পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা: বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ইসলামি চিন্তাবিদসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন মহল। রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ ও ইসলামি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ হত্যাকাণ্ডকে ইরানের বিরুদ্ধে পরিচালিত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী ও তাদের দোসর ইসরাইলের ধারাবাহিক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। একই সাথে এ রকম সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা ও উপযুক্ত আঘাতের ঘোষণাকেও ন্যায়সঙ্গত বলে সমর্থন জানিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রেডিও তেহরানকে বলেছেন, 'ইরানের বিরুদ্ধে যে চক্রান্ত সেটা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানেই হচ্ছে। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং এদের সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে সৌদি আরব। আমরা ইরানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করাকে সমর্থন করি না। আমরা মনে করি দীর্ঘদিন ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে অবরোধ করে রাখা হয়েছে এটাই অন্যায়। কারণ হচ্ছে, আণবিক ইস্যুতে যে চুক্তি আগে করা হয়েছিল সেই চুক্তি থেকে আমেরিকাই সরে গেছে এবং কখনও ইরান সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে নি। আমরা আশা করবো যে, ইরানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ অনতিবিলম্বে বন্ধ হবে। কারণ আমেরিকায় যে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে তাতে আমরা আশা করি যে, দেশটির নতুন সরকার আবার চুক্তিতে ফিরে আসবে এবং ইরানের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা যাতে সংহত হয় সে ব্যাপারে আমেরিকার নতুন সরকার সহায়তা করবে।'
এমন উস্কানিমূলক কাপুরুষোচিত হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেছেন, 'আণবিক শক্তির উন্নয়নে যারা কাজ করছেন তাদেরকে হত্যা অথবা তাদের সামরিক বাহিনীর প্রধানকে হত্যা করাটা উস্কানিমূলক বলে আমার কাছে মনে হয়। আমরা ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা, হত্যাকাণ্ড ও আক্রমণের নিন্দা জানাই।'
অনুরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহবায়ক হামিদুল হক জানান, 'সাম্রাজ্যবাদবিরোধী একটা অবস্থানে ইরান আছে। ইরান মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ইসরাইলের সঙ্গে আপোষ করেননি। এই কারণেই সিআইএ ও মোসাদের গোয়েন্দা চক্রান্তে এসব হামলা হয়েছে এবং সারা দুনিয়ার জনগণের এই হামলার প্রতিবাদ করা উচিত। মার্কিন ও ইসরাইলি যে চক্রান্ত সেটাকে বাইডেন কিভাবে দেখেন তা এখন দেখার বিষয়। কারণ ইসরাইলের ব্যাপারে বাইডেনের নীতি যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে বাইডেনও ট্রাম্পের মত ইসরাইলি নীতির জন্য অভিযুক্ত হবেন।'
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান বলেন, 'ট্রাম্প সম্মতি দিয়েছেন বলেই ইসরাইল এই সিদ্ধান্তটা কার্যকর করেছে। ট্রাম্প কিছুদিন আগে একবার ইরানকে আঘাত করতে চেয়েছিল। তবে তার দেশের অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তা তাকে থামিয়েছেন। কিন্তু এই যে পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার ঘটনা ঘটলো এটা ট্রাম্পের সম্মতিতে ঘটেছে। সুতরাং আমার কথা হচ্ছে যে, ইরানকে অবশ্যই প্রযুক্তিগত দিক থেকে প্রমাণ করতে হবে যে, সে ঠিক একইভাবে পাল্টা জবাব দিতে পারে। ইরান বলছে যে তারা ঠিক সময়ে প্রতিশোধ নেবে তবে এই সময়টুকু যদি প্রলম্বিত হয় তাহলে এই সুযোগে যতই আন্তর্জাতিক সমালোচনা থাকুক না কেন একের পর এক ইসরাইল এভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাবে।'
এদিকে, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল রেডিও তেহরানকে বলেন, 'আমরা মনে করি যে ইরানের জনগণ, ইরানের সাধারণ মানুষ তাদের নিজেদের যোগ্যতা, নিজেদের মেধা, নিজেদের বুদ্ধি, নিজেদের সাহস ও শক্তিমত্তা দিয়ে তাদের দেশকে টিকিয়ে রাখবে এবং ইরান সবকিছুর পরও মুসলিম বিশ্বের একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে টিকে থাকবে। নির্যাতনের মধ্যেও এই দেশটিকে কাবু করা যাচ্ছে না। তাই আমি আশা করি যে, এই সঙ্কট ইরান কাটিয়ে উঠবে, এই কষ্ট তারা কাটিয়ে উঠবে এবং তাদের মেধা-ভিত্তিক অগ্রযাত্রায় তারা এগিয়ে যাবে।'
ইরানের বিরুদ্ধে পরিচালিত এরকম গুপ্ত হত্যা বা সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের অগ্রযাত্রাকে বন্ধ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন আল কুদস কমিটি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল মোস্তফা তারিক হাসান। তিনি আরো বলেছেন, 'একজন ব্যক্তিকে হত্যা করে ইরানের অগ্রযাত্রাকে দমিয়ে রাখা যাবে না। ইরান তার টার্গেটে পৌঁছাবে এবং সারা বিশ্বকে একটা তাক লাগিয়ে দিয়ে এক সময় ইরান জেগে উঠবে ইনশাআল্লাহ।'
ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমেদ আবদুল কাইউম বলেছেন, 'বেশ কিছু মুসলিম দেশের কারণে বিশেষ করে তারা ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তোষামোদ করার কারণে আজ জারজ রাষ্ট্র ইসরাইল হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এই মুহূর্তে যদি মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারত তাহলে কোনো ইসলামবিদ্বেষী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারত না।'
ইতোমধ্যেই ইরানের এ শীর্ষস্থানীয় পারমানবিক বিজ্ঞানীকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নিয়েছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেহকান বলেছেন, 'সন্ত্রাসীদের ওপর বজ্রপাতের মতো আঘাত হানা হবে।'
সম্প্রতি ইরান তার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ইরানের শত্রুদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে । এরই মধ্যে এই হত্যার ঘটনা ঘটল। বেসামরিক খাতে পারমাণবিক জ্বালানি তৈরির জন্য এবং একইসঙ্গে সামরিক কাজে ব্যবহারযোগ্য পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের জন্য সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম একটি জরুরি উপাদান। ইরান সবসময় বলে এসেছে, একমাত্র শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্যই তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করছে।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/রেজওয়ান হোসেন/২৯