রোহিঙ্গাদের শিগগির ভাসানচরে পাঠানোর জোর প্রস্তুতি: মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে নতুন আশ্রয় শিবিরে পাঠানোর সিদ্ধান্তে অটল সরকার। কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারাও সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতা সত্বেও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচরে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। প্রাথমিকভাবে প্রথম দফায় এক হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব শাহ রেজওয়ান হায়াত গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দফায় স্থানান্তরের দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ করা হয় নি। তবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
তিনি জানান, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হবে না। যারা স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী তাদের পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রথম দফায় স্বল্পসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নেওয়া হবে ভাসানচরে। এভাবে দফায় দফায় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হবে।
এদিকে রোহিঙ্গাদর মাঝে ত্রাণ তৎপরতায় যুক্ত ২২ টি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিরা সম্প্রতি ভাসানচর পরিদর্শন করে সেখানে বসবাসের জন্য উপযুক্ত ও নিরাপদ পরিবেশ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
তবে কক্সবাজার কুতুপালং ক্যাম্পের কয়েকজন বাসিন্দা রেডিও তেহরানকে বলেছেন,তারা ভাসান চরে যেতে চান না। তারা মিয়ানমার যাবেন।
এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম-এর সাধারণ সম্পাদক জনাব জমির উদ্দীন রেডিও তেহরানকে জানান,ক্যাস্পে একেবারেই নিরাপত্তাহীনতায়ভুগছে এমন সামান্য কিছু রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে রাজি হলেও বেশিরভাগই সেখানে যেতে আগ্রহী নয়।
ওদিকে, কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ সিকদার রেহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের সরকারি উদ্যোগকে স্বগত জানিয়ে বলেছেন, এ উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে উখিয়া-টেকনাফের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। চাপমুক্ত হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকগোষ্ঠী কেবল নিজেদের সুযোগ-সুবিধার জন্যই দীর্ঘদিন ধরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে বিরোধিতা করে আসছে। তাদের বিরোধীতার কারণে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর বিলম্বিত হচ্ছে। কারণ তারা স্থানীয়দের স্বার্থ দেখছে না।
ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৯ ফুট উঁচু বাঁধ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে ভাসানচরে।
এছাড়াও অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা বর্তমানে ওই দ্বীপটিতে বসবাস করছে। এদের মধ্যে ১৮৬ জন নারী,৯৬ জন পুরুষ এবং ২৪ জন শিশু।
আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল ইউনিয়নের সেক্রেটারি মাস্টার মো. ইলিয়াছ গণমাধ্যমকে বলেন,অনেক রোহিঙ্গা নেতারা ভাসানচর ঘুরে এলেও তারা দ্বীপটি বসবাস উপযোগ কিনা সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না। তারা দ্বীপের বাইরের সৌন্দর্য দেখেছে। সুযোগ-সুবিধা কী কী আছে,তাদের এসব দেখানো হয়েছে। তাই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামত নিয়েই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া উচিত। তবে এই রোহিঙ্গা নেতা বলেন,কেউ স্বেচ্ছায় ওই দ্বীপে যেতে চাইলে আমাদের আপত্তি নেই।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/গাজী আবদুর রশীদ/১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।