাই সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাই একমাত্র উপায়।

বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব,রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ড. তাহমিনা শিরিন বলেছেন,'নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিতে হবে। হাত ধোয়া,হাঁচি কাশির সময় শিষ্টাচার রক্ষা করা ইত্যাদি যে বিষয়গুলো এতদিন ধরে বলা হচ্ছে,সেটাই আরও কড়াকড়িভাবে পালন করতে হবে।''

২৪ ঘণ্টায় আরও ৪০ জনের মৃত্যু : আক্রান্ত  ১,৭০৫ জন

এদিকে,দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আরও ১,৭০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আজ সোমবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন আক্রান্তসহ মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার ৯২১ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হলো। এছাড়া দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪,৯৭৯ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২,১৫২ জনসহ দেশে মোট সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৫৮ হাজার ৭১৭ জন।#

পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/২১

 

 

ট্যাগ